রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
কোটালীপাড়ায় জনসভায় শেখ হাসিনা

জঙ্গি-দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলবে

♦ আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে কোনো তুলনা হতে পারে না ♦ সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল জিয়া ♦ বাংলাদেশকে স্মার্ট হিসেবে গড়ে তুলতে চাই ♦ গোপালগঞ্জবাসীকে একগুচ্ছ উন্নয়ন উপহার

আমিনুল হাসান শাহীন, গোপালগঞ্জ

জঙ্গি-দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলবে

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় গতকাল বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা -পিআইডি

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ ব্যাপারে সবাই সতর্ক থাকবেন। আপনাদের সন্তানরা যেন মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়।

গতকাল দুপুরে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গারহাট তালিমপুর-তেলিহাটি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দীর্ঘ চার বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে জনসভায় অংশ নেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার আগমন ঘিরে কোটালীপাড়াসহ পুরো জেলায় ছিল উৎসবের আমেজ। দলীয় সভানেত্রীকে একনজর দেখতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত হন। কয়েক দিন ধরে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা জনসভা সফল করতে কাজ করেন। কোটালীপাড়া আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভা বিকালে হলেও সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে হাজির হন। এতে দুপুরের আগেই জনসভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। পুরো এলাকা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। নৌকার আদলে বানানো মঞ্চে উঠেই উপস্থিত জনতাকে দুই হাত তুলে অভিবাদন জানান গোপালগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হাসিনা। উপস্থিত লাখো মানুষও তাদের দুই হাত নেড়ে প্রিয় নেত্রীকে স্বাগত জানান। এর আগে সমাবেশস্থলে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে ৩২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং পাঁচটি প্রকল্পের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। জনসভায় ভাষণে পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অপবাদ প্রসঙ্গে জনতার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দুর্নীতির অপবাদকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। কারণ দুর্নীতি করে নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি। জনগণের ভাগ্য গড়তে এসেছি। তাই কোনো মিথ্যা অপবাদ নিতে আমি রাজি নই। বিশ্বব্যাংক এ অপবাদ দিতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা সফল হয়নি। বাংলাদেশের মানুষ আত্মমর্যাদা নিয়েই চলে। আমাদের কেউ অপবাদ দিলে তা মানব না। আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি বলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছি। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আপনাদের সন্তানরা যেন কোনো মাদক বা জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয় এ ব্যাপারে আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণের সুফলের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, আগে ঢাকা থেকে স্টিমারে বা লঞ্চে গোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়া আসতে ২২ ঘণ্টা, ২৪ ঘণ্টা লাগত। এখন মাত্র আড়াই ঘণ্টার মধ্যে আমরা এখানে পৌঁছে গেছি। কোটালীপাড়াবাসীকে আগে শুধু পানি, খালবিল, বাঁশের সাঁকো পার হতে হতো। আজকে এখানে রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ করে এ অঞ্চলের মানুষের আর্থিক সুবিধা করে দিয়েছি। বিশ্বমন্দার কারণে আবারও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সব অনাবাদি জমি চাষের আওতায় এনে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কথা দিয়েছিলাম ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেব, সব ঘর আলোকিত করেছি। তবে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। বিশ্বব্যাপী সংকট চলছে। আমরা বিদ্যুতে অর্ধেকের বেশি ভর্তুকি দিচ্ছি। কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শাজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, স্থানীয় নেতাদের মধ্যে খন্দকার মঞ্জুরুল হক লাবলু, গোপালগঞ্জ পৌর মেয়র শেখ রকিব হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান, সাধারণ সম্পাদক জি এম সাহাবুদ্দিন আজম, প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন প্রতিনিধি শহীদউল্লাহ খন্দকার প্রমুখ। সভামঞ্চে শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল এমপিসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে কোনো তুলনা হতে পারে না : আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, কেউ কেউ আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির তুলনা করেন। কেউ কেউ বলেন বড় দুই দল। যারা দুই বড় দল বলেন, তারা ভুল করেন। আওয়ামী লীগ মানুষের সংগঠন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হয়। আর বিএনপির সময়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের সৃষ্টি হয়। দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। তারা মানুষকে কিছু দেয়নি। মানুষের অর্থ লুটপাট করে বিদেশে নিয়ে গেছে। যারা বিএনপিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তুলনা করতে চান তাদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩০০ সিটের মধ্যে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট পেয়েছিল মাত্র ৩০টি সিট। বাকি সিট আওয়ামী লীগ জোট। তাহলে দুই দল একপর্যায়ের হয় কীভাবে?

অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল জিয়া : বিএনপি নিজেরাই নিজেদের দলের গঠনতন্ত্র, নিয়ম ও আইন মানে না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়া সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছে। উচ্চ আদালতের রায় আছে। ক্ষমতায় বসে থেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দল তৈরি করেছিল সেই দল হচ্ছে বিএনপি। এরা মানুষের কল্যাণও চায় না, মঙ্গলও চায় না। এরা মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়ায়, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। তিনি আরও বলেন, বিএনপির গঠনতন্ত্রেই আছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি দলের নেতা হতে পারে না। বিএনপি একজন নেতাও কি পায় না যে অন্তত সাজাপ্রাপ্ত আসামি নন, খালেদা জিয়া এবং তার ছেলে (তারেক রহমান) দুজনই সাজাপ্রাপ্ত আসামি। খালেদা জিয়ার ছেলে, যাকে নেতা বানিয়েছে সে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। তারা এমন একটি রাজনৈতিক দল, যারা নিজেরা নিজেদের গঠনতন্ত্রও মানে না।

কোটালীপাড়া টুঙ্গিপাড়াবাসী আমার পাশে আছে : কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়াবাসীকে উদ্দেশ করে স্থানীয় এমপি শেখ হাসিনা বলেন, কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়াবাসী সবসময় আমার পাশে থাকেন বলে আমি নিশ্চিন্ত মনে কাজ করতে পারি। সুসময়-দুঃসময়ে সবসময় আমি কাছে পাই। এটাই আমার সব থেকে বড় শক্তি। শেখ হাসিনা তাঁর নির্বাচনী এলাকাসহ সারা দেশের উন্নয়নের তথ্য তুলে ধরে বলেন, এসব বিশেষ উপহার (উন্নয়ন প্রকল্প) আজ আপনাদের দিয়ে যাচ্ছি। এতগুলো ব্রিজ এর আগেও করেছি। কোটালীপাড়াবাসীকে আগে শুধু পানি-খাল-বিল, বাঁশের সাঁকো পার হতে হতো। আজ রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ, স্কুল-কলেজ করে এ অঞ্চলের মানুষের সুবিধা করে দিয়েছি। এক দিনে শত সড়ক উদ্বোধন করেছি। এক দিনে শত সেতু ?উদ্বোধন করেছি। তিনি বলেন, আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। এখন বিশ্ববাজারে তেল-গ্যাসসহ সবকিছুর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাই সতর্ক হবেন। যত কম ব্যবহার করা যায়। লন্ডনে বিদ্যুতের দাম দেড় শ ভাগ বাড়িয়েছে। আমরা কিন্তু যে টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করি তার অর্ধেক মূল্যে মানুষকে দিচ্ছি। আর সেচকাজের জন্য আমরা ২০ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছি।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই : শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কথা তুলে শেখ হাসিনা বলেন, মহামারির কারণে অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। শত সমস্যার মধ্যেও আমরা দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রেখে যাচ্ছি।

গোপালগঞ্জবাসীকে একগুচ্ছ উন্নয়ন উপহার : এর আগে এদিন সকালে গণভবন থেকে সড়কপথে গোপালগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে গোপালগঞ্জবাসীর জন্য ৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে ৪৩টি নবনির্মিত উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও পাঁচটি উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গারহাট তালিমপুর-তেলিহাটি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।

সর্বশেষ খবর