রবিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

আফগানফেরত ফখরুল হাল ধরেন হুজির

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯৮৮ সালে আফগান যুদ্ধে যাওয়ার জন্য পাকিস্তানে গিয়েছিলেন ফখরুল ইসলাম (৫৮)। এরপর তিনি আফগানিস্তানের কান্দাহারে প্রশিক্ষণে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র একে-৪৭, এলএমজি, এসএমজি ও রকেট লাঞ্চার পরিচালনা শেখেন। ওই সময় ফখরুল আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম বিশেষ অভিযান চালিয়ে শুক্রবার নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) ফখরুল ইসলামসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার অন্যরা হলেন সাইফুল ইসলাম (২৪), সুরুজ্জামান (৪৫), হাফেজ মো. আবদুল্লাহ আল মামুন (২৩), দীন ইসলাম (২৫) ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন (৪৬)। তাদের কাছ থেকে জঙ্গি কর্মকান্ডে ব্যবহৃত নয়টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এ-সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান জানান, এরা বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করেছিলেন। ফখরুল ও তার ছেলে সাইফুল ইসলাম অন্য হুজি সদস্যদের নিয়ে একাধিকবার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সংগঠনে রিক্রুটের উদ্দেশ্যে এবং জিহাদি কার্যক্রমের অংশগ্রহণে অনুপ্রাণিত করার জন্য বিভিন্ন মোটা অঙ্কের টাকা অনুদান প্রদান করেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিদেশ থেকে জঙ্গি বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সক্রিয় সদস্য ফখরুল ইসলাম ১৯৮৮ সালে গাজীপুরের টঙ্গী থানার তামিরুল মিল্লাত মাদরাসায় দারোয়ানের চাকরি করতেন। ওই বছরই কাজের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের করাচি শহরে যান তিনি। পাকিস্তানে অবস্থানকালে তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুফতি জাকির হোসেনের সঙ্গে পরিচিত হন। মুফতি জাকির হোসেন পাকিস্তানের করাচি শহরে ইসলামিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল এবং আল-কায়েদার সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। মুফতি জাকির আল-কায়েদা সংগঠনের জিহাদি প্রশিক্ষণের কমান্ডার। মুফতি জাকির জিহাদের দাওয়াত দিলে ফখরুল ইসলাম দাওয়াত গ্রহণ করেন। মুফতি জাকিরের সঙ্গে একাধিকবার পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানের কান্দাহার শহরে দীর্ঘকালীন প্রশিক্ষণে যান ফখরুল। অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, ফখরুল সেখানে বিভিন্ন অস্ত্র প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র একে-৪৭, এলএমজি ও রকেট লাঞ্চার পরিচালনা শেখেন। প্রশিক্ষণের সময় কান্দাহারের সমশেদ পাহাড়ে তিনি নিয়মিত ফায়ারিং অনুশীলন করতেন। অনুশীলনের সময় ফখরুল একে-৪৭ নিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় প্রশিক্ষণ এলাকায় চার ঘণ্টা করে নিরাপত্তামূলক পাহারা ডিউটি করতেন। ওই সময় ফখরুল আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেন। তিনি আফগানিস্তানে বিভিন্ন মেয়াদে জিহাদি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর আবার পাকিস্তানের করাচিতে ফিরে আসেন। করাচি থেকে ১৯৯৫ সালে ইরানের রাজধানী তেহরান যান। প্রায় তিন বছর সেখানে থাকার পর করাচিতে ফিরে এসে তিনি পরে ইসলামাবাদ থেকে ভারতের ভিসা নিয়ে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে চলে আসেন। অতিরিক্ত কমিশনার জানান, সিটিটিসির জঙ্গি কার্যক্রমবিরোধী অপারেশন চলমান থাকায় এবং হুজির মুফতি হান্নানসহ একাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি গ্রেফতার হওয়ায় হরকাতুল জিহাদ সংগঠনটি নেতৃত্বশূন্য হয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে এসে ফখরুল ইসলাম জঙ্গি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও বাংলাদেশে হুজির সদস্য সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। তিনি অত্যাধুনিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনক্রিপটেড অ্যাপস ইরঢ় ব্যবহারের মাধ্যমে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তি এবং বাংলাদেশের অন্য হুজি সদস্যদের সঙ্গে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক বিষয়ে আলোচনা করে মেসেজ আদান-প্রদান করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের জঙ্গি হামলা পরিচালনার বিষয়ে নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনা করেন। সিটিটিসি জানায়, হাফেজ মো. আবদুল্লাহ আল মামুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সিকিউরড এনক্রিপটেড অ্যাপস ব্যবহার করে টেলিগ্রাম গ্রুপ ‘মোরা সত্যের সৈনিক’-এর অ্যাডমিন ‘অস্থায়ী মুসাফির’ ছদ্মনাম ধারণ করে গ্রুপটি পরিচালনা করেন। আর আবদুল্লাহ আল মামুন অ্যাপসে মামুনুল ছদ্মনাম ধারণ করেন। তারা বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তি এবং বাংলাদেশের হুজি সদস্যদের সঙ্গে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক বিষয়ে আলোচনা করে মেসেজ আদান-প্রদান করেন। তারা হুজির একটি এনক্রিপটেড অ্যাপের প্রাইভেট চ্যানেল ‘একটু প্রস্তুতির’ কনটেন্ট হিসেবে ‘একটি বোমা তৈরি করো তোমার মায়ের রান্নার ঘরে’ শীর্ষক ১০ পাতার ডকুমেন্ট এবং একই চ্যানেল থেকে টাইমবোমা বানানোর বাংলা বিবরণীসহ ভিডিও শেয়ার করেন।

সর্বশেষ খবর