বুধবার, ২২ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা

আরাভ খানসহ আটজনের বিরুদ্ধে বাদীর সাক্ষ্য শেষ

আদালত প্রতিবেদক

পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলায় আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানসহ আটজনের বিরুদ্ধে বাদী জাহাঙ্গীর আলম খানের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। গতকাল ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফয়সাল আতিক বিন কাদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করেন। ফলে এ মামলায় ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্য একজনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলো।

এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন সুরাইয়া আক্তার কেয়া, রহমত উল্লাহ, স্বপন সরকার, মিজান শেখ, আতিক হাসান, সারোয়ার হাসান ও দিদার পাঠান। এদের মধ্যে আরাভ ও কেয়া পলাতক। এদিন কারাগারে আটক ছয় আসামিকে আদালতে হাজির   করা হয়। এরপর তাদের উপস্থিতিতে মামলার বাদীকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ৪ জুন দিন ধার্য করেন আদালত। মামলাসূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৭ জুলাই রাজধানীর বনানীতে খুন হন পুলিশ পরিদর্শক মামুন। ঘটনার তিন দিন পর তার ভাই বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ এ মামলায় রহমত উল্লাহ ও রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয় ওরফে হৃদি ওরফে আরাভ খানসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।

চার্জশিটে বলা হয় : বনানীর ২ নম্বর সড়কের ৫ নম্বরের একটি বাসায় নিয়ে আসামি দিদার, স্বপন, রহমত উল্লাহ পুলিশ কর্মকর্তা মামুনের হাত-পা বেঁধে ফেলেন। পরে ওই তিন আসামির সঙ্গে মিজান, আতিক ও সারোয়ার যুক্ত হয়ে মামুনকে নির্দয়ভাবে মারতে থাকেন। এতে মামুন অজ্ঞান হয়ে পড়েন। রাত ১০টার দিকে আসামি কেয়া (রবিউল ওরফে আরাভের স্ত্রী), আফরিন ও মীম বাসা থেকে চলে যান। রাতের কোনো একসময় সেখান থেকে চলে যান রবিউল ওরফে আরাভও। গভীর রাতে আসামি আতিক আসামি স্বপনকে ডেকে বলেন, ‘দাদা, দেখেন তো পুলিশ কর্মকর্তার হাত-পা কেমন শক্ত মনে হচ্ছে।’ ভোরবেলায় তারা নিশ্চিত হন যে মামুন মারা গেছেন। মামুন মারা যাওয়ার পর রহমত উল্লাহ সবাইকে বলেন, লাশ গুম না করলে তারা সবাই বিপদে পড়ে যাবেন। কারণ মামুন তার বন্ধু। তিনি মামুনকে ফোন করে ডেকে এনেছেন। রহমত উল্লাহর মুঠোফোনের শেষ কলটিও মামুনকে করা। তখন স্বপন মুঠোফোনে রবিউল ওরফে আরাভকে মামুনের মৃত্যুর বিষয়টি জানান। স্বপন বলেন, ‘এখন আমরা কী করব? আপনি সকালে এখানে আসেন।’ চার্জশিটে আরও উল্লেখ করা হয়, দুটি বস্তা ও একটি সাদা কাপড় নিয়ে বাসার নিচে আসেন রবিউল ওরফে আরাভ। তার কাছ থেকে বস্তা নিয়ে বাসার ওপরে যান দিদার। ওই সময় আতিক ও মিজানকে সঙ্গে নিয়ে রহমত উল্লাহ বাসার নিচে গিয়ে তার ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি লিফটের দরজার কাছে নিয়ে রাখেন। সকাল ৭টার দিকে স্বপন, দিদার ও আতিক মিলে মামুনের লাশ লিফটে করে নিচে নামান। সবাই মিলে গাড়ির পেছনের অংশে লাশ তোলেন। পরে রহমত উল্লাহ ওই গাড়ি চালিয়ে বনানীর রোডে যান। গাড়িতে ছিলেন দিদার, স্বপন ও আতিক। সেখানে রবিউল ওরফে আরাভ স্ত্রী আসামি কেয়া, মেহেরুন্নেছা ও মীমকে সঙ্গে নিয়ে একটি মোটরসাইকেলসহ অপেক্ষায় ছিলেন। পরে সেখান থেকে রবিউলের (আরাভ) মোটরসাইকেল অনুসরণ করে রহমত উল্লাহ গাড়ি চালাতে থাকেন। খিলক্ষেতের একটি পাম্পে গিয়ে মোটরসাইকেলে তেল নিয়ে রবিউল (আরাভ) ফিরে আসেন। আর গাড়ি নিয়ে রহমত উল্লাহ যান গাজীপুরের দিকে। ওই সময় রবিউলের (আরাভ) সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে কথা বলেন দিদার ও স্বপন। গাজীপুরের শিমুলতলীতে দিদার, স্বপন ও আতিক একটি দোকান থেকে ৭ লিটার পেট্রল কেনেন। রবিউল (আরাভ) আসামি স্বপনের মুঠোফোনে টাকা পাঠান। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে উলুখোলা থেকে আবদুল্লাহপুর যাওয়ার পথে একটি বাঁশবাগানে পেট্রল ঢেলে মামুনের লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর গাড়ি নিয়ে সবাই ঢাকায় ফিরে আসেন। ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর এ মামলার অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

সর্বশেষ খবর