শিরোনাম
রবিবার, ২১ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

হিসাবরক্ষকের ৯১ গাড়ি, আছে ফ্ল্যাট জমি

মাহবুব মমতাজী

স্ত্রীর নামে দুটি নামসর্বস্ব কোম্পানি খোলেন শাহজালাল সার কারখানার হিসাবরক্ষক খোন্দকার মুহম্মদ ইকবাল (৪২)। কোম্পানি দুটির নামে বেশ কিছু ভুয়া বিল ও রসিদ জমা দিয়ে সার কারখানা প্রকল্প থেকে ৩৮ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। আর এসব জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে। গত বছর র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর ইকবাল-হালিমা দম্পতি সম্পর্কে দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসতে থাকে। সহকারী প্রধান হিসাবরক্ষকের দায়িত্বে থেকে একজন ব্যক্তি পাঁচ বছরে সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এত বিপুল অঙ্কের টাকা ভুয়া বিলের মাধ্যমে কীভাবে হাতিয়ে নিলেন? এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট সব মহলে। এ ঘটনায় ২৬ এপ্রিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) রাজধানীর মতিঝিল থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা করেছে। মামলাটি করেন সিআইডির এসআই সোহানুর রহমান। সিআইডি বলছে, এইচএসসি পাস করে ২০০৫ সালে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) প্রকল্প শাহজালাল সার কারখানায় সহকারী হিসাবরক্ষক পদে চাকরি নিয়েছিলেন ইকবাল। এরপর ১৪ বছরের চাকরিজীবনে তিনি সর্বশেষ ওই কারখানার সহকারী প্রধান হিসাবরক্ষক ছিলেন। এ সময়ে ৯১টি গাড়ি, ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, দুটি ডিপার্টমেন্ট স্টোরসহ বিপুল সম্পদের মালিক হন। তবে ইকবালকে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের শাহজালাল ফার্টিলাইজার থেকে চার বছর আগে চাকরিচ্যুত করা হয়। মানি লন্ডারিং মামলায় সিআইডির অভিযোগ, তারা গত বছরের জুলাই থেকে ১০ মাস অনুসন্ধান করে ইকবালের অপরাধলব্ধ আয়ের তথ্য পেয়েছে। সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সার কারখানার অর্থ যেভাবে আত্মসাৎ করা হয়েছে তা ভয়াবহ। সিআইডির অনুসন্ধানে খোন্দকার ইকবাল ও তার স্ত্রীর অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়ার পরই মামলা করা হয়। এ মামলায় তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে।

জানা যায়, খোন্দকার ইকবালের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। ওই সার কারখানার সহকারী প্রধান হিসাবরক্ষক থাকার সময় সিআইডির পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ইকবালকে চাকরিচ্যুত করে বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ। পরে দুদক ১৬টি মামলা করে। বর্তমানে ইকবাল ও তার স্ত্রী কারাগারে। তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের জুনে ইকবাল ও তার স্ত্রী হালিমা আক্তারকে (৪০) গ্রেফতার করে র‌্যাব। তখন তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়। এরপর এ দম্পতির বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে সিআইডি। অনুসন্ধান শেষে সিআইডির এসআই সোহানুর রহমান মামলায় উল্লেখ করেন, ইকবাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া বিল ও রসিদ জমা দিয়ে বিসিআইসির শাহজালাল ফার্টিলাইজার প্রকল্পের ৩৮ কোটি ৮৩ লাখ ২৭ হাজার ৮৫১ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এসব ভুয়া বিল ও রসিদ তৈরি করা হয়েছে দুটি প্রতিষ্ঠান টিআই ইন্টারন্যাশনাল ও নুসরাত ট্রেডার্সের নামে। দুটি প্রতিষ্ঠানই খোলা হয় হালিমা আক্তারের নামে। এদের মালিকানায় থাকা মাইক্রোবাস, কার, পিকআপসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন টিআই ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে রেন্ট-এ কারের ব্যবসা করে। এ ছাড়া তাদের রাজধানীর শান্তিনগরে কয়েকটি ফ্ল্যাট ও ময়মনসিংহে জমি রয়েছে। ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীতে ‘ওয়ান পয়েন্ট ফার্মা অ্যান্ড ডিপার্টমেন্টাল স্টোর’ নামে তিনটি চেইন শপ আছে। আর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, তাদের মালিকানায় থাকা ৯১টি গাড়ির নিবন্ধন রয়েছে।

 

 

সর্বশেষ খবর