মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

সুপ্রিম কোর্টের বিচারক আইন বিল পাস

নিয়োগে আইন করছে সরকার : আইনমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধান বিচারপতির অবসরোত্তর বিশেষ ভাতার বিধান ২০২১ সালের মে মাস থেকে কার্যকর করার বিধান রেখে ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) আইন’ ২০২৩ বিল গতকাল সংসদে পাস হয়েছে। কোনো বিচারক অবসরগ্রহণকালে ১৮ মাসের ছুটি নগদায়নের সুবিধা প্রাপ্য হবেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ সংসদের ২১তম অধিবেশনের গতকালের বৈঠকে বিলটি সংসদের স্থিরকৃত আকারে সংসদে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর আনীত জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও অধিকাংশ সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়ে যায়। তবে সংসদে তিনটি সংশোধনী প্রস্তাব গৃহীত হয়। পরে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি পাস করার প্রস্তাব করেন।

সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এমপি ফখরুল ইমাম ও শামীম হায়দার পাটোয়ারী বিলে একজন সাবেক প্রধান বিচাপতিকে সুবিধা দিতে বিলের ২৪ নম্বর ধারা ‘প্রধান বিচারপতির অবসরোত্তর বিশেষ ভাতার বিধান’টি ২০২১ সালের মে মাস থেকে কার্যকর করার বিধান যুক্ত করার বিষয়ে বারবার আপত্তি উত্থাপন করেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আপত্তিটি আমলে নিয়ে বলেন, কোনো আইনকে বা আইনের ধারাকে ‘রেক্টোসপেক্টিভ ইফেক্ট’ দেওয়ার ক্ষমতা সংসদের রয়েছে। বিলের ২৪ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির জীবদ্দশায় গৃহসহায়ক, গাড়িচালক, দারোয়ান সাচিবিক সহায়তা অফিস-কাম-রেসিডেন্সের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রতি মাসে ৭০ হাজার টাকা অবসরোত্তর বিশেষ প্রাপ্য হইবেন’।

‘সুপ্রিম কোর্ট জাজেস (লিভ, পেনশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) অর্ডিন্যান্স, ১৯৮২ রহিত করে মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলায় বিলটি পুনঃপ্রণয়ন করা হয়েছে। বিলে অবসর গ্রহণকারী বিচারকদের জন্য উৎসবভাতা ও বাংলা নববর্ষ ভাতা প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, কোনো বিচারক পূর্ণ গড় বেতনে ছুটিতে থাকাকালে মাসিক বেতনের সমহারে এবং অর্ধ গড় বেতনের ছুটিতে থাকাকালে মাসিক বেতনের অর্ধেক হারে ছুটিকালীন বেতন পাবেন। পূর্ণ গড় বেতনে প্রদত্ত ছুটি, অর্ধ গড় বেতনে প্রদত্ত ছুটির দ্বিগুণ হিসেবে গণনা করা হবে। তবে অর্ধ গড় বেতনে প্রাপ্য ছুটির হিসাব সংরক্ষিত থাকতে হবে। কোনো বিচারক তার মোট কর্মকালীন ছুটির শর্তানুযায়ী অর্ধ গড় বেতনে ৩৬ মাস ছুটি ভোগ করতে পারবেন। এ ছাড়া পূর্ণ গড় বেতনের ছুটি এককালীন পাঁচ মাস এবং অন্য কোনো ছুটি ১৬ মাসের অধিক হবে না। বিচারকদের পূর্ণ বছরের জন্য অতিরিক্ত পেনশন হিসেবে মাসিক সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৫০০ টাকা প্রদান করা হবে। বিলে অবসরের পর বিচারকরা যে পরিমাণ গ্রস-পেনশন প্রাপ্য হবেন, তার অর্ধেক বাধ্যতামূলকভাবে সমর্পণের বিধান রাখা হয়েছে। কোনো বিচারক স্বেচ্ছায় পদত্যাগ বা অবসর গ্রহণ করলে কোনো ছুটি মঞ্জুর করা হবে না। কোনো বিচারক অনভিপ্রেত কোনো আঘাতের দ্বারা আহত হয়ে কর্মে অক্ষম হলে বিশেষ অক্ষমতা ছুটি প্রাপ্য হবেন। এ ছাড়া কোনো বিচারক অনুমোদিত ছুটি বা অবকাশের অতিরিক্ত অনুপস্থিতিকালের জন্য কোনো বেতন প্রাপ্য হবেন না। ছুটি মঞ্জুরের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সংরক্ষিত।

উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে আইন করছে সরকার : আইনমন্ত্রী : আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্টের বিচারক নিয়োগে আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিছু দিনের মধ্যেই সেটি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে। জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনে গতকাল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিষেশাধিকার) বিল, ২০২২-এর ওপর বিরোধী দলের সদস্যদের জনমত যাচাই-বাছাই কমিটেতে প্রেরণের প্রস্তাবের ওপর জবাব দিতে গিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ কথা বলেন। এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

এর আগে বিলটির ওপর আলোচনার সময় বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য পীর ফজলুর রহমান ও গণফোরামের সদস্য মোকাব্বির খান আদালতের বিচারক নিয়োগ ও ইনডিপেনডেন্ট প্রসিকিউশন নিয়োগ আইন প্রণয়নের বিষয়টি ঝুলে যাওয়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জাতীয় পার্টির সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে আইন করার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি। প্রসিকিউশন নিয়োগেও আইন করার কথা ছিল সেটাও হয়নি। আশা করি আইনমন্ত্রী এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন।’

জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্টের বিচারক নিয়োগের ব্যাপারে সংসদ সদস্যরা আইন করার কথা বলেছেন। উনাদের আশ্বস্ত করতে পারি- এ আইনটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। কিছু দিনের মধ্যে সংসদে আনতে পারব। এ ছাড়া উনারা ইনডিপেনডেন্ট প্রসিকিউশন নিয়োগ আইনের কথা বলেছেন। সেটা নিয়েও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ আইনটিও উনারা এই সংসদ চলাকালে দেখতে পাবেন।’ এর আগে আদালতের মামলা জট কমানোর বিষয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য পীর ফজলুর রহমানের বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার আদালতের মামলা জট কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে এবং জট কমে আসছে।’ আইনমন্ত্রী বলেন, ‘উনারা (বিরোধী দলের সদস্যরা) সঠিক বলেছেন যে, মামলার জট আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার মামলা জট কমানোর পদক্ষেপও নিয়েছে। গর্বের সঙ্গে বলতে পারি- মামলার জট কমছে।’

সর্বশেষ খবর