বুধবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকা সংসদে

দেশে মোট ঋণখেলাপির সংখ্যা ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৬৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল জাতীয় সংসদে দেশের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, দেশে মোট ঋণখেলাপির সংখ্যা ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৬৫ জন। এর মধ্যে শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির নাম ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাছেই মোট ঋণের পরিমাণ ১৯ হাজার ২৮৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এদের খেলাপি ঋণ হচ্ছে ১৬ হাজার ৫৮৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনের গতকালের বৈঠকে টেবিলে উপস্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য দেন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, সিআইবি ডাটাবেইজে সংরক্ষিত (নভেম্বর ২২) দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের

ঋণখেলাপির সংখ্যা ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৬৫ জন। সংসদে দেওয়া মন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির নাম ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সিএলসি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। তাদের ঋণের স্থিতি ১ হাজার ৭৩২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৬৪০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ১ হাজার ৮৫৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৫২৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ১ হাজার ৭৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এদের পুরোটাই খেলাপি ঋণ। রাইজিং স্টিল কোম্পানি লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ১ হাজার ১৪২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণ ৯৯০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স (প্রা.) লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৯৬৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। তাদের পুরোটাই খেলাপি ঋণ। রূপালী কম্পোজিট লেদার ওয়্যার লিমিটেডের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ একই। তাদের খেলাপি ঋণ ৮৭৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ক্রিসেন্ট লেদার্স প্রোডাক্ট লিমিটেডের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮৫৫ কোটি ২২ লাখ টাকা। কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেমস লিমিটেডের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮১১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। সাদ মুসা ফ্যাব্রিকস লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ১ হাজার ১৩১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭৭৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। বিআর স্পিনিং মিলস লিমিটেডের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭২১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এসএ অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ১ হাজার ১৭২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭০৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। মাইশা প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৬৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা। রেডিয়াম কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৭৭০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৬০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। সামান্নাজ সুপার অয়েল লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ১ হাজার ১৩০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৫১ কোটি ৭ লাখ টাকা। মানহা প্রিকাস্ট টেকনোলজি লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৪৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আশিয়ান এডুকেশন লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৬৫৩ কোটি টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৩৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এসএম স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৮৮৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৩০ কোটি ২৬ লাখ টাকা। অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৮৭২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬২৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এহসান স্টিল রি-রোলিং লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৬২৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৯০ কোটি ২৩ লাখ টাকা এবং সিদ্দিকী ট্রেডার্সের ঋণের স্থিতি ৬৭০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৪১ কোটি ২০ লাখ টাকা।

 

আইএমএফ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ঋণ পাওয়া যায়নি : সরকারি দলের হাবিবর রহমানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ঋণ পাওয়া যায়নি। একটি ঋণের বিষয়ে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে। তবে চলতি অর্থবছর বিশ্বব্যাংক থেকে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পাওয়া গেছে। এ ঋণ পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধযোগ্য।

জাপান সরকার ৯২১ দশমিক ৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড় করেছে : সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত জাপান সরকার ৯২১ দশমিক ৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড় করেছে।

পাচার করা অর্থ উদ্ধারের আইনগত কার্যক্রম চলমান রয়েছে : মহিলা এমপি লুৎফুন নেসা খানের লিখিত প্রশ্নের জবাবে আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পাচার করা অর্থ উদ্ধারের আইনগত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ফাইন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) পাচারকারী বা পাচার করা অর্থের বিষয়ে বিদেশি আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ পুলিশের সিআইডি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বিভিন্ন তদন্ত সংস্থায় তা সরবরাহ করে থাকে। বিদেশে (সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ইত্যাদি) ফ্ল্যাট বা বাড়ি ক্রয় অথবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে অর্থ পাচারবিষয়ক কিছু মামলা বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তাধীন রয়েছে। তিনি জানান, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কর্তৃক পাচার-সংশ্লিষ্ট কিছু মামলা চলমান রয়েছে। অর্থমন্ত্রী জানান, অর্থ পাচার রোধ এবং পাচার করা অর্থ বাংলাদেশে ফেরত আনার বিষয়ে সরকার বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে সরকারের সব সংস্থা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। আইনের বিধান অনুসারে বৈধ বা অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ বা সম্পত্তি নিয়মবহির্ভূতভাবে বিদেশে পাচার মানি লন্ডারিং অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিদেশে পাচার করা সম্পদ বাংলাদেশে ফেরত আনার লক্ষ্যে গঠিত টাস্কফোর্স পাচার করা অর্থ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

সঞ্চয়পত্র বিক্রির হার ব্রদ্ধি পেয়েছে : এম আবদুল লতিফের আরেক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির হার তৎপূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। টাকার অঙ্কে ১২ হাজার ৩৮৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ১ লাখ ৩ হাজার ৬৫২ কোটি ৮ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৯১ হাজার ২৬৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

রাজস্ব আদায় কম : জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার লিখিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কর কম আদায় হয়েছে। কভিড-পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী মুদ্রানীতি, ব্যয় সংকোচন নীতি ইত্যাদি কারণে কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায় কিছুটা ব্যর্থ হয়েছে।

রমজান মাসে মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে খাদ্যপণ্য আমদানির সুযোগ : এম আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের উত্তরে ডলার সংকট কমাতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা সংসদে তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী জানান, রমজান মাসে ভোজ্য তেল, ছোলা, ডাল, মটর, পিঁয়াজ, মসলা, চিনি ও খেজুরের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখাসহ পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে এসব পণ্য ৯০ দিনের বিলম্ব মূল্য পরিশোধ ব্যবস্থায় আমদানির সুযোগ প্রদান করা হয়েছে, যা ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এ সময় চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সহজীকরণের লক্ষ্যে চীনা মুদ্রায় লেনদেনের সুযোগ প্রদান করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর