সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

গরমে ত্রাহি অবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক

তাপপ্রবাহ বিস্তৃত হয়েছে সারা দেশে। সূর্যের গনগনে আঁচে মানুষসহ সব পশু-পাখির ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। এক দিনের ব্যবধানে গতকাল ঢাকার তাপমাত্রা আরও বেড়েছে। ৫৮ বছরের মধ্যে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল শনিবার। গতকাল সেই রেকর্ডও ভেঙেছে। এ ছাড়া টানা ১৫ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়।           

প্রচ- দাবদাহে অতিষ্ঠ মানুষ। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। নষ্ট হচ্ছে ফসল। হিটস্ট্রোকে মৃত্যু হচ্ছে গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির।

আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, গতকাল রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ছিল ১৯৬৫ সালের পর সর্বোচ্চ। গতকাল সেই রেকর্ডও ভেঙেছে। ১৯৬৫ সালে ঢাকায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। এদিকে টানা ১৫ দিনের মতো গতকালও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই তাপমাত্রা ছিল যশোরেও। এ ছাড়া খুলনায় ৪১.৩, মোংলায় ৪১.৪, ঈশ্বরদীতে ৪১, ফরিদপুরে ৪১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আগের দিন চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সবশেষ ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২০১৪ সালে যশোরে।

৩৬ থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু, ৩৮ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস মাঝারি, ৪০ থেকে ৪১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তীব্র ও ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, খুলনা বিভাগসহ ঢাকা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী ও পাবনা জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা অব্যাহত থাকতে পারে। রাতের তাপমাত্রা বাড়তে পারে। ৪-৫ দিন পর বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, ১৯ এপ্রিলের পরে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তখন তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গরমের সময় ভারতের গুজরাট ও পার্শ্ববর্তী এলাকার তপ্ত বাতাস ভারতের পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম দিক দিয়ে দেশে প্রবেশ করে। এ কারণে চুয়াডাঙ্গা, যশোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, খুলনা অঞ্চলে তাপপ্রবাহ দেখা দেয়। বর্তমানে মধ্য ও পূর্ব ভারতের তাপমাত্রা রয়েছে ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

অধিক গরমে বাড়ছে রোগ-ব্যাধি : প্রচ- গরমে হিটস্ট্রোক, মামস, জলবসন্ত, ডায়রিয়া, রোটা ভাইরাস ও ফাঙ্গাল সংক্রমণসহ নানা রোগ-ব্যাধি বাড়ছে। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ভিড়। চাহিদা বেড়ে গেছে স্যালাইনের। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, রোজায় দীর্ঘসময় পানি না খাওয়া অবস্থায় প্রচুর ঘাম হলে শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হতে পারে। হিটস্ট্রোক হতে পারে। বাতাস শুষ্ক থাকায় অনেক সময় ঘাম দেখা না গেলেও শরীর থেকে পানি ঠিকই বেরিয়ে যাচ্ছে। তাই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়া ভাল। গরমে কিছু ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ে। মামস, জলবসন্ত, ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার বাড়ে। বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী নারী এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এ সময় শিশুদের রোটা ভাইরাসে আক্রান্তের শঙ্কা বাড়ে। এজন্য বিনা কারণে ঘরের বাইরে যাওয়া, ফ্রিজের ঠান্ডা খাবার, বাইরের খোলা খাবার ও অনিরাপদ পানি পান থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর