বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
র‌্যাব হেফাজতে মৃত্যু

নির্যাতন করা হয়নি দাবি র‌্যাবের

মামলা ছাড়া র‌্যাব গ্রেফতার করতে পারে কি না : হাই কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্যাতন করা হয়নি দাবি র‌্যাবের

মামলা ছাড়া কেবল কারও অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব কাউকে গ্রেফতার করতে পারে কি না, জানতে চেয়েছেন হাই কোর্ট। একই সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায়ও কাউকে গ্রেফতারের এখতিয়ার র‌্যাবের রয়েছে কি না, তাও জানতে চেয়েছেন আদালত। নওগাঁয় র‌্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিন নামে এক নারীর মৃত্যুর ঘটনা উদঘাটনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানি নিয়ে গতকাল বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এদিকে জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় অভ্যন্তরীণ তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। র‌্যাব বলেছে, তারা নারী ও শিশু অধিকারকে সব সময় গুরুত্ব দেন। মারা যাওয়া ওই নারীকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি বলেও দাবি র‌্যাবের। গতকাল র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান। হাই কোর্ট জানতে চেয়েছেন আটকের পর থেকে সুলতানা জেসমিনকে সম্মানজনক জায়গায় (থানা অথবা কার্যালয়ে) নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল কি না এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত র‌্যাবের আচরণ আইনানুগ ছিল কি না। এ ছাড়া চূড়ান্ত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কারণ কী আসে সেই তথ্যও আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে। আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে এসব বিষয়ের তথ্য এবং এ সংক্রান্ত আইন, নথি ও সুলতানা জেসমিনের ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। ওই দিন পরবর্তী শুনানি হবে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনোজ কুমার ভৌমিক। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তাকে সহযোগিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ।

র‌্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় হাই কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে গতকাল সকালে রিট দায়ের করেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। জনস্বার্থে দায়ের করা রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, র‌্যাবের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে। তার আগে গত সোমবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাই কোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন অ্যাডভোকেট মনোজ কুমার ভৌমিক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই নারীর মৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তলব করেন হাই কোর্ট।

গতকাল নওগাঁ জেনারেল হাসপাতাল থেকে সুলতানা জেসমিনের সুরতহাল প্রতিবেদন হাই কোর্টে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ভুক্তভোগী সুলতানা জেসমিন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন। মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। তাকে নির্যাতন করা হয়নি।

নির্যাতন করা হয়নি, দাবি ্যাবের : র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গতকাল এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু একটা অভিযোগ এসেছে যে, উনি আমাদের হেফাজতে থাকাকালীন অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন। আপনারা জানেন, আমাদের ইন্টারনাল ইনকোয়ারি সেল রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে একটা তদন্ত কমিটি করেছি। তদন্ত কমিটি কাজ করছে যে, আমাদের কোনো গাফিলতি বা ইনভলভমেন্ট রয়েছে কি না। আমাদের তদন্ত খুবই স্ট্রং হয়। আপনারা জানেন যে, কেউ যদি দোষী সাব্যস্ত হয়, অনেককেই কিন্তু চাকরিচ্যুতসহ বড় পানিশমেন্ট দেওয়া হয়েছে। র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন বলেন, আদালত আমাদের কিছু কোয়েরিজ দিয়েছেন। যেসব কোয়েরিজ দিয়েছেন যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা আদালতে জমা দেব।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজশাহীতে কর্মরত স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব এনামুল হকের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে একটি প্রতারক চক্র চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করে আসছিল। প্রতারক চক্রের সদস্যরা তার নাম ও পদবি ব্যবহার করে মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থও নিয়েছে। এই ঘটনায় এনামুল হক ২০২২ সালের মার্চে জিডি করেন। গত ১৯ ও ২০ মার্চও তার নাম ব্যবহার করে অর্থ নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তিনি নিজেই জানতে পারেন। এই ঘটনার সঙ্গে আল আমিন নামে এক ব্যক্তি জড়িত। তার সহযোগী হিসেবে আমরা গ্রেফতার করেছিলাম জেসমিনকে। তার সম্পৃক্ততাও পাওয়া যায়। খন্দকার আল মঈন বলেন, তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা ওই নারীকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করি। এ সময় দুজন সাক্ষী ছিলেন। এ ছাড়া এলাকার অনেক লোকও ছিলেন। তাদের সামনেই তাকে জিজ্ঞাসাবদ করা হয়। তিনি এ বিষয়ে ইনভলভ কি না জানতে চাইলে তিনি আমাদের নারী র‌্যাব সদস্যদের কাছে অকপটে সব স্বীকার করেন।

মঈন বলেন, পরে আমরা থানার উদ্দেশে যাচ্ছিলাম মামলা করার জন্য। তখন ওই নারী অসুস্থবোধ করেন। পরে তাকে আমরা থানায় না নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাই। আমরা নারী ও শিশু অধিকারের বিষয়ে সব সময় সিরিয়াস। প্রথমে তাকে নওগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাই। উনি হাসপাতালে যাওয়ার পরে তার বোন, ফুফু, চাচা সবাইকে হাসপাতালে ডাকা হয়। সন্ধ্যার দিকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রাজশাহী মেডিকেলে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

সর্বশেষ খবর