সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাষ্ট্রপতি মনোনয়নে চমক

দেশের ২২তম প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু । বললেন, আল্লাহর ইচ্ছায়ই হয়েছে সবকিছু

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রপতি মনোনয়নে চমক

অবশেষে নতুন রাষ্ট্রপতি পাওয়ার অপেক্ষা ফুরাল। চমক দেখিয়ে রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থী বাছাই করলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনসাধারণও মুখিয়ে ছিল নতুন রাষ্ট্রপতির নাম জানার জন্য। বঙ্গভবন পেয়ে গেছে তার পরবর্তী কর্তাকে। দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু।

দেশের মানুষের মনে ব্যাপক কৌতূহল ছিল নতুন রাষ্ট্রপতির নাম নিয়ে। ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ ছিল কে হচ্ছেন মো. আবদুল হামিদের যোগ্য উত্তরসূরি। দুই সপ্তাহ ধরে গণমাধ্যমেও যাদের নাম আলোচনায় এসেছে তারা কেউ পাননি দলীয় সমর্থন। দেশবাসীকে নতুন চমক দিতে কঠোর গোপনীয়তায় মোড়ানো ছিল রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নাম। গতকাল সকালে মাহেন্দ্রক্ষণে জাতির সামনে উন্মোচিত হয় দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতির নাম। বেলা ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে (ইসি) গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনের পক্ষে দুটি মনোনয়নপত্র দাখিল করে। এ সময় মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু উপস্থিত ছিলেন। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে সাংবাদিকদের দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। এ সময় তিনি রাষ্ট্রপতি পদে দলের প্রার্থীর সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত তুলে ধরেন। অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার ছাড়াও পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য।

দলের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সাধারণ সম্পাদক নূর ই আলম চৌধুরী, দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ।  

রাষ্ট্রপতি পদে যে চমক আসছে, সেটা খোদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরই বলেছেন। গতকাল বিকালে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি মনোনয়নের ক্ষেত্রে কঠোর গোপনীয়তা রাখার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘যথাযথ চমক’ দিয়েছেন। কাদের বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ একজন মহামান্য রাষ্ট্রপতির পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছে। আগের জন হামিদ সাহেব (রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ) চমৎকার চালিয়েছেন। নতুন লোক... ১০ মিনিট আগেও কেউ জানতে পারেনি কে হবেন রাষ্ট্রপতি। কতজনকে ভাবছে, আমাকেও বানিয়ে দিয়েছে। আমি বললাম আমি নাই। কে হবেন রাষ্ট্রপতি, বঙ্গবন্ধুকন্যা চমকটা যথাযথই দিয়েছেন।’

দুটি মনোনয়নপত্রেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সমর্থক আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হাছান মাহমুদ প্রস্তাবক হয়েছেন। সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ সদস্যরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য প্রার্থীকে ভোট দেবেন। আর রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থীর সমর্থক ও প্রস্তাবক হতে হয় সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি প্রার্থী দেবে না বলে আগেই জানিয়েছে। আর সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীই নির্বাচিত হবেন। এবারও আওয়ামী লীগ যাকে মনোনীত করবে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে দুটি আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এ দুটি আবেদন সোমবার (আজ) দুপুর ১টা থেকে বাছাই করা হবে। বাছাইয়ের পর যেটি টিকবে নির্বাচনী কর্তা সেটি গণমাধ্যমে জানাবেন। তিনি বলেন, একই ব্যক্তি একই নামে দুটি মনোনয়নপত্রেই প্রস্তাবক (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের) ও সমর্থক (আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হাছান মাহমুদ) হয়েছেন। 

প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলে নির্বাচনের প্রক্রিয়া কী হবে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, আমরা বাছাইয়ের পর বৈধ মনোনয়ন হিসেবে যেটি আসবে, তার নাম ঘোষণা করব। আইনানুগভাবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখে আমরা চূড়ান্ত ঘোষণা করব কে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হলেন। তবে যেহেতু প্রার্থী একজন, তারই দুটি মনোনয়ন ফরম জমা হয়েছে; সুতরাং, সোমবার বাছাইয়ের সময় যদি আবেদন দুটি টিকে যায়, কালই (আজই) চূড়ান্ত হয়ে যাবে।

একক পদপ্রার্থী হওয়ায় ভোটাভুটির প্রয়োজন নেই। সে ক্ষেত্রে কী প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হবে জানতে চাইলে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একটি (রাষ্ট্রপতি) পদে যদি একজন মাত্র পদপ্রার্থী থাকেন এবং সেটা বাছাইয়ে চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয় তাহলে সেটিই চূড়ান্ত ঘোষিত হয়। বাছাইয়ে না টিকলে সেটা আইন অনুযায়ী পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ তিনটি মনোনয়ন জমা দিতে পারবেন। কেননা প্রস্তাবকারী-সমর্থনকারী ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি হতে পারেন। যদি রাষ্ট্রপতি পদে একাধিক ব্যক্তি প্রার্থী হন; সেখানে এক ব্যক্তি দুজনের প্রস্তাবকারী হতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে বাছাইয়ের প্রয়োজন অবশ্যই আছে। যিনি প্রস্তাবকারী ও যিনি সমর্থনকারী তার সব তথ্য-উপাত্ত আইন অনুযায়ী আমাদের দেখতে হবে।

সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পুকে ফুল দিয়ে বরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী : বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া সাবেক দুদক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পুকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে গণভবনে দলীয় মনোনয়ন প্রদানের পর সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সংসদীয় দলের সাধারণ সম্পাদক ও চিফ হুইপ নুর ই আলম চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ও কর্মময় জীবন : বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু আইনজীবী, জেলা ও দায়রা জজ, দুদক কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, তিনি ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরসের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনৈতিক জীবনে ছাত্রলীগ, যুবলীগের রাজনীতির পর সর্বশেষ তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। তিনি ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পুর বাবা শরফুদ্দিন আনছারী ও মা খায়রুন্নেসা। তিনি পাবনা শহরের পূর্বতন গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর রাধানগর মজুমদার একাডেমিতে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাস করার পর পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাস করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনার শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির পথচলায় চুপ্পু দীর্ঘদিন পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রলীগ নেতা হিসেবেই তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তিনি পাবনা জেলা স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন। ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি পাবনা অঞ্চলে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। তিনি পরে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও জেলা যুবলীগের সভাপতি হন।

১৯৭২ সালের ১৬ নভেম্বর পাবনা শহরের দিলালপুর নিবাসী আলী আকতারের জ্যেষ্ঠ কন্যা ড. রেবেকা সুলতানার সঙ্গে সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। রেবেকা সুলতানা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিয়ে যুগ্ম-সচিব হিসেবে ২০০৯ সালে অবসরে যান। ড. রেবেকা বর্তমানে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স প্রোগ্রাম বিভাগের অধ্যাপক এবং ফ্রেন্ডস ফর চিলড্রেন অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। চুপ্‌পু-রেবেকা দম্পতির একমাত্র সন্তান মো. আরশাদ আদনান রনি দেশে ও বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে বেসরকারি প্রাইম ব্যাংকের উচ্চ পদে কর্মরত।

সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু ১৯৯৫ সালে পর পর দুবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন। পেশাগত জীবনে প্রথম দিকে সাংবাদিকতাও করেছেন। তিনি পাবনা প্রেস ক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির জীবন-সদস্য। রাষ্ট্রপতি পদে জমা দেওয়া মনোনয়নপত্রের তথ্য অনুযায়ী, তাঁর হোল্ডিং নম্বর ৮৮/১, শিবরামপুর, সদর, পাবনা। ঢাকায় তিনি থাকেন গুলশানে। 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হলে তার প্রতিবাদ জানান তিনি। সে সময় গ্রেফতার হয়ে বেশ কয়েক বছর জেল খাটেন সাহাবুদ্দিন। এ সময় তিনি ব্যাপক নির্যাতনেরও শিকার হন। জেল থেকে বের হয়ে তিনি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। পাশাপাশি আইন পেশার সঙ্গে যুক্ত হন। দুই বছর আইনজীবী হিসেবে যুক্ত থাকার পর ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডারে তিনি মুন্সেফ (সহকারী জজ) পদে যোগ দেন। কর্মের ধারাবাহিকতায় তিনি যুগ্ম জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং জেলা ও দায়রা জজ পদে দায়িত্ব পালন করে ২০০৬ সালে অবসরে যান। মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিচারিক কাজের পাশাপাশি তিনি (১৯৯৬-২০০১) প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাসহ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের ডেস্ক অফিসার হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর ২০১১ সালের ১৪ মার্চ তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ২০১৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা, হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা তদন্তে পরবর্তী সময়ে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান (সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির পদমর্যাদায়) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন চুপ্পুু। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ ও সুপারিশ প্রণয়নের জন্য গঠিত কমিশনের দাখিলকৃত প্রতিবেদন সরকার গেজেট আকারে প্রকাশ করে।

দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিশ্বব্যাংক উত্থাপিত কথিত পদ্মা সেতুসংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা পালন করেন এবং বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের মিথ্যা ও অন্তঃসারশূন্যতা প্রমাণে সমর্থ হন। তাঁর তৈরি তদন্ত প্রতিবেদন কানাডার আদালতেও সমর্থিত হয়।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তাঁর গঠনতান্ত্রিক ক্ষমতাবলে ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য হিসেবে চুপ্‌পুকে মনোনয়ন দেন।

১৯ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন রেখে গত ২৫ জানুয়ারি এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল, যিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ‘নির্বাচনী কর্তা’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র যাচাই হবে আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৪ ফেব্রুয়ারি। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ ভবনে, দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। তবে ভোট গ্রহণ প্রয়োজন হচ্ছে না।

সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর তাঁর পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল কার্যভার গ্রহণ করেন। সেই অনুযায়ী তাঁর দায়িত্বের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল।

এদিকে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে পদটি শূন্য হলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৬০ দিন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার বিধান রয়েছে। সংবিধানের এসব বিধানের আলোকে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হয়েছে ২৪ জানুয়ারি। আর ভোট গ্রহণ করতে হবে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।

‘প্রাক্তন’ রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকাকালে ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ থেকে মো. আবদুল হামিদ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। ওই বছর ২০ মার্চ রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান মৃত্যুবরণ করলে মো. আবদুল হামিদ সেদিন থেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২২ এপ্রিল তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এরপর মো. আবদুল হামিদ ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয় মেয়াদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ওই বছর ২৪ এপ্রিল ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। সংবিধান অনুযায়ী, দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ায় তাঁর আর এ পদে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই।

সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছে : দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু বলেছেন, ‘সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছা। এখন কোনো প্রতিক্রিয়া নাই। সর্বশক্তিমান আল্লাহর ইচ্ছা।’

গতকাল সকালে রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে নির্বাচন কমিশন-ইসি ভবন থেকে নেমে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল সকাল থেকে নতুন রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল নির্বাচন কমিশন। সকাল সোয়া ৯টার দিকে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচন ভবনে এসে সরাসরি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচনী কর্তার কক্ষে খোঁজ নেন। একে একে নির্বাচন কমিশনাররাও ইসিতে আসতে থাকেন। সোয়া ১০টার দিকে সিইসিও আসেন। নির্বাচন কমিশনাররাও সিইসির সঙ্গে আলাপ করতে আসেন। পরে তিনি নির্বাচনী কর্তার নির্ধারিত কক্ষের নির্দিষ্ট আসনে অপেক্ষা করেন। সচিবসহ অন্য কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বেলা ১১টার আগে জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া নির্বাচনী কর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর কিছুক্ষণ পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল আসে, সঙ্গে ছিলেন রাষ্ট্রপতি প্রার্থী মো. সাহাবুদ্দিন। এ সময় তাঁকে সবাই ঘিরে ধরে এগিয়ে নিয়ে আসেন। স্মিত হাস্যে মো. সাহাবুদ্দিন জানান দিলেন তিনিই প্রার্থী।

 

নির্বাচন ভবনে চার তলায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে প্রার্থীকে নিয়ে বসেন আওয়ামী লীগ নেতারা। মনোনয়নপত্র নেওয়া হয় এ কক্ষে। রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর করেন প্রার্থী। এরই মধ্যে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র নিয়ে নির্বাচনী কর্তার কাছে জমা দেওয়া হয়।

মনোনয়নপত্র জমার সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকসহ প্রতিনিধি দলের সবাই উপস্থিত ছিলেন।

এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে গণমাধ্যমের কাছে নতুন রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর পরিচিতি তুলে ধরেন। পরে প্রার্থীসহ প্রতিনিধি দল বের হয়ে যান। এ সময় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া রাষ্ট্রপতি প্রার্থী সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পুর মন্তব্য জানতে চান সাংবাদিকরা। তবে ওবায়দুল কাদের তাতে বাধা দেন। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি (সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু) প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবেন না। এটা (প্রতিক্রিয়া জানানো) ঠিক না।’ এ সময় তার কথার সঙ্গে সহমত পোষণ করেন ড. হাছান মাহমুদও।

পরে ভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় একের পর এক অনুরোধের মধ্যে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছা। এখন কোনো প্রতিক্রিয়া নাই। সর্বশক্তিমান আল্লাহর ইচ্ছা।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর