বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
হাই কোর্টের মন্তব্য

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বার আইনি ইতিহাসে কালো দাগ সৃষ্টি করেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবী সমিতি (বার) বাংলাদেশের আইনি ইতিহাসে কালো দাগ সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন হাই কোর্ট। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল ক্ষোভ প্রকাশ করে এই মন্তব্য করেন।

গত ৫ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে এজলাসে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের ঘটনা ঘটে। পরে বিষয়টি হাই কোর্টের নজরে এলে এই ঘটনায় ব্যাখ্যা দিতে ব্রাক্ষণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর আহমেদ ভূঞা, সম্পাদক (প্রশাসন) মো. আক্কাস আলী ও জুবায়ের ইসলামকে তলব করেন হাই কোর্ট। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দায়ে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়। পরে ১৭ জানুয়ারি এই তিন আইনজীবী আদালতে হাজির হন। তখন তাদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকিরসহ সিনিয়র আইনজীবীরা হাই কোর্টে হাজির হয়ে বিরোধ মীমাংসা এবং রুলের জবাব দিতে এক মাস সময় চান। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ওই তিন আইনজীবী ফের আদালতে হাজিরা দেন। শুনানির শুরুতেই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ফকির হাই কোর্টকে বলেন, মাই লর্ড, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিষয়টির পিসফুল ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে। আজ (মঙ্গলবার) থেকে সব কোর্ট চলছে। আমাদের আরও কিছু কাজ আছে। সব কিছুর সমাধান হবে। আমাদের ১ মাস সময় দিন। এরপর হাই কোর্ট বলেন, কিছুই (ডেভেলপমেন্ট) হয়নি। হাই কোর্টে এটার তারিখের আগে ওখানে একটু নাড়াচাড়া করেন। আমরা বুঝি। দিন যাচ্ছে আর টাইম নষ্ট করছেন। এটার পরিণতি ভোগ করতে হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বার (আইনজীবী সমিতি) বাংলাদেশের লিগ্যাল ইতিহাসে কালো দাগ সৃষ্টি করেছে, সমস্ত আইনজীবীকে কলঙ্কিত করেছে।

বিচারিক কাজে অংশ নিলেন আইনজীবীরা : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সব আদালতের বিচারিক কাজে অংশ নিয়েছেন আইনজীবীরা। গতকাল সকাল থেকে প্রাণ ফিরেছে আদালত প্রাঙ্গণে। নারী ও শিশু-১ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ফারুক ছুটিতে চলে যাওয়ায় বর্জনের আওতায় থাকা ওই আদালতের কার্যক্রমেও অংশ নিয়েছেন আইনজীবীরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২২টি আদালতের বিচারিক কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। জেলা জজ আদালত ও চিফ জুডিশিয়ালও চিরচেনা রূপে ফিরেছে। সকাল থেকেই বিচারাঙ্গনে বিচারপ্রার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান চৌধুরী কানন জানান, আদালতের অচলাবস্থা নিরসনে রবিবার ১২ ফেব্রুয়ারি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, স্থানীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, আইন সচিব গোলাম সারোয়ারসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আইনজীবীদের বৈঠক হয়। সেখানে তাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার ১৩ ফেব্রুয়ারি বিশেষ সাধারণ সভা করে নারী ও শিশু-১ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ফারুক ছুটিতে না যাওয়া পর্যন্ত ওই আদালত ছাড়া সব আদালতের ওপর থেকে বর্জন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। নারী ও শিশু-১ আদালতের বিচারক ছুটিতে চলে যাওয়ায় সে আদালতের দায়িত্ব পালন করছেন নারী ও শিশু-৩ আদালতের বিচারক মো. রবিউল আলম। আইনজীবীরা নারী ও শিশু-৩ আদালতেই নারী ও শিশু-১ আদালতের বিচারিক কাজে অংশ নেওয়া শুরু করেছেন।

গত ১ ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ আইনজীবীরা মামলা দাখিল করতে গেলে বিচারক মোহাম্মদ ফারুক মামলা না নিয়ে আইনজীবীদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ করেন আইনজীবীরা। এ ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর সমিতির সভা করে আইনজীবীরা ১ জানুয়ারি থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন। এদিকে বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগে ৪ জানুয়ারি কর্মবিরতি পালন করেন আদালতের কর্মচারীরা। এ অবস্থায় জেলা জজ শারমিন নিগার, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুক ও আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলামের অপসারণ চেয়ে ৫ জানুয়ারি থেকে পুরো আদালত বর্জনের লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন আইনজীবীরা। একপর্যায়ে আইনমন্ত্রীর আশ্বাসে জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর আদালত বর্জন অব্যাহত রেখে বাকি সব আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেন আইনজীবীরা। তবে ৭ ফ্রেব্রুয়ারি ষষ্ঠ দফায় বাড়ানো কর্মসূচির শেষ দিনেও তাদের অপসারণ না করায় আবারো সব আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন আইনজীবীরা। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব আদালত বর্জন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হলেও সৃষ্ট পরিস্থিতিতে নাজির মোমিনুল ইসলামের চাঁদপুরে বদলি ও নারী ও শিশু -১ আদালতের ছুটিতে যাওয়ার পর ১৪ ফেব্রুয়ারি (গতকাল) থেকে সব আদালতের বিচারিক কাজে অংশ নিতে শুরু করেছেন আইনজীবীরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর