মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

বঙ্গোপসাগরে ট্রলারে ১০ খুন

কক্সবাজার ও চকরিয়া প্রতিনিধি

বঙ্গোপসাগরে ট্রলারে ১০ খুন

বঙ্গোপসাগরে কক্সবাজারের নাজিরারটেক উপকূলে ট্রলারের হিমঘর থেকে উদ্ধার ১০ লাশ প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছেন স্বজনরা। স্বজনরা জানিয়েছেন, গত ৭ এপ্রিল সাগরে গিয়ে নিখোঁজরা কক্সবাজারের মহেশখালী ও চকরিয়া উপজেলার বাসিন্দা।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মহেশখালী ও চকরিয়া থেকে নিখোঁজের পরিবারের আত্মীয়স্বজনরা কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে এসে ১০ লাশের পরিচয় শনাক্ত করেছেন। তবে এ পরিচয় প্রাথমিক। নিশ্চিত হওয়ার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে ডিএনএ পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরপরই লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। স্বজনরা এসে এ পর্যন্ত যে ১০ জনের পরিচয় শনাক্তের কথা জানিয়েছেন, তারা হলেন- মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলাপাড়ার রফিক মিয়ার ছেলে সামশুল আলম (২৩), শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৮), জাফর আলমের ছেলে সওকত উল্লাহ (১৮), মুসা আলীর ছেলে ওসমান গণি (১৭), সাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ (২৩), মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ (১৪), মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে নুরুল কবির (২৮) ও চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের কবির হোসাইনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৪), শাহ আলমের ছেলে মোহাম্মদ শাহজাহান (৩৫) এবং চিরিঙ্গা এলাকার জসিম উদ্দীনের ছেলে তারেক জিয়া (২৫)।

লাশ শনাক্ত করতে আসা ওসমান গণির মা জোহরা বেগম জানিয়েছেন, পরিবারের কাউকে না বলে তার ছেলে সাগরে মাছ শিকারে যায়। কয়েকদিন পর শোনেন ট্রলারটি জলদস্যুর কবলে পড়েছে। এরপর তার কোনো খোঁজ মিলছিল না। পরে রবিবার উদ্ধার লাশগুলোতে তার সন্তান আছে কি না দেখতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে গেলে শার্ট ও প্যান্ট দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের আলী আজগর বলেন, শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম, জাফর আলমের ছেলে সওকত উল্লাহ, মুসা আলীর ছেলে ওসমান গণি, সাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ, মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ ও মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে নুরুল কবির সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে সবাই নিখোঁজ ছিলেন। নিখোঁজ এই ছয়জনই আমার আত্মীয়-স্বজন। পরনের কাপড় দেখে এখন পর্যন্ত ছয়জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এরকম খবর ছিল ১০ থেকে ১২ দিন আগে কিছু লোক সাগরে মাছ ধরতে গেছে কিংবা সাগরে মাছ ধরার জন্য বের হয়েছে বলে তাদের বাড়ি থেকে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা আর ফিরে আসেনি। যদিও এ সংক্রান্ত দাফতরিক কোনো তথ্য নেই।’

তিনি বলেন, পরিচয় শনাক্তের পর এটি কোন ধরনের হত্যাকা ; কারা এটি ঘটিয়েছে বা কোথায় ঘটিয়েছে তা উদঘাটন করা হবে।

স্থানীয় লোকজন জানান, ৯ এপ্রিল মহেশখালী এলাকার শামসুল আলমের মালিকানাধীন ফিশিং বোট থেকে উদ্ধার জেলেদের ডাকাত সন্দেহে মেরে ফেলে অপর জেলেরা। পরে তাদের ওই বোটের হিমাগারে ঢুকিয়ে রেখে পাটাতনে পেরেক মেরে দিয়ে বোটটি পানিতে ডুবিয়ে দেয়।

১৫ দিন পর ফিশিং বোটটি সোনাদিয়া দ্বীপের পশ্চিমে সাগরে ভাসতে দেখে অপর জেলেরা। কাছে গিয়ে পচা গন্ধ পেয়ে বোটটি টেনে নাজিরারটেক এলাকায় নিয়ে আপ্রণ তারা। পরে প্রশাসনকে খবর দেওয়া হয়। থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের দমকল বাহিনী প্রশাসনের লোকজনের উপস্থিতিতে হিমাগারের পাটাতন ভেঙে লাশগুলো উদ্ধার করে।

সর্বশেষ খবর