শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

আইরিশদের উড়িয়ে সিরিজ বাংলাদেশের

মেজবাহ্-উল-হক

আইরিশদের উড়িয়ে সিরিজ বাংলাদেশের

আইরিশরা বেশ বোকা বনে গেছেন! তাদের ধারণা, বাংলাদেশের উইকেট মানেই স্পিন-রাজত্ব। তাই স্পিন-অসুখের দাওয়াই সঙ্গে করে নিয়ে এসে টাইগারদের পেস ঝড়ে লণ্ডভণ্ড আইরিশরা। তিন পেসার হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ ও ইবাদত হোসেনের তাণ্ডবে সিলেটের সবুজ গালিচায় বিধ্বস্ত আয়ারল্যান্ড। গতকাল তৃতীয় ওয়ানডেতে প্রথমবারের মতো ১০ উইকেটে জিতল বাংলাদেশ। ৭ শতাধিক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে এই প্রথমবারের মতো ম্যাচের ১০ উইকেটই তুলে নিলেন টাইগার পেসাররা। ২-০তে ওয়ানডে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। ব্যবধানটা ৩-০ হতে পারত যদি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ ৩৪৯ রানের পাহাড় গড়ার পরও বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত না হতো। সিলেটের সবুজ উইকেটে তিন পেসারের কী দুর্দান্ত বোলিং! পেসার হাসান মাহমুদ মাত্র ৩২ রানে ৫ উইকেট নিলেন। এটাই তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। আরেক পেসার তাসকিন আহমেদ ১০ ওভারে মাত্র ২৬ রান দিয়ে নিলেন ৩ উইকেট। তৃতীয় পেসার ইবাদত হোসেন ২৬ রানে নিলেন বাকি ২ উইকেট। স্পিনারদের কিছু করতেই দিলেন না পেসত্রয়ী হাসান-তাসকিন-ইবাদত। আইরিশরা যেমন উইকেটে খেলে অভ্যস্ত ঠিক সে রকম উইকেটই তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। আর এমন উইকেটেই কি-না ৫০ ওভারের ক্রিকেটে মাত্র ১০১ রানে অলআউট সফরকারীরা। তারপর বাংলাদেশের কোনো উইকেটই হারাতে হয়নি। দুই ওপেনার লিটন দাস ও তামিম ইকবাল মিলেই খেলা শেষ করে দেন। বাইশগজে রীতিমতো ঝড় তুলে ৩৮ বলে অপরাজিত ৫০ রান এবং ক্যাপ্টেন তামিম খেলেন ৪১ বলে ৪১ রানের হার না মানা ইনিংস। মজার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের সেরা তারকা সাকিব আল হাসানকে এই ম্যাচে বোলিং কিংবা ব্যাটিং কোনো কিছুই করতে হয়নি। প্রথম দুই ম্যাচে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিং দিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। দুই ম্যাচেই দুই রেকর্ড। প্রথম ম্যাচে ৩৩৮। সেটি ছিল ওয়ানেডেতে বাংলাদেশের দলীয় সর্বোচ্চ রান। পরের ম্যাচে সেই রেকর্ড ভেঙে ৩৪৯ রান। তৃতীয় ম্যাচে ৪০০ রান করার হুমকি দিয়েছিল বাংলাদেশ। সে কারণেই কি-না টস জিতে এবার নিজেরাই প্রথমে ব্যাটিং করতে নামে আয়ারল্যান্ড। তারপর বাংলাদেশের পেসারদের তোপের মুখে পড়ে ২৮.১ ওভারেই গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। লর্কান টাকার ও কার্টিস ক্যাম্ফার ছাড়া আর কোনো আইরিশ ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের কোটাতেই পৌঁছতে পারেননি। ১০২ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পৌঁছে যায় মাত্র ১৩.১ ওভারে। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং- তিন বিভাগেই অনন্য এ বাংলাদেশ। এবারই প্রথম, ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষের মনের মতো ‘সবুজ উইকেট’ তৈরি করে তাদের উড়িয়ে দিয়ে সিরিজ জিতলেন টাইগাররা। আয়ারল্যান্ডকে উড়িয়ে দেওয়ার পর ক্যাপ্টেন তামিম বলেন, ‘অবিশ্বাস্য। পুরো সিরিজে আমরা যেভাবে খেলেছি এটা দুর্দান্ত। প্রথম থেকেই আমরা যেভাবে খেলেছি, আগে কখনো এভাবে খেলিনি। এখন আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, আমাদের পেস আক্রমণ সেরা। উত্থান-পতন যাই থাকুক এখন আমাদের ক্রিকেটারদের বিশ্বাস করতে হবে, আমরা বিশ্বের সেরা ইউনিট। আমরা এখন হাই-স্কোরিং উইকেটে খেলেছি।’ প্রথম ম্যাচে ২৬ বলে ৪৪ এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ৬০ বলে ১০০ রানের দুটি বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন মুশফিকুর রহিম। গতকাল তো ব্যাটিংয়ের সুযোগই পাননি। তারপরও দুই ম্যাচে দুই ক্যামিও ইনিংসের জন্য সিরিজ সেরা মুশফিক। ম্যাচ শেষে বলেন, ‘আরও একটি সিরিজ জয়। সবাই যেভাবে খেলেছে, তা অসাধারণ। টপ অর্ডাররা ভালো ব্যাট করেছেন। আর টপ অর্ডার ভালো করেছেন বলেই আমরা নিজেদের প্রকাশ করতে পেরেছি।’ ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে ম্যাচ সেরা হাসান মাহমুদ। ৫ উইকেট নিয়ে রোমাঞ্চিত। হাসান বলেন, ‘সবার জন্যই এটা খুবই দারুণ একটি বিষয়। পেস বোলিংয়ের দারুণ একটা কন্ডিশন। বোলিং উপভোগ করেছি। এখানে আমাদের উন্নয়নের নেপথ্যে রয়েছেন অ্যালান ডোনাল্ড। আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি।’ টাইগারদের কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার পর আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বলবার্নির চোখে-মুখে বিস্ময়। তিনি বলেন, ‘এই তিন দিন আমরা যেমন বাজে ক্রিকেট খেললাম, গত দুই-তিন বছরে আমরা এত বাজে খেলিনি। আমরা ভেবেছিলাম এখানে স্পিন বড় ভূমিকা পালন করবে...। ব্যাটিংয়ে আমরা রক্ষণাত্মক খেলতেই পারিনি।’

এ সিরিজে আয়ারল্যান্ডকে কোনো সুযোগই দেয়নি বাংলাদেশ। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং- তিন বিভাগেই নজির স্থাপন করে আইরিশদের স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছেন টাইগাররা।

সর্বশেষ খবর