শিরোনাম
শনিবার, ৬ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

নভেম্বরে ভোটের তফসিল

গোলাম রাব্বানী

নভেম্বরে ভোটের তফসিল

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আট মাস। ২০২৪ সালের জানুয়ারির শুরুতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চলতি বছরের নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা হতে পারে। এ জন্য সেপ্টেম্বরে শুরু হবে ভোটের মূল তোড়জোড়। সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কবে হবে ভোট গ্রহণ। তবে সব রাজনৈতিক দলকে      ভোটে আনতে একাধিক ভোটের তারিখ ও তফসিল প্রস্তুত রাখবে কমিশন। এ ক্ষেত্রে নভেম্বরের শুরুতে তফসিল দিয়ে ভোট গ্রহণের তারিখ পরিবর্তনের সুযোগ রাখা হতে পারে। সবশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর থেকে এক সপ্তাহ পেছানো হয়; পরে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ভোট হয়।

অন্যদিকে ইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংসদের ৩০০ আসনে ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণের। সে অনুযায়ী কাগজ সংগ্রহসহ অন্যান্য নির্বাচনী মালামাল কেনাকাটার কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন মাঠপ্রশাসন ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনের আগেই ডিসি-এসপি ও ওসিদের রদবদল করা হতে পারে। ডিসিরা সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে থাকে ভোটের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে। তা ধরে সব ধরনের কাজ এগিয়ে চলছে। নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরুর পর সার্বিক বিষয় নিয়ে কমিশন সভা হবে। আমরা কমিশন সভা করেই ভোটের তারিখ জানাব। যথা সময়ে তফসিল ঘোষণা করা হবে।

তিনি বলেন, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের টার্গেট নিয়ে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে। সেই হিসাবে ৪৫ দিন হাতে রেখে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।

আহসান হাবিব খান বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভয়ভীতিহীন, অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ তৎপর। নিজেদের মেয়াদের প্রথম বছরে এ পর্যন্ত যত নির্বাচন হয়েছে তাতে যেখানে বাধা, অনিয়মের অভিযোগ এসেছে সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আগামীতে সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আমরা সব সময় আশ্বস্ত করতে চাই। আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টা দিয়ে পালন করব ইনশা আল্লাহ। পাশাপাশি সবার সহযোগিতাও কামনা করি। আশা করি ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম হব।

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে একাধিক পরিকল্পনা থাকবে ইসির। প্রথমত, চলতি বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি তফসিল দিয়ে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ভোটগ্রহণ। দ্বিতীয়ত, নভেম্বরের শুরুতে তফসিল দিয়ে ডিসেম্বরের শেষ দিকে ভোট অনুষ্ঠান। এদিকে সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বসে নেই রাজনৈতিক দলগুলোও। তারাও নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে। নানা হিসাব-নিকাশ চলছে সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে। দলগুলো নিজ নিজ প্রার্থী ঠিক করতে পর্যালোচনা করছে।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচন কমিশন সেপ্টেম্বরে সংসদ নির্বাচনের মূল কাজ শুরু করবে। এ জন্য ইসির নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা থাকবে; সেই পরিকল্পনা শুধু নির্বাচন কমিশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। পরিকল্পনায় নির্বাচনী মাঠের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছক, বিভিন্ন কেনাকাটা, কাগজ-কালি সংগ্রহ থেকে শুরু করে নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশের সব খুটিনাটি থাকবে।

সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। কেননা ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। সেই হিসাবে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে ভোট করতে হবে। আর নিয়ম মেনে মনোনয়নপত্র জমা ও বাছাই, প্রত্যাহারের শেষ সময় এবং ভোটের প্রচারের জন্য সর্বোচ্চ তিন সপ্তাহ সময় বিবেচনা করে ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এ জন্য তফসিল ঘোষণা থেকে ভোট পর্যন্ত ৪০-৪৫ দিন সময় দেওয়া হয়ে থাকে। সে হিসাবে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা জানুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের তারিখ নির্ধারিত হতে পারে বলে সাধারণ আলোচনা রয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ইসির কাজও ততই এগিয়ে চলছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুছিয়ে এনেছে কমিশন। এরই মধ্যে নির্বাচনী আইন সংস্কার, সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, গণমাধ্যমকর্মী নীতিমালার কাজ এগিয়ে চলছে। ভোটের আগেই পাঁচ সিটির নির্বাচনও শেষ করবে ইসি। ইতোমধ্যে পাঁচ সিটি ভোটের তফসিলও ঘোষণা হয়েছে। ইসির একটি সূত্র জানিয়েছে, মে-জুনের মধ্যে সংসদ ও নভেম্বরের মধ্যে উপজেলা নির্বাচনের ব্যালট পেপারের কাগজসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটা শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে কমিশন। বর্তমানে কাঁচামাল সংকটের কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত কর্ণফুলী পেপার মিলের (কেপিএম) কাছে প্রায় ৭০০ টন কাগজ চেয়ে চিঠি দিয়েছে ইসি।

অন্যদিকে নির্বাচনের ব্যালট পেপারের কাগজ কেনার পাশাপাশি অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটার কার্যক্রমও চলছে। নির্বাচনী মালামালের মধ্যে- ব্যালট পেপারের কাগজ, স্ট্যাম্প প্যাড, অফিশিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, লাল গালা, আম কাঠের প্যাকিং বাক্স, অমোচনীয় কালি, বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট, সুই-সুতা, খাম, মোমবাতি রয়েছে। আর ইতোমধ্যে এসব নির্বাচনী সামগ্রী কেনাকাটার প্রাথমিক প্রক্রিয়া চলছে কমিশনে।

ইসির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, নির্বাচনে ভোটগ্রহণের প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো হচ্ছে- অমোচনীয় কালির কলম, ব্যালট বাক্সের সিল, স্ট্যাম্প প্যাড, রেড সিলিং ওয়াক্স, অফিশিয়াল সিল, মার্কিং সিল ও ব্রাশ সিল। চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই নির্বাচনী উপকরণ কেনার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এসব উপকরণ ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও ব্যবহার করা হবে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পরেই অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচন। নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্ট্যাম্প প্যাড কেনা হবে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ, রেড সিলিং ওয়াক্স প্রায় ১৮ হাজার কিলোগ্রাম, অফিশিয়াল সিল প্রায় ৬ লাখ, মার্কিং সিল প্রায় ১২ লাখ, ব্রাশ সিল কেনা হবে ১ লাখের বেশি। আর অমোচনীয় কালির কলম প্রায় ৭ লাখ এবং প্রায় ৩৫ লাখ ব্যালট বাক্সের সিল কিনবে কমিশন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর