বৃহস্পতিবার, ১১ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাজেট নিয়ে নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর মহার্ঘভাতার ঘোষণা আসছে

মানিক মুনতাসির

চলমান বৈশ্বিক অচলাবস্থা ও অর্থনৈতিক সংকট এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বাজেট ২০২৩-২৪ প্রসঙ্গে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, এনবিআর চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, সচিবসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। এরপর অর্থ বিভাগের পক্ষে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও বাজেট প্রসঙ্গে একটি প্রদর্শনী তুলে ধরা হয়। বৈঠকের এক সূত্র জানান, বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে সরকারি চাকুরেদের জন্য মহার্ঘভাতার বিষয়টি ছিল না। তবে অনির্ধারিত আলোচনায় এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, বৈশ্বিক সংকট সত্ত্বেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও সামগ্রিক উন্নয়ন আজ সারা বিশ্বেই আলোচিত হচ্ছে। আমরা সংকটকে সম্ভাবনা হিসেবে কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে জানি। সেই মোতাবেক যত বাধাই আসুক আমরা আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। ফলে আসছে বাজেটটিও হবে জনকল্যাণের বাজেট। উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে এবং মূল্যস্ফীতির চাপ সামলে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। বৈশ্বিক সংকটের কারণে দেশের মানুষের আয় কমেছে যদিও বেড়েছে দৈনন্দিন ব্যয়। এমন পরিস্থিতিতে মানুষকে স্বস্তি দিতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। এজন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় যতটা সম্ভব মানুষকে সহায়তা দিয়ে আসছে সরকার। নির্বাচন সামনে রেখে এর আওতা বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে সরকারি চাকুরেদের জন্য আপাতত নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হচ্ছে না। এর পরিবর্তে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ মহার্ঘভাতার ঘোষণা আসতে পারে বাজেটে। এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তানুযায়ী ৫ শতাংশ হারে রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। এতে আসছে বাজেটে করদাতাদের ওপর করের চাপ বাড়বে। যদিও সরকার বলছে করের আওতা বাড়ানো হবে। করের হার খুব একটা বাড়ানো হবে না। কেননা মানুষ এমনিতেই কষ্টে আছে। অবশ্য জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে একাধিকবার। আরেক দফা বাড়ানোর ঘোষণা আসবে যে কোনো সময়। এতে মূল্যস্ফীতি ২ অঙ্কের ঘরে যেতে হয়তো খুব বেশি অপেক্ষা করতে হবে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এসব বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে বর্তমান সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেটটি দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। আবার নির্বাচনও খুব সামনে; যার ফলে এ বাজেটটি আলাদাভাবে গুরুত্ব বহন করে বলে মনে করে সরকার। করোনা মহামারির পর শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট সময়ের সঙ্গে আরও ঘনীভূত হচ্ছে; যার ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও সংকটের দিকেই ধাবিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ডলার সংকট, বৈশ্বিক মন্দা, নির্বাচনী কৌশল ও ব্যবসা বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে নতুন বাজেট। এদিকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ডলার সংকট, বৈশ্বিক মন্দা, নির্বাচনী কৌশল ও ব্যবসা বিনিয়োগকে অগ্রাধিকারের নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৩-২৪ বাজেটে মোটা দাগে কতগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

তা হলো : বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কেননা দেশে গত কয়েক বছরে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। ভর্তুকির নিরাপদ সংস্থান করতে হবে। বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনতে হবে। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে আনতে হলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। একইভাবে বৈদেশিক মুদ্রার সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে স্থিতিশীল শক্তিশালী রিজার্ভ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এ ছাড়া দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে হলে সরকারকে এ খাতে অবশ্যই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

সর্বশেষ খবর