শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিশ্বাসঘাতক ক্যারিয়ার

♦ বিয়ে ভেঙে গেল দুই তরুণীর ♦ প্রতারণার টাকায় বাড়ি

সাখাওয়াত কাওসার

বিশ্বাসঘাতক ক্যারিয়ার

উদ্ধার করা টাকা ও স্বর্ণালংকার -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দুবাইফেরত এক ক্যারিয়ারের (বাহক) কাছে দুই বোনের বিয়ের জন্য স্বর্ণালঙ্কারসহ ৩০ লাখ টাকার যৌতুকের সামগ্রী কিনে দিয়েছিলেন প্রবাসী দুই চাচাতো ভাই। নতুন জীবনের স্বপ্নে বিভোর ছিলেন তাদের অনার্সপড়ুয়া দুই বোন। নিজেরা ছুটিতে দেশে আসতে পারবেন না তাই দ্বারস্থ হয়েছিলেন ক্যারিয়ারের। জিনিসপত্র বয়ে আনার জন্য তাকে প্রয়োজনীয় শুল্ক ও উপহার হিসেবে বিমানের টিকিটও কিনে দিয়েছিলেন। তবে সেই ক্যারিয়ারের বিশ্বাসঘাতকতায় লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সবকিছু। গয়না ও যৌতুকসামগ্রীর অভাবে এরই মধ্যে ভেঙে গেছে দুই বোনের বিয়ে। নানামুখী প্রশ্নবাণে জর্জরিত হচ্ছেন দুই পরিবারের সদস্যরা। এদিকে হৃদয়বিদারক এ ঘটনায় মন গলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিবি) কর্মকর্তাদের। মাস দুয়েক আত্মগোপনে থাকা শাওন আহমেদ নামের সেই ক্যারিয়ারকে অবশেষে বুধবার বগুড়া থেকে গ্রেফতার করেছে ডিবির লালবাগ বিভাগ। আদালতের নির্দেশে এরই মধ্যে তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে তারা।

ডিবি পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, মাদারীপুরের শিবচরের বাসিন্দা মজিবুর রহমান শিশুর ছেলে আরিফ ও ভাতিজা তৈয়ব দীর্ঘদিন ধরে দুবাই থাকেন। আরিফ ও তৈয়ব তাদের দুই বোনের বিয়ের জন্য দুটি সোনার বারসহ ২৮ ভরি গয়না, একটি ল্যাপটপ, একটি সর্বশেষ মডেলের আইফোন, একটি দামি স্যামসাং ব্র্যান্ডের ফোনসহ প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র কিনেছিলেন। নিজেরা ছুটি না পাওয়ায় তারা শরণাপন্ন হন আরেক প্রবাসী শাওন আহমেদের।

ডিবির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ‘ঘটানাটি অত্যন্ত হদয়স্পর্শী। দুবাই থেকে পাঠানো স্বর্ণালঙ্কারসহ বিয়ের সামগ্রী হাতছাড়া হওয়ায় দুই চাচাতো বোনের জীবনে নেমে আসে চরম হতাশা। বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পর থেকেই আমরা আত্মগোপনে থাকা শাওনকে গ্রেফতার এবং আত্মসাৎ করা কিছু অলঙ্কার উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। বাকি অলঙ্কার ও অন্য জিনিসপত্র উদ্ধারে চেষ্টা চলছে।’ একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের শ্রীপুরের বাসিন্দা শাওন একসময় অঙ্গীভূত আনসার সদস্য হিসেবে কাজ করতেন। মাস কয়েক আগে তিনি দুবাই যান। দুবাইয়ে কাজ না পাওয়ায় তিনি দেশে চলে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বিষয়টি জানতে পেরে আরিফ ও তৈয়ব তার কাছে সব জিনিসপত্র দিয়ে দেন। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেওয়ার সময় একটি ভিডিও রেকর্ডও করে রাখেন তারা। আর উপহার হিসেবে শাওনকে দুবাই থেকে ঢাকায় আসার একটি এয়ার টিকিটও কিনে দেন। বিমানবন্দরে এসে প্রবাসীর স্বজনদের কাছে সেসব জিনিসপত্র দেওয়ার কথা। ১২ জানুয়ারি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে নামেন শাওন। কিন্তু বিমান থেকে নেমেই চম্পট দেন তিনি। আনসারে কাজ করার সুবাদে বহির্গমনের পথ দিয়ে বের না হয়ে স্টাফ গেট দিয়ে বের হয়ে যান শাওন। চলে যান আত্মগোপনে। পরে ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে বিমানবন্দর থানায় শাওনের নামে একটি মামলা করেন আরিফের বাবা মজিবুর রহমান শিশু।

গ্রেফতারের পর তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের শাওন জানিয়েছেন, বগুড়া নিউমার্কেট এলাকার গলাপট্টিতে নজরুল ইসলাম টুটন নামে এক ব্যক্তির কাছে সোনার বার তিনি বিক্রি করেন। মোবাইল দুটি বিক্রি করেন সুনামগঞ্জের এক ব্যক্তির কাছে। আত্মসাৎ করা অর্থ দিয়ে শ্বশুরবাড়িতে একতলা একটি বাড়ির কাজও ধরেছিলেন শাওন। গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোস্তফা কামাল জানান, শাওন দেশে ফিরেই সবার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে শ্বশুরবাড়িতে পালিয়ে ছিলেন। এমনকি তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। পরে প্রযুক্তিসহ নানা কৌশলে তথ্য পেয়ে বগুড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। শাওনের বিক্রি করা মোবাইল ফোন দুটি, অল্প কিছু অলঙ্কার ও সোনার বার বিক্রির ৪ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি সোনার বার যার কাছে বিক্রি করা হয়েছে সেই জুয়েলারি দোকানদারকে গ্রেফতারের জন্যও অভিযান চালানো হচ্ছে। আদালতের মাধ্যমে এসব সামগ্রী প্রবাসী ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর