শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

চলে গেলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সিরাজুল আলম খান

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলে গেলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সিরাজুল আলম খান

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও স্বনামখ্যাত রাজনৈতিক তাত্ত্বিক সিরাজুল আলম খান মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা নিয়ে গতকাল দুপুর সোয়া ২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২।

ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানান, সিরাজুল আলম খান উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে সংক্রমণসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। গতকাল বেলা দেড়টার দিকে হার্ট অ্যাটাক হয় তাঁর। চিকিৎসকরা শত চেষ্টা করেও তাঁর হৃদযন্ত্র আর স্বাভাবিক করে তুলে পারেননি।

সিরাজুল আলম খানের ভাতিজি ব্যারিস্টার ফারাহ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, শনিবার সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে তাঁর চাচার প্রথম জানাজা হবে। সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে মরদেহ সরাসরি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে পৈতৃক বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে তৃতীয় জানাজা শেষে বাদ আসর আলীপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে পিতা-মাতার কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হবে।

তিনি বলেন, মৃত্যুর আগে সিরাজুল আলম খান শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করে গিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘মৃত্যুর পরে আমাকে কোথাও রাখার দরকার নেই। কোথাও যেন ডিসপ্লে করা না হয়। আমার জন্য হাজার হাজার ফুল আসার দরকার নেই। আমি দেশটা স্বাধীন করতে চেয়েছিলাম। স্বাধীন করতে পেরেছি। সেটাই আমার বড় অর্জন।’ সিরাজুল আলম খানের ছোট ভাই ফেরদৌস আলম খান গণমাধ্যমকে বলেন, দাদাভাই সিরাজুল আলম খান সব সময় প্রচারণার বাইরে থেকেছেন। তিনি বলে গেছেন তাকে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা না হয়। এমনকি দাফনের সময় তাঁকে কাফনের বদলে মায়ের কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দাফন করার ইচ্ছার কথা জানিয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন, মায়ের শাড়িটাই আমার কাছে পতাকা। এ পতাকা নিয়েই আমি চলে যেতে চাই। গত ৭ মে থেকে শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল সিরাজুল আলম খানের। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১ জুন কেবিন থেকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাতে তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। গতকাল সকাল থেকে অক্সিজেনের স্তর দ্রুত নিম্নগামী হতে থাকে এবং রক্তচাপ বেড়ে যায়। বুদ্ধিজীবী মহলে রাজনীতির ‘রহস্যপুরুষ’ নামে পরিচিত সিরাজুল আলম খান দুপুরের পর শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়ে আসা চিরকুমার সিরাজুল আলম খান ঢাকার কলাবাগানে ভাইদের সঙ্গেই থাকতেন। ষাটের দশকের প্রথমার্ধে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে নিউক্লিয়াস গড়ে তোলার অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক সংগঠন ‘জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল’-জাসদ আত্মপ্রকাশ করে। তিনি কখনো জাসদের নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের পরামর্শক হিসেবে তাঁদের কাছে ‘তাত্ত্বিক গুরু’র ভূমিকা পালন করেন। জাসদের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী তাঁকে ‘দাদাভাই’ ডাকতেন। তিনি কখনো জনসম্মুখে না এসে নেপথ্যে থেকে তৎপরতা চালাতেন; সেজন্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্যপুরুষ’ বলে উল্লিখিত হতেন। সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর সংবাদ শুনে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুসহ দলটির নেতারা ঢামেক হাসপাতালে ছুটে যান। দলটি সিরাজুল আলম খানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আজ দেশব্যাপী শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে।

শোক : সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে বিভিন্ন মহল। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এক শোকবার্তায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, গণফোরাম সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম ও যুগ্ম আহ্বায়ক আ ন ম সাইফুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ, ইসলামিক গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা, বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মওলানা জিয়াউল হাসান প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর