মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিএনপির তলে তলে প্রার্থী বাছাই

♦ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়া নিয়ে হিসাব-নিকাশ ♦ বর্তমান সরকারের অধীনে যাওয়া নিয়ে দলের ভিতরে দ্বিমুখী অবস্থান

শফিউল আলম দোলন ও শফিকুল ইসলাম সোহাগ

বিএনপির তলে তলে প্রার্থী বাছাই

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে বিএনপির ভিতরে-বাইরে চলছে আলোচনা। চলছে চুলচেরা হিসাব-নিকাশ। বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কি না- এ নিয়ে কোনো ঘোষণা না দিলেও ভিতরে ভিতরে চলছে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ। দলের হাইকমান্ড তারেক রহমানের নির্দেশনায় রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে বিএনপি। এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট নেতাদের অনেক আগেই নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রতিটি আসনে একাধিক নেতা কাজ করছেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপির পার্লামেন্টারি বোর্ড। এ নিয়ে কারও মাঝে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব বা ওজর-আপত্তি চলবে না। বিগত নির্বাচনের মতো তাড়াহুড়ো করে প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে যাতে এলোমেলো পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়- সেজন্য এবার আগে থেকেই পরিকল্পিতভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। দলের নীতিনির্ধারণী মহলের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে দলের শীর্ষ নেতাদের কেউ স্বনামে নির্বাচনী প্রস্তুতির ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি শতভাগ নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচন করেই কয়েকবার সরকার গঠন করেছে। নির্বাচনের বিকল্প কিছু বিএনপি চিন্তা করে না। তবে তা হতে হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। এ জন্যই আমরা ১০ দফা দাবি আদায়ে রাজপথে নেমেছি। কালকে যদি নিরপেক্ষ সরকার এসে দায়িত্ব গ্রহণ করে- তাদের অধীনে নির্বাচনে যেতে পরদিনই প্রস্তুতি নেবে বিএনপি। তবে এই অবৈধ সরকারের অধীনে বিএনপি কখনই কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির অপর একজন সদস্য জানান, নির্বাচন যখনই হোক না কেন, বিএনপির প্রার্থী বাছাইয়ে এবার তেমন বেগ পেতে হবে না। কারণ, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ৩০০ আসনে সহস্রাধিক প্রার্থীর নামের তালিকা আগে থেকেই আছে। এখান থেকেই আমলনামা ও এলাকার অবস্থান দেখে সংযোজন-বিয়োজন করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার পর বিএনপি যে কোনো মুহূর্তে নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত। দশ দফা দাবিতে আন্দোলন চলছে। এই দাবি পূরণ হওয়ার পর বিএনপি অবশ্যই নির্বাচনে যাবে। তবে এ বিষয়টা অত্যন্ত পরিষ্কার যে, বর্তমান সরকারের অধীনে যেমন বিএনপি নির্বাচনে যাবে না, তেমনি এ সরকারের অধীনে এদেশের জনগণও আর কোনো নির্বাচন হতে দেবে না।

দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সামগ্রিকভাবে বিএনপির নেতৃত্বে আন্দোলন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে- তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচনের প্রশ্নই ওঠে না। দেশে যে গভীর রাজনৈতিক সংকট চলছে- সরকারের পক্ষ থেকেও তা প্রকারান্তরে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হবে- এ আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যাতে করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসলেও তিনি পরিস্থিতি তাদের (আওয়ামী লীগের) অনুকূলে রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করতে পারেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজনীতিতে একটা সুন্দর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করবে এটাই সবার প্রত্যাশা। আর নির্বাচন হবে একটা অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু পরিবেশে। যেখানে মানুষ ভোট দিয়ে তার পছন্দমতো প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন এবং গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হবে এটাই সবাই আশা করে।

দলের অপর ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু বলেন, আমাদের আন্দোলন-সংগ্রামসহ যত সাংগঠনিক কার্যক্রম আছে- তার সবকিছুই তো একটা অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য। কাজেই এর সবই হচ্ছে নির্বাচনের প্রস্তুতিরই অংশ। ইতোমধ্যে সারা দেশে আমরা ১০টি বিভাগীয় গণসমাবেশ করেছি। লাখ লাখ লোক হয়েছে। মানুষ উজ্জীবিত। নির্বাচনের জন্য তারা প্রস্তুত। তবে এই সরকারের অধীনে নয়। দেশবাসীর ইচ্ছে অনুযায়ী- নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনেই হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

এদিকে গত বছর ২২ আগস্ট থেকেই দেশের প্রতিটি এলাকার বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তাদের নিজ নিজ এলাকায় তৎপরতা শুরু করেছেন। হাইকমান্ডের নির্দেশে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সব সংসদীয় আসনের নেতাদের মাঠে নামার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। কারাগারে থাকা নেতা-কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। পরে আমলনামা হিসেবে এগুলোর ফলোআপ রিপোর্টও সংগ্রহ করতে বলেছেন তিনি। এসব কর্মকাণ্ডকেও নির্বাচনী তৎপরতার অংশ হিসেবেই বিবেচনা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

অন্যদিকে বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার নেতাদের নির্বাচনের আগে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। সক্রিয় করা হবে আন্দোলন ও ভোটের মাঠে। নির্বাচনের আগে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাদের সবাইকেই সাধারণ ক্ষমাও করতে পারেন। দলের কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মংলা) আসনের প্রার্থী কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় আমরা আন্দোলনে আছি। কঠোর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা আদায় করেই আমরা নির্বাচনে যাব ইনশাআল্লাহ।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, আমরা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে বৃহত্তর আন্দোলনে আছি। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় হলে নির্বাচনে প্রস্তুতি নিতে বিএনপির সময় লাগবে মাত্র এক সপ্তাহ।

সর্বশেষ খবর