শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৬ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয় রাষ্ট্রদূতের পুলিশ এসকর্ট প্রত্যাহার

রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও সৌদি আরব-এ ৬টি দেশের ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের পুলিশ এসকর্ট সুবিধা প্রত্যাহার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের বৈষম্যহীনভাবে একই ধরনের নিরাপত্তা সুবিধা দেওয়ার জন্যই সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে ডিএমপি। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ যারা পুলিশের এসকর্ট সুবিধা পেতেন, সেটি আর পাবেন না। সিদ্ধান্তটি এক সপ্তাহ আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠির মাধ্যমে দূতাবাস ও পুলিশকে জানানো হয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন গণমাধ্যমকে বলেন, সব রাষ্ট্রদূতের অতিরিক্ত সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে। কারণ, উন্নত দেশে এ ধরনের সুবিধা কেউ দেয় না। এ ছাড়া আমাদের দেশে আইনশৃঙ্খলা এত খারাপ না যে, রাস্তায় গুলি করে মেরে ফেলে, শপিং মলে গুলি করে মেরে ফেলে- এরকম আমাদের দেশে অবস্থা নেই। আরেকটি কারণ হলো কৃচ্ছ্রসাধন। অনেক দেশের রাষ্ট্রদূত বাড়তি সুবিধা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন এবং এ কারণে এটি বেশি হয়ে যাচ্ছিল। দিনে দিনে খালি বাড়ছিল। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কেউ যদি চায় এই ফোর্স, তারা ভাড়া করতে পারবে অর্থের বিনিময়ে এবং এটি অন্য দেশেও আছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নত দেশে কোনো রাষ্ট্রদূত পতাকা উড়িয়ে ভ্রমণ করেন না, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য বা ইউরোপের কোনো দেশে। এ বিষয়টিও আমরা প্রত্যাহার করব কিনা তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা চলছে, বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

পুলিশের নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে গতকাল ডিএমপির কূটনৈতিক নিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ইয়াসমিন সাইকা পাশা বলেন, ওই চারটি রাষ্ট্রের পুলিশ এসকর্ট প্রত্যাহার করা হয়েছে। কূটনৈতিক এলাকা থেকে তারা কোথাও যেতে চাইলে এতদিন এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেওয়া হতো তাদের। তবে এসব রাষ্ট্রদূত পরবর্তীতে যদি এই সুবিধা পেতে চান তাহলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে তাদের অনুমতি সাপেক্ষে সেটা পেতে পারেন। হঠাৎ তাদের এসকর্ট সুবিধা প্রত্যাহারের কারণ জানতে চাইলে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ঢাকায় কূটনৈতিক জোনে ৫৩টি রয়েছে। প্রতিটি দেশের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দেখভাল করতে হয়। এতে অনেক ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। এর বাইরে কোনো বিশেষ দেশের জন্য আলাদা করে ফোর্স দেওয়ার মতো বাড়তি পুলিশ নেই।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি : গতরাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য আন্তর্জাতিক আইন এবং প্রচলিত রীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সাধারণত বাংলাদেশ পুলিশ বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তার গুরু দায়িত্বটি সবসময় পালন করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের কয়েক বছর আগের একটি ঘটনা পরবর্তী সময় থেকে কয়েকজন বিদেশি কূটনীতিককে অলিখিতভাবে গাড়িসহ মূলত নিয়মিত ট্রাফিক মুভমেন্টের সহায়তার জন্য বাড়তি কিছু লোকবল দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং নিয়ন্ত্রণাধীন আছে। তাই তাদেরকে বাড়তি নিরাপত্তা প্রদানের কোনো আবশ্যকতা নেই।

পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর কার্যপরিধি বৃদ্ধির জন্য এই বাড়তি সুবিধাটি এখন অব্যাহত রাখা যাচ্ছে না। এখানে স্মরণ করা যেতে পারে যে, পৃথিবীর কোনো দেশেই বাংলাদেশের কোনো রাষ্ট্রদূতকে বাড়তি নিরাপত্তা ও চলাচলের ক্ষেত্রে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো সুবিধা প্রদান করা হয় না।

আরও উল্লেখ করা যায় যে, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু দূতাবাস থেকে একই ধরনের সুবিধার জন্য অনুরোধ করার একটি প্রবণতা আমরা লক্ষ্য করছি। এ লক্ষ্যে তাদের সবার সুবিধার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ আনসার বাহিনীতে একটি চৌকশ দল তৈরি করেছে। বিদেশি কূটনীতিকরা তাদের খরচে এ সুবিধাটি গ্রহণ করতে পারবেন। কোনো দূতাবাস আনসার সদস্যদের এই সুবিধা অব্যাহত রাখতে চাইলে বা বাড়তি সুবিধা নিতে চাইলে আমাদেরকে লিখিতভাবে জানালে আমরা সেই ব্যবস্থাটি গ্রহণ করব। খুব শিগগিরই সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সব বিদেশি দূতাবাসকে জানিয়ে দেওয়া হবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রতিটি দূতাবাসেই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা বিধান অব্যাহত রেখেছেন এবং রাষ্ট্রদূতদের পুলিশ প্রদত্ত গানম্যান নিয়োজিত আছেন। তাই নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা হয়েছে এ ধরনের তথ্য সঠিক নয়।

সর্বশেষ খবর