মঙ্গলবার, ১৬ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

মোখায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

♦ মহেশখালীতে তিন লবণ চাষির মৃত্যু ♦ সেন্টমার্টিনের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতির চিহ্ন ♦ কক্সবাজারে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি ♦ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২৮০০ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত

প্রতিদিন ডেস্ক

মোখায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে ঘূর্ণিঝড় মোখায় উড়ে গেছে ঘরের চাল -এএফপি

ঘূর্ণিঝড় মোখায় কক্সবাজারের মহেশখালীতে তিন লবণচাষির মৃত্যু হয়েছে। প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের আগের শ্রী নেই। কক্সবাজারে সাড়ে ১১ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ২ হাজার ৮০০ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোখায় ক্ষতিগ্রস্তরা এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।

এদিকে গতকাল সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে কোনো উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার শতভাগ মানুষকে আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে পেরেছিলাম, যার জন্য হতাহতের খবর পাওয়া যায় নেই।

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের পূর্ব পাশের জেটি ঘাট দিয়ে একটু এগিয়ে গেলেই মূল বাজার। যে বাজারে প্রবেশ করতেই দেখা মেলে ঘূর্ণিঝড় মোখার ক্ষত। আনুমানিক সাড়ে ৩০০ দোকান নিয়ে বাজারটির পাকা দোকানগুলো অক্ষত থাকলেও আধা পাকা এবং টিন শেড দোকানের ছাউনি উপড়ে গেছে। কিছু কিছু দোকান ভেঙে গেছে আংশিক। গতকাল বিকাল ৫টার দিকে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের মালিকরা কিছুটা ভাঙা অংশ সংস্কারে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বাজারের কয়েকটি দোকানও খুলেছে। বাজারের ব্যবসায়ী নাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, যা আছে তা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। অপর ব্যবসায়ী আবদুল মালেক জানিয়েছেন, বাজারের কম হলেও দেড় শতাধিক দোকান নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের দ্বীপটির বাজার হয়ে পশ্চিমপাড়ার সড়কটির বিভিন্ন পয়েন্টজুড়ে রয়েছে গাছ ভেঙে যাওয়ার অস্তিত্ব। এই জনপ্রতিনিধি জানান, দ্বীপের পশ্চিমপাড়া, উত্তরপাড়া, কোনারপাড়া, গলাচিপা, মাঝেরপাড়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ এখনো খোলা আকাশের নিচের রয়েছেন।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, দ্বীপের ১ হাজার ২০০ ঘর ও কটেজ ভেঙে গেছে। তার মধ্যে ১ হাজার বসতঘর। এসব ঘরের মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে রয়েছে। জেলা প্রশাসক গতকাল দ্বীপ পরিদর্শনে এসে শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন। ইউনিয়নের পক্ষে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। তিনি জানান, দ্বীপের ২ হাজারের বেশি গাছ ভেঙে গেছে। জেটি ঘাটে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে দ্বীপের মানুষকে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবারের (আজকের) মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হবে। দুপুরের পর থেকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

কক্সবাজারে ফসলের ক্ষতি সাড়ে ১১ কোটি টাকা : ঘূর্ণিঝড় মোখায় কক্সবাজারের ৩ হাজার ৫২০ জন কৃষকের ১১ কোটি ৪৪ লাখ ৬১ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। জেলার ২টি উপজেলা টেকনাফ ও মহেশখালীতে এই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শুধু গ্রীষ্মকালীন সবজি ও পানচাষিরা ঘূর্ণিঝড়ে এমন ক্ষতির হয়েছেন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ২৮০০ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত : মোখার আঘাতে কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২ হাজার ৮২৬টি ঘর ছাড়াও লানিং শেল্টার, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রসহ অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৭ রোহিঙ্গা নানাভাবে আহতও হন। কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।

বাড়ি ফিরছে মানুষ : শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মোখার হাত থেকে জীবন বাঁচাতে আশ্রয় কেন্দ্রে আসেন কক্সবাজার উপকূলের প্রায় ৩ লাখ মানুষ। ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করার পর স্বস্তি ফিরেছে বাসিন্দাদের মধ্যে। গবাদিপশু নিয়ে নিজ বসতভিটায় ফিরছেন তারা। গতকাল সকাল ও রবিবার (১৪ মে) রাত থেকেই তারা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেন।

আতঙ্ক কাটিয়ে স্বাভাবিক চেহারায় ফিরেছে কুয়াকাটা : ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব কেটে গেছে। আতঙ্ক কাটিয়ে স্বাভাবিক চেহারায় ফিরেছে সাগরকন্যা কুয়াকাটা। আসতে শুরু করেছে পর্যটক। দর্শনীয় স্থানগুলো যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন। সৈকতে লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণে ফুটে উঠেছে আলপনা।

দুর্যোগ কেটে যাওয়ার চট্টগ্রামে ফিরছে যুদ্ধজাহাজ : ঘূর্ণিঝড় মোখার দুর্যোগ কেটে যাওয়ার পর গতকাল সকালে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা চট্টগ্রাম নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের বড় বড় যুদ্ধজাহাজগুলো গতকাল সকালে মোংলা বন্দর জেটি ত্যাগ করেছে। মোংলা বন্দরে অবস্থানরত জাহাজগুলোতে পণ্য ওঠানামার কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। মোখার কারণে সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্টে আশ্রয় নেওয়া দুটি এলপিজি গ্যাস বোঝাই জাহাজ গতকাল সকালে মোংলা বন্দরে নোঙর করেছে। আমদানিকৃত এলপিজি গ্যাস নিয়ে সকালে ভিয়েতনামের পতাকাবাহী ‘ওশানস ৯’ ও মার্শাল আইল্যান্ড পতাকাবাহী ‘ইকো গ্যালাক্সি’ নামের জাহাজ দুটি মোংলা বন্দরে পৌঁছে।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক : মানিকগঞ্জের আরিচা-পাটুরিয়া এবং রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও পাবনার কাজিরহাট নৌপথে পুনরায় লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। মোখার প্রভাব কেটে যাওয়ায় গতকাল সকাল ৯টার দিকে আবার মানিকগঞ্জের আরিচা-পাটুরিয়া এবং রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও পাবনার কাজিরহাট নৌপথে লঞ্চ চলাচল শুরু করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ।

নোয়াখালীর সঙ্গে হাতিয়ার নৌযান চলাচল শুরু : ঘূর্ণিঝড় মোখার আতঙ্কের পর গতকাল সকাল থেকে নোয়াখালীর সঙ্গে হাতিয়ার নৌযান চলাচল শুরু হয়েছে। নোয়াখালীর উপকূলীয় হাতিয়াসহ চারটি উপজেলার চরাঞ্চলের লোকজন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছে। জেলার উপকূলীয় এলাকার লোকজন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছেন।

মোখায় উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়নি- দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী : ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে কোনো উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। গতকাল সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ঝড়ে আমাদের সিগনিফিক্যান্ট কোনো ক্ষতি হয় নাই। যেভাবে এটার পূর্বাভাস ছিল সেই অনুযায়ী কিছু হয় নাই। সেন্টমার্টিন তলিয়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছিল। ২৫ ফুট জলোচ্ছ্বাসের কথা ছিল, তা হলে অনেক মৃত্যু ঘটত। দোতলা বাড়িও নিরাপদে থাকত না। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার শতভাগ মানুষকে আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে পেরেছিলাম, যার জন্য হতাহতের খবর পাওয়া যায় নাই।’

সর্বশেষ খবর