সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

খুন হওয়ার নাটক সাজিয়ে গা-ঢাকা ১৪ বছর

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

ঘরজুড়ে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। বিছানা থেকে ঘরের দরজা পর্যন্ত লেগে আছে রক্ত। কিন্তু ঘরের ভিতর যিনি থাকতেন তিনি উধাও। রক্তের দাগ দেখে সবাই নিশ্চিত হন ঘরের বাসিন্দা নাহিদ ইসলাম খুন হয়েছেন। ঘাতকরা রক্তাক্ত দেহ টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেছে অন্যত্র। এলাকার লোকজনের এমন সন্দেহই  ছিল। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পুলিশের ধারণাও ছিল একই। কিন্তু তদন্তে নেমে পুলিশ পেয়েছে ভিন্ন ঘটনা। নাহিদ ইসলাম নামের ওই ব্যক্তি অনলাইনে জুয়া খেলে ঋণগ্রস্ত হয়ে খুনের নাটক সাজিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন। সিলেট থেকে পালিয়ে তিনি নরসিংদীতে আত্মগোপন করেছেন। সেখান থেকেই নাহিদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গতকাল তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয় এবং পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। নাহিদ ইসলাম সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের মাথিউরা পূর্বপাড় গ্রামের আবদুল হেকিমের বাড়ির কেয়ারটেকার ছিলেন। পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার ভোর রাতে মাথিউরা পূর্বপাড় গ্রামে আবদুল হেকিমের কেয়ারটেকারের ঘরজুড়ে রক্তের দাগ পড়ে থাকার খবরটি জানান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. আমান উদ্দিন। বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রক্তমাখা বিছানা, বারান্দা ও ঘরের মেঝ দেখতে পেলেও নাহিদকে খুঁজে পায়নি। অবস্থাদৃষ্টে সবার ধারণা হয়, রাতের আঁধারে কেউ নাহিদকে খুন করে গুম করার উদ্দেশ্যে রক্তমাখা লাশ নিয়ে গেছে। পুলিশও প্রথমে ঘটনাটি হত্যাকান্ড ধরে তদন্ত শুরু করে। কিন্তু ঘরে লেগে থাকা রক্তে দুর্গন্ধ সৃষ্টি না হওয়ায় সন্দেহ হয় পুলিশের। ঘরের ভিতর একটি বালতি ও মগেও পাওয়া যায় রক্তসদৃশ দাগ। রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পুলিশ ল্যাবে পাঠালেও পরীক্ষায় সেটি রক্ত কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এক পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ জানতে পারে নাহিদ খুন হননি। তিনি আত্মগোপন করে আছেন নরসিংদীতে। তারপর গত শনিবার তাকে নরসিংদী থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।  সিলেটের পুলিশ সুপার মো. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাহিদ জানিয়েছেন তিনি প্রায় ১৪ বছর ধরে বিয়ানীবাজারে ভুয়া পরিচয়ে অবস্থান করছিলেন। কলেজে পড়ালেখা অবস্থায় একটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় তিনি সন্দেহভাজন হিসেবে পুলিশের কাছে চিহ্নিত হন। এরপর থেকে তিনি গ্রামেরবাড়ি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থানার বড়ভিটা পূর্বপাড়া ছেড়ে সিলেটের বিয়ানীবাজার এসে আশ্রয় নেন। পুলিশ সুপার জানান, নাহিদ মূলত অনলাইন জুয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জুয়া খেলতে গিয়ে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তারপর তিনি ভুয়া পরিচয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। তিনি জানান, নিখোঁজ হওয়ার পর পুলিশ তার ঘর তল্লাশি করে একটি ডায়েরি পায়, যাতে অনেক দেনা-পাওনার হিসাব লেখা ছিল।

সর্বশেষ খবর