শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

গ্রিসসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ডিপোর্ট ৬০ বাংলাদেশিকে

গ্রিস প্রতিনিধি

গ্রিসসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ৬০ জন অনিয়মিত বাংলাদেশিকে ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। বুধবার এসব অভিবাসীকে নিয়ে একটি বিশেষ বিমান ঢাকায় অবতরণ করেছে। গ্রিসে বাংলাদেশের দূতাবাস জানিয়েছে, এসব ব্যক্তির মধ্যে ২০ জনকে গ্রিস থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বাকিরা অন্য দেশে ছিলেন।

এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইনফোমাইগ্রেন্টস। ইনফোমাইগ্রেন্টসের সাংবাদিক মোহাম্মদ আরিফ উল্লাহ জানান, গ্রিস, স্পেন, মাল্টা, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশে থাকা অন্তত ৬০ জন অনিয়মিত বাংলাদেশি অভিবাসী নিয়ে একটি চার্টার বিমানে বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করেছে। ‘ডিপোর্ট’ হওয়া অভিবাসীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। এর আগে স্বরাষ্ট্রবিষয়ক ইইউ কমিশনার ইলভা জোহানসনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছিল, বুধবার ৬৮ জন অনিয়মিত অভিবাসী নিয়ে ফ্রন্টেক্সের একটি বিমান ঢাকায় অবতরণের কথা রয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাস গ্রিসের মিনিস্টার মোহাম্মদ খালেদ বলেন, ইইউর জয়েন্ট রিটার্ন অপারেশনের আওতায় সংশ্লিষ্ট অনিয়মিত অভিবাসীদের ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ফেরত পাঠানো অভিবাসীদের মধ্যে ২০ জনকে গ্রিস থেকে পাঠানো হয়েছে বলে বুধবার সকালে আমাদের নিশ্চিত করেছে গ্রিক কর্তৃপক্ষ। তাদের সবার কাছেই নিজেদের পাসপোর্ট ছিল। ফলে তাদের ফেরত পাঠাতে দূতাবাসের পূর্বানুমতির প্রয়োজন পড়েনি।’ ঢাকায় ফেরত যাওয়া অভিবাসীদের মধ্যে সাড়ে পাঁচ বছর ধরে গ্রিসে ছিলেন বাংলাদেশি অভিবাসী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি ৮ মাসেরও বেশি সময় ধরে এথেন্সের মেনিদি ক্যাম্পে আটক ছিলাম। আমাদের কিছু না বলেই এয়ারপোর্টে নিয়ে আসা হয়। মঙ্গলবার বেলা ৩টায় মোট ২৬ জন বাংলাদেশিকে নিয়ে বিমানটি এথেন্স থেকে যাত্রা করে। পরে সেখান থেকে সাইপ্রাসে যাত্রাবিরতি দেওয়া হয়।’ তাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘ট্রানজিট অবস্থায় সাইপ্রাসে ইতালি, চেকপ্রজাতন্ত্র, মাল্টা, স্পেন, সুইডেন, রোমানিয়াসহ অন্যান্য ইইউ দেশ থেকে আসা বাংলাদেশিরা আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়।

আমরা মোট ৬৩ জন ছিলাম ফ্লাইটে। একজন অভিবাসীর সঙ্গে দুজন পুলিশ চার্টার ফ্লাইটে উপস্থিত ছিল। তাদের সক্রিয় উপস্থিতিতে আমাদের ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়। পুলিশের উপস্থিতির কারণে আমরা একে অপরের সঙ্গে ভালো করে কথা বলতেও পারিনি।’ ছয় বছর ধরে গ্রিসে ছিলেন বাংলাদেশি অভিবাসী মোহাম্মদ ফজলুর রহমান। তিনি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘গাড়িতে তোলার পাঁচ মিনিটের মধ্যে সবার মোবাইল ফোন নিয়ে নেওয়া হলে আইনজীবী আমাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারেননি। ঢাকায় আসার পর আমাদের সবার ফোন ফেরত দেওয়া হয়।’ অন্যদিকে এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাস ২০ জনের সংখ্যা জানালেও অভিবাসীরা দাবি করেছেন মোট ২৬ জন বাংলাদেশিকে গ্রিস থেকে ‘ডিপোর্ট’ করা হয়েছে। এসব অভিবাসীর মধ্যে চারজন ইতোমধ্যে বাংলাদেশ-গ্রিস বৈধতা চুক্তির আওতায় বৈধতার জন্য আবেদন প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে ছিলেন। ‘ডিপোর্ট’ হওয়া তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মেনেদি ক্যাম্পে থাকা অবস্থায় নতুন নিয়মিত বৈধতার জন্য আবেদন করেছিলাম। আমার আইনজীবী ক্যাম্প থেকে বের হওয়ার জন্য আইনি বিষয়গুলো দেখছিলেন। কিন্তু আমাদের কোনো তথ্য না দিয়ে বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমাদের আইনজীবী শত চেষ্টা করেও আমার অবস্থান শনাক্ত করতে পারেননি। কারণ গ্রিক কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্য প্রদান করেনি।’ মোহাম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমি গত বছর জুলাই মাসে আটক হয়ে মেনেদি ক্যাম্পে বন্দি ছিলাম। সেখান থেকে আইনজীবীর মাধ্যমে বৈধতার জন্য আবেদন করে গতকাল অনলাইনে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পেয়েছিলাম। কিন্তু এর পরও আমাকে জোরপূর্বক ডিপোর্ট করা হয়েছে।’ ঢাকায় ফেরত যাওয়া ৩০ বছর বয়সী বাংলাদেশি মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, ‘মেনেদি ক্যাম্প থেকে আমাদের মোট ৩০ জনকে বিমানবন্দরে নেওয়া হলেও বাকি চারজনকে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়। সম্ভবত তাদের আইনজীবীরা দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়েছিলেন।’ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বৈধতার আবেদন করা ব্যক্তিদের তালিকায় আপনারা আমার নাম যাচাই করতে পারেন। দূতাবাসের তালিকায় ৪৫৪৮ নম্বর সিরিয়ালে আমার নাম রয়েছে। আমার আইনজীবী একটু আগে জানান, আমার বৈধতার আবেদন গ্রহণ করা হয়েছিল। আমি আমার আইনজীবীর সহায়তায় আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।’ এ ব্যাপারে দূতাবাসের মিনিস্টার মোহাম্মদ খালেদ বলেন, ‘যদি ডিপোর্ট হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ বৈধতার জন্য আবেদন করে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে তাদের যৌক্তিক অধিকারের জন্য আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ অন্যদিকে তাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ জুবায়েরসহ অন্য বাংলাদেশিরাও দ্রুত তাদের আইনজীবীদের মাধ্যমে এ অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার কথা বলেন।

 

সর্বশেষ খবর