রবিবার, ১১ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

ফুটপাত বানাতে ব্যর্থ দুই সিটি

♦ ঢাকায় নেই পথচারীবান্ধব ফুটপাত ♦ হকার ও ব্যবসায়ীদের দখলে

হাসান ইমন

ফুটপাত বানাতে ব্যর্থ দুই সিটি

রাস্তার পাশে নেই ফুটপাত। সেই সঙ্গে ফেলে রাখা হয়েছে ময়লা-আবর্জনা। বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি হয় আরও ভয়াবহ। পথচারীদের চলতে হয় রীতিমতো যুদ্ধ করে। রাজধানীর উত্তরা থেকে গতকাল তোলা ছবি -জয়ীতা রায়

রাজধানীতে সড়কে প্রয়োজনীয় ২ হাজার ২৪৩ কিলোমিটার ফুটপাতের বিপরীতে রয়েছে মাত্র ৬৮১ কিলোমিটার। যান্ত্রিক নগরে নিরাপদে হাঁটার একমাত্র মাধ্যম এই ফুটপাতের বেশির ভাগই অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন হকার ও ছিন্নমূল মানুষ। এর বাইরে কিছু অংশ এবড়োখেবড়ো, ভাঙাচোরা অথবা খোলা নর্দমায় পরিপূর্ণ। সব মিলিয়ে নগরীর এক-তৃতীয়াংশের বেশি সড়কের নেই ফুটপাত। সরেজমিনে পরিদর্শন এবং নগরের রাজপথ ও ফুটপাত বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, জনসংখ্যার ভারে নুয়ে পড়া ঢাকায় মোট ৬৮১ কিলোমিটার ফুটপাত রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে ৪৫০ ও দক্ষিণের ২৩১ কিলোমিটার ফুটপাত। একই সঙ্গে নগরীতে সড়ক রয়েছে ২ হাজার ২৪৩ কিলোমিটার। যার মধ্যে ঢাকা উত্তরে ১ হাজার ২৫০ ও ঢাকা দক্ষিণের ৯৯৩ কিলোমিটার। এ ছাড়া ঢাকার ৭০ শতাংশেরও বেশি সড়কে কোনো ফুটপাতই নেই। এদিকে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের মেয়র গত তিন বছরে নতুন মাত্র ১৪৯ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ করেছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর ১১০ ও ঢাকা দক্ষিণ ৩৯ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ করে। এসবের পরেও যে ফুটপাত রয়েছে, তার বেশির ভাগই চলাচলের অনুপযোগী।

এদিকে রাজধানীর ফুটপাতগুলোর বেশির ভাগই পথচারীদের অধিকারে নেই। নানাভাবে অবৈধ দখলে চলে গেছে। নগরের ফুটপাতে গড়ে ওঠেছে নানা পসরার ভ্রাম্যমাণ দোকান, ছিন্নমূল মানুষের পলিথিনের ছাপরাঘর ও রিকশার অস্থায়ী গ্যারেজ। গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে ফুটপাতের একটি অংশ। আর পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় হাঁটছেন। রাজধানীর সদরঘাট, ফুলবাড়িয়া, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, পল্টন, জিপিও, বায়তুল মোকাররম, নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, ফার্মগেট, মগবাজার, মালিবাগ, মৌচাক, কাকরাইল, বাড্ডা, বিমানবন্দর, উত্তরা, মিরপুর, গাবতলী ও মোহাম্মদপুরে এরকম চিত্র দেখা যায়। আর এই ফুটপাতগুলোর অবৈধ ব্যবহারে পথচারী চলাচল রীতিমতো দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও দুই মেয়রের নির্বাচনী ইশতেহারে সচল ঢাকা গড়ার অঙ্গীকার ছিল। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আতিকুল ইসলামের নির্বাচনী ইশতেহারের স্লোগান ছিল সচল ঢাকা। এখানে ফুটপাত দখলমুক্ত করে এলাকাভিত্তিক পথচারীবান্ধব ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের জন্য ফুটপাত নেটওয়ার্ক তৈরি করা। এখন পর্যন্ত গত তিন বছরে বেশির ভাগ ফুটপাতই অবৈধ দখল মুক্ত হয়নি। এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়রের নির্বাচনী ইশতেহারেও স্লোগান ছিল সচল ঢাকা। অথচ সেখানে ফুটপাত তৈরি ও পথচারীবান্ধব ফুটপাত করার কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। তবে যানজট কমাতে কিছু সড়কে চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও সু-ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কিছু স্থানে দ্রুত গতির যানবাহন, কিছু রাস্তায় ধীর গতির যানবাহন, আবার কিছু রাস্তায় শুধু মানুষ হাঁটার ব্যবস্থা চালু করেছে।

নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, একটি নগরকে আদর্শ নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে মানুষের নিরাপদ হাঁটার ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশে তা পুরোই ব্যতিক্রম। রাজধানীতে সাধারণ মানুষের হাঁটার ফুটপাত যেন একধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আধুনিক নগরী গড়ে তোলা সিটি করপোরেশনের প্রধান দায়িত্ব। দুই করপোরেশনের উচিত, আধুনিক নগরী গড়ে তোলার জন্য প্রথমে রাজধানীর সড়কের পাশে থাকা প্রতিটি ফুটপাত দখলমুক্ত করা। এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, যে শহরে জনগণ আনন্দের সঙ্গে হাঁটতে পারে, সেটি হচ্ছে একটি সভ্য শহর। কিন্তু আমাদের শহরে বসবাসকারীরা কি সে সুবিধা পাচ্ছেন? শহরের প্রায় সব ফুটপাতে এখন দখল বাণিজ্য চলছে। ঢাকার দখল হওয়া ফুটপাত শুধু উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব নয়। দখলমুক্ত করার পর ফের যাতে বেদখল না হয় সেজন্য নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ফুটপাত নির্মাণে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে গুলিস্তানে লাল, হলুদ ও সবুজ চিহ্নিত স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে লাল চিহ্নিত স্থানগুলোতে হকার বসতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, নতুন সড়ক নির্মাণের সঙ্গে আমরা হাঁটার পথ নির্মাণ করছি। পাশাপাশি সড়ক সংস্কারের ক্ষেত্রে যেসব অপ্রস্থ ফুটপাতগুলো প্রশস্ত করছি। আর পথচারীরা যেন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারেন সে জন্য পথচারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে কাজ করছি।

সর্বশেষ খবর