শনিবার, ৬ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
ফিরলেন রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা

রাখাইনে সেই গ্রাম নেই এখন সারিবদ্ধ ক্যাম্প

কক্সবাজার প্রতিনিধি

মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ দেখতে যাওয়া বাংলাদেশে বসবাসরত ২০ রোহিঙ্গাসহ ২৭ জনের প্রতিনিধি দল গতকাল কক্সবাজার ফিরে এসেছেন। তারা জানিয়েছেন, রাখাইনে রেখে আসা সেই গ্রাম আর নেই। তার বদলে এখন সেখানে দেখা গেছে সারি সারি ক্যাম্প। এসব ক্যাম্প রোহিঙ্গাদের   থাকার জন্য  তৈরি করা হয়েছে। বিকাল পৌনে ৫ টায় মিয়ানমার থেকে ফিরে আসা প্রতিনিধি দলের রোহিঙ্গা আবু সুফিয়ান জানান, রাখাইন রাজ্যের মংডু থেকে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে পালিয়ে আসার সময় যে গ্রাম তারা রেখে এসেছিলেন, তার কোনো অস্তিত্ব দেখেননি রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা। ওখানে এখন সারিবদ্ধ ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। আবু সুফিয়ান জানান, মংডু শহরের আশপাশে কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখেছেন তারা। ওখানে সব কিছু পাল্টে গেছে। সারি সারি ক্যাম্প তৈরি করা  হয়েছে। এসব ক্যাম্পেই রোহিঙ্গাদের নিয়ে রাখার পরিকল্পনা করছে মিয়ানমার।

সফরে থাকা মোহাম্মদ সেলিম নামের অপর এক রোহিঙ্গা জানান, মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তিনি নিজেই কথা বলেছেন। প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার দাবি জানালেও তাকে জানানো হয়েছে, আপাতত নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। এনভিসি কার্ডে তাদের ক্যাম্পে থাকতে হবে। তিনি মনে করেন, মিয়ানমারের এমন শর্তে রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনে আগ্রহী হবেন বলে মনে হয় না।

উল্লেখ্য, এদিন সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজারের টেকনাফের জালিয়াপাড়া ঘাট থেকে মিয়ানমারের উদ্দেশে যাত্রা করেন। বেলা ১১ টার দিকে তারা মংডু শহরে পৌঁছান। এই দলে ছিলেন রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১৭ জন পুরুষ ও ৩ জন নারী এবং রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত ৭ কর্মকর্তা। কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, মিয়ানমারের মংডু শহরের আশপাশে পরিদর্শনকালে পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি দেখা গেছে। ওখানে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা, ব্যবসা করা মানুষের ৮০ শতাংশই রোহিঙ্গা। ওখানে প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিস্থিতি দেখা গেছে। তিনি আরও জানান, এরপর মিয়ানমারের একটি দল দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ সফরে আসবেন। তখন প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলাপ আলোচনা হবে। আরআরআরসি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল শুরু হওয়ার পর ২০১৮ সালে বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছে প্রত্যাবাসনের জন্য ৮ লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দিয়েছিল। সে তালিকা যাচাই-বাছাই করে মাত্র ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা চূড়ান্ত করে তা বাংলাদেশের কাছে ফেরত পাঠিয়েছিল মিয়ানমার। এর আগে ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। এরপর ২০১৯ সালে আগস্টে চীনের তরফ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর আরেকটি উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু নাগরিকত্বের বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় যেতে চাননি। এখন আবার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চীনের তরফ থেকে এই তৃতীয় দফার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর