সোমবার, ৮ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পাঁচ পণ্যের দাম

চিনির দাম বাড়াতে চান মিল মালিকরা, সরকার বলছে অযৌক্তিক

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রোজার মাসে দাম কমলেও বাংলাদেশে বাড়ে পণ্যের দাম। আর এবার রোজার পর আরেক দফা বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। ঈদের ছুটি শেষে সাধারণ মানুষ বাজারে গিয়ে দেখছেন নিত্যপণ্যের পাশাপাশি বেড়েছে  সবজি ও মসলাজাতীয় পণ্যের দামও। কৃষি বিপণন অধিদফতরের প্রতিবেদন অনুযায়ী রোজার পর যে পাঁচটি পণ্যের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তার মধ্যে রয়েছে আদা, রসুন, পিঁয়াজ, আলু ও চিনি।

সূত্র জানান, সবজি ও মসলাজাতীয় পণ্য সরবরাজনিত সংকটে দাম বাড়লেও আমদানিকারক ও মিল মালিকরা এখনো ইউক্রেন যুদ্ধ আর ডলার সংকটের দোহাই দিয়ে চিনিসহ কিছু পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পবিত্র রমজানের পর চিনিসহ নিত্যপণ্যের দাম কমবে বলে আশা করা হলেও ব্যবসায়ীরা এখনো আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিচ্ছেন। তারা ইউক্রেন যুদ্ধ ও ডলার সংকটের কথা বলছেন। বাড়তি দামে তারা পণ্য আমদানি করবেন কি না সে বিষয়েও সরকারের কাছে সিদ্ধান্ত চাইছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, চিনির দাম বাড়াতে গতকাল ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মিল মালিকরা। তবে মিল মালিকদের প্রস্তাবিত দর অনেক বেশি মনে করছে ট্যারিফ কমিশন। সূত্র জানান, মিল মালিকরা খোলা চিনি প্রতি কেজি ১৩০ টাকা ও প্যাকেট চিনি প্রতি কেজি ১৩৫ টাকা নির্ধারণের জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, চিনি ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিক দাম চাইছেন, সে কারণে মূল্য নির্ধারণে ট্যারিফ কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। সরকার যেহেতু আমদানি শুল্ক হ্রাস করেছে, ফলে পণ্যটির দাম বাড়ানোর সুযোগ কম। কৃষি বিপণন অধিদফতরের গতকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী এক মাসে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে এমন পাঁচটি পণ্যের মধ্যে রয়েছে আদা, রসুন, আলু, পিঁয়াজ ও চিনি। এর মধ্যে মিয়ানমার আদার দাম এক মাসে প্রায় ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, দেশি রসুনের দাম বেড়েছে ৮৮ শতাংশ, পিঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ এবং  চিনির দাম বেড়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ। এ ছাড়া এক মাসের ব্যবধানে হল্যান্ড আলুর দাম বৃদ্ধির হার প্রায় ৩৭ শতাংশ। আদা, রসুন, পিঁয়াজের বিষয়ে রাজধানীর শ্যামবাজার ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়তদার ব্যবসায়ীরা জানান, রোজার ঈদে সবকিছু বন্ধ থাকায় নিত্যপণ্যের সরবরাহ কমে গেছে। ফলে পিঁয়াজ, রসুন, আদাসহ কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। সরবরাহ বাড়লেই এসব পণ্যের দাম কমে যাবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জানান, সামনে কোরবানির ঈদ, এ কারণে আদা-পিঁয়াজের দাম বাড়তে পারে। তবে পিঁয়াজের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে প্রয়োজনে আমদানি উন্মুক্ত করে দেওয়ার ইঙ্গিত দেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে কৃষি সচিবের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও জানান। শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম জানান, আদা, রসুন, পিঁয়াজের আমদানিমূল্য বেড়ে গেছে। কয়েকদিনে মিয়ানমার আদার দাম দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে চিনির দাম বাড়ার জন্য সিন্ডিকেটকে দায়ী করেন শ্যামবাজারের এই ব্যবসায়ী নেতা। শামসুল আলম বলেন, রোজার মাসে চিনি ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে পাওয়া গেলেও এখন দেড় শ টাকার নিচে চিনি মিলছে না। সব সিন্ডিকেটের দখলে চলে গেছে।

সূত্র জানান, মিল মালিকদের যুক্তি ছিল আমদানির ওপর শুল্ক বেশি হওয়ায় দেশে চিনির দাম বেশি পড়ছে। আমদানি শুল্ক কমলে পণ্যটির দাম তারা কমিয়ে দেবেন। এ অবস্থায় ফেব্রুয়ারিতে চিনির ওপর সব ধরনের শুল্ক হ্রাস করে প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর। এরপরও কমেনি পণ্যটির দাম। সরকারি সূত্রগুলো জানান, রোজার পর চিনির দাম কমবে- এমনটি আশা করা হলেও উল্টো প্রতি কেজিতে প্রায় ২০ টাকা বেড়ে গেছে পণ্যটির দাম। ব্যবসায়ীরা সেই পুরনো অজুহাত হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কথা বলছেন। তারা বাড়তি দামে চিনি আমদানি করবেন কি না সে বিষয়ে জানতে চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গত সপ্তাহে চিঠি পাঠায়। বিষয়টি নিয়ে গত ৩ মে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে চিনি পরিশোধনকারী মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। দেশে চিনির দাম বাড়ার পেছনে মিল মালিকদের দায় রয়েছে বলে মনে করেন চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন,  ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব আছে, ডলারের সংকটও আছে, তারপরও আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির বুকিং বাড়ছে। খাতুনগঞ্জের এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, মিল মালিকরা বাজারের চাহিদা অনুযায়ী চিনি ছাড়ছেন না। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকার কারণেই পণ্যটির দাম বাড়ছে।

সর্বশেষ খবর