শিরোনাম
সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

লুট করে আমেরিকা নিয়ে যাবেন, সব রেখে দেবে

রাষ্ট্রপক্ষকে হাই কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

সন্ধ্যা নদী দখলমুক্ত করে প্রতিবেদন না দেওয়ায় বরিশালের জেলা প্রশাসকের (ডিসি) প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাই কোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘দেশ এটাই, এখানেই থাকতে হবে। লুট করে আমেরিকা নিয়ে যাবেন, সব রেখে দেবে। তাই পরিবেশটা ঠিক রাখতে বলেন।’ গতকাল বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন। পরে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১৮ জুন দিন ধার্য করেন হাই কোর্ট। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জুলফিয়া আক্তার। শুনানিতে হাই কোর্ট বলেন, ‘প্রতিবেদন দেওয়ার কথা।’ সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘প্রতিবেদনের জন্য আমাদের সময় দিন, যোগাযোগ করি।’ রিটকারী আইনজীবী বলেন, ‘আদেশ নিয়ে ডিসি এক ধরনের খেলা করেন।’ আদালত বলেন, ‘যা দেখবেন তা-ই তো শিখবেন। সচিব যা করেন। আদালত অবমাননার হাজার হাজার মামলা পড়ে আছে।’ মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আমরা তাহলে কোথায় যাব?’ আদালত বলেন, ‘আপনারা কনটেম্পট (আদালত অবমাননা) কোর্টে যান।’ মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আদালতের যদি অস্তিত্ব রাখতে হয় তাহলে সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদের ক্ষমতা (আদালত অবমাননা সংক্রান্ত) সেটা চর্চা করতে হবে। সেটা না করলে আইনের শাসন থাকবে না। জনগণও কোনো বিচার পাবে না। রাষ্ট্র কলাপ্স করলে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের কাছে প্রতিবেদন না দেওয়ার কারণ জানতে চান হাই কোর্ট। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমাদের সর্বশেষ আরও একটু সময় দেওয়া হোক।’ এ সময় মনজিল মোরসেদ পাশ থেকে বলেন, ‘পাঁচ বছর চলছে।’ তখন আদালত বলেন, ‘সাইট টক করছেন কেন? আপনি সিনিয়র আইনজীবী। আপিনও বোঝেন, জানেন দেশের পরিস্থিতি, আদালতের অবস্থা। তারা (রাষ্ট্রপক্ষ) চেষ্টা করে।’ সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শেষবারের মতো সময় চাইলে আদালত বলেন, ‘আপনি যদি ১০০ বছরও সময় নেন লাভ হবে না। দেশ এটাই, এখানেই থাকতে হবে। লুট করে আমেরিকা নিয়ে যাবেন, সব রেখে দেবে। তাই পরিবেশটা ঠিক রাখতে বলেন। ১৮ জুন রাখলাম। ভালো করে বুঝিয়ে বলেন। সম্মানের জায়গাটা ঠিক রাখতে বলবেন। না হলে জবাব দিতে হবে।’ আদালত থেকে বের হয়ে মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘সন্ধ্যা নদীর ভিতরে গুচ্ছগ্রামের জন্য দখল করা হচ্ছিল মাটি ভরাট করে। বিষয়টি আমরা চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। হাই কোর্ট অনেকগুলো নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এর একটিও বাস্তবায়ন হয়নি। তারা প্রতিবেদন না দেওয়ায় পাঁচ বছর পর আদালতে আবেদন করেছিলাম। আজ (গতকাল) প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ছিল। রাষ্ট্রপক্ষ সময় চেয়েছে।’ আদালতের নির্দেশনার বিষয়ে মনজিল মোরসেদ বলেন, গুচ্ছগ্রামের স্থাপনা অপসারণ করে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। যাদের সেখানে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাদের সরকারি জমিতে অন্য কোথাও বরাদ্দ দিতে নির্দেশনা ছিল। বরিশালের যত নদ নদী আছে, সেগুলো যাতে দখল না হয়, সে জন্য মনিটরিং টিম গঠন করতে বলা হয়েছিল। এ ছাড়া অবৈধ মাটিভরাট উচ্ছেদ করতে নির্দেশ ছিল। সেই আদেশ বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। জেলা প্রশাসক প্রতিবারই সময় নিচ্ছেন।

 

সর্বশেষ খবর