সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
রাষ্ট্রপতি পদে সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু

পাবনায় বইছে আনন্দের বন্যা মিষ্টি বিতরণ

পাবনা প্রতিনিধি

দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে পাবনার কৃতী সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু-কে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়ায় পাবনায় আনন্দের বন্যা বইছে। শুভাকাক্সক্ষীরা মিষ্টি বিতরণও করছেন। তিনি মনোনয়ন পাওয়ায় পাবনার রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মহলে বিরাজ করছে আনন্দঘন পরিবেশ। এদিকে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু রাষ্ট্রপতি মনোনীত হয়েছেন- এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বাড়তে থাকে নেতা-কর্মীদের ভিড়। শুরু হয় মিষ্টি মুখ করানো ও আনন্দ উল্লাস। পরে বের করা হয় আনন্দ মিছিল। জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাৎক্ষণিক পথচারী ও রিকশাচালকদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন। বিকালে জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে। এ ছাড়াও গ্রহণ করা হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু ১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্কপাড়ায় (শিবরামপুর) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শরফুদ্দিন আনছারী ও মাতা খায়রুন্নেসা।

তিনি পাবনা শহরের পূর্বতন গান্ধী বালিকা বিদ্যালয় রাধানগর মজুমদার একাডেমিতে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। পরে ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাস করার পর পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাস করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

ছাত্রজীবনে তিনি পাবনা জেলা ছাত্রলীগের তুখোর সংগঠক ছিলেন। তিনি জেলা ছাত্রলীগ ও জেলা যুবলীগের সভাপতিও ছিলেন। একাত্তরে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। রাজনীতির বাইরে তিনি পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে আইন পেশায় যোগ দেন এবং ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এ পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার হিসেবে যোগ দেন এবং ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন। ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব নির্বাচিত হন। পেশাগত জীবনে প্রথম দিকে দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকাতে সাংবাদিকতা করেছেন। তিনি পাবনা প্রেস ক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির জীবন সদস্য। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা হয় এবং এ সময় হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠন যজ্ঞ চালানো হয়। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে এসব ঘটনার তদন্তে যে কমিশন গঠন করা হয় তার প্রধান ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু। ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের অন্যতম কান্ডারি হিসেবে পরিচিত সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু ঢাকার পাবনা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতিও। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু-কে সামরিক সরকার গ্রেফতার করে এবং তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। কারাভোগের পর মুক্ত হলে তিনি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিশ্বব্যাংকের কথিত পদ্মা সেতু সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা পালন করা সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু অভিযোগটিকে মিথ্যা হিসেবে এবং এর অন্তঃসারশূন্যতা প্রমাণে সমর্থ হন। তার প্রেরিত তদন্ত প্রতিবেদন কানাডা কোর্ট কর্তৃক সমর্থিত হয়।

১৯৭২ সালের ১৬ নভেম্বর পাবনা শহরের দিলালপুর নিবাসী আলী আকতারের জ্যেষ্ঠ কন্যা ড. রেবেকা সুলতানার সঙ্গে সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। ড. রেবেকা সুলতানা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিয়ে যুগ্ম সচিব হিসেবে ২০০৯ সালে অবসরে যান। তিনি বর্তমানে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্চ প্রোগ্রাম বিভাগের অধ্যাপক এবং ফ্রেন্ডস ফর চিলড্রেন অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। চুপ্‌পু-রেবেকা দম্পতির একমাত্র সন্তান মোহা. আরশাদ আদনান (রনি) দেশে ও বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে প্রাইম ব্যাংকের উচ্চপদে কর্মরত রয়েছেন।

সর্বশেষ খবর