রবিবার, ১১ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

অপরিশোধিত ঋণ ব্যাংকিং খাতের বড় সমস্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

অপরিশোধিত ঋণ ব্যাংকিং খাতের বড় সমস্যা

ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, এবারের বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী পাচারকৃত টাকা দেশে ফেরত না আসা প্রসঙ্গে টাকা পাচার না হওয়ার যে মন্তব্য করেছেন তা সঠিক নয়। ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাবে অপরিশোধিত ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। এটাই এখন এ খাতের বড় সমস্যা। এ অবস্থার উত্তরণ না হলে আমানতকারীদের আস্থাহীনতা বাড়বে। জাতীয় সংসদে সরকারি দলের একক আধিপত্য থাকায় বাজেট নিয়ে কার্যকর আলোচনা হয় না। এ ছাড়া বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় জনঅংশগ্রহণ সন্তোষজনক নয়। ঢাকার এফডিসিতে আয়োজিত ছায়া সংসদে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এসব কথা বলেন। ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ বাজেটে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) টার্গেট ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হলেও তা বাস্তবতা বিবর্জিত। বাংলাদেশে কর আহরণের পরিমাণ বিশ্বের সর্বনিম্ন। তাই অধিক কর আহরণের জন্য সুস্পষ্ট পরিকল্পনা দরকার। বিদ্যুৎ, গ্যাসের সমস্যা দূর করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ব্যাহত হতে পারে। তবে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা এবারের বাজেটে তেমন প্রতিফলন ঘটেনি। আয় করযোগ্য সীমার নিচে থাকা প্রত্যেক টিআইএনধারীকে ২ হাজার টাকা কর পরিশোধের বিধান মানুষকে টিআইএন গ্রহণ ও কর প্রদানে অনুৎসাহী করতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে অর্থনৈতিক সংকট সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলে সেটি মুদ্রাস্ফীতি এবং মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে। দেশে বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের কষ্ট হলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এবারের বাজেটে সুস্পষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা নেই। ক্রমবর্ধমান আয় বৈষম্যের কারণে সামাজিক অসন্তোষ তৈরি হতে পারে। রিজার্ভের পতনের কারণে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে, ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। আমাদের রিজার্ভের হিসাব অতিরঞ্জিত, যা আন্তর্জাতিক মানের নয়। তিনি আরও বলেন, বাজেটে সরকারের ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার যে বিশাল আকারের ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তা মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেবে। এ ছাড়া ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে ব্যক্তি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে যাবে। ফলে  বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। বিদ্যমান ডলার সংকট ও আমদানিতে বিধিনিষেধ নতুন অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণ ব্যাহত করবে। আর্থিক খাতের সুশাসনের অভাব ও দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে না পারায় প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়বে। সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা নির্বাচনী বছরের বাজেটে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। প্রস্তাবিত বাজেটের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের চেষ্টা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে জনজীবনে এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সরকার প্রস্তাবিত বাজেটে যথেষ্ট সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর