ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক বাংলাদেশের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে ভ্রমণ অনুমোদন বা ট্রাভেল পাস দেওয়ার বিষয়ে আসামের গৌহাটির বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে এই ট্রাভেল পাসের বিষয়টি সম্পর্কে বাংলাদেশ মিশন এখনো তাকে কিছু জানায়নি বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, গণমাধ্যমে এই খবরটি জানতে পেরেছেন। শনিবার ও রবিবার বন্ধ থাকায় খোঁজ নেওয়া সম্ভব হয়নি। আজ সোমবার গৌহাটি হাইকমিশনে তিনি খোঁজ নেবেন। ট্রাভেল পাস হাতে পাওয়ার পর ভারতীয় আইনি প্রক্রিয়া শেষে সিদ্ধান্ত নেবেন কবে দেশে ফিরবেন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে দ্রুতই দেশে ফিরবেন বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমেদ।
শিলংয়ে অবসর সময় কীভাবে কাটছে- জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বই পড়ে ও ধর্ম-কর্ম করেই সময় কাটছে। মামলা চলাকালীন শিলংয়ের বাইরে যেতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এখন সেই বিধিনিষেধ নেই। কিন্তু ‘লিগ্যাল ডকুমেন্ট’ না থাকায় শিলংয়ের বাইরে কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই।
‘দল ও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয়’ জানিয়ে সালাহউদ্দিন জানান, ফোনে দেশে অবস্থানরত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। অনেকে ফোন করে তাঁর খোঁজখবর নেন। তিনিও প্রয়োজনবোধে ফোন দেন। এ ছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সভায় তিনি জুম অ্যাপসের মাধ্যমে অংশ নেন।দেশে ফেরানোর ব্যাপারে দলের ভূমিকা প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দল থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। দলের নেতা-কর্মীরাও তার ফেরার অপেক্ষায় আছেন। জানা গেছে, ভারতে অনুপ্রবেশ মামলায় মেঘালয়ের শিলং জজ কোর্ট থেকে খালাস পাওয়ায় পর দেশে ফেরার জন্য গুয়াহাটির বাংলাদেশ মিশনে ট্রাভেল পাসের জন্য আবেদন করেন বর্তমানে মেঘালয়ের রাজধানী শিলং অবস্থান করা বিএনপির এই নেতা। গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি উইংয়ের মহাপরিচালক রফিকুল ইসলাম সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে জানান, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের দেশে ফেরার আবেদন মঞ্জুর করেছে আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ভারতের আসাম রাজ্যের গুয়াহাটিতে আমাদের মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তিনি যে কোনো সময় বাংলাদেশে আসতে পারবেন। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতে ‘নিখোঁজ’ হন সালাহউদ্দিন আহমেদ। তখন তিনি দলের যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছিলেন। সে সময় তার পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, রাজধানীর উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ১৩/বি নম্বর সড়কে ৪৯/বি নম্বর বাড়ির, ২/বি নম্বর ফ্ল্যাট থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে সালাহউদ্দিনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর দুই মাস নিখোঁজ থাকার পর ভারতের মেঘালয়ের শিলং শহরে তাকে উদ্ধার করে সে দেশের নিরাপত্তা বাহিনী। এরপর সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে দেশটিতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে মামলা হয়। প্রায় সাড়ে তিন বছর মামলার কার্যক্রম চলার পর ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হয়। এরপর ওই বছরের ২৬ অক্টোবর নির্দোষ হিসেবে রায় পান সালাহউদ্দিন আহমেদ। পরে আবার সরকারপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। আদালত পরে তাকে বেকসুর খালাস দেয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের শিলংয়ের জজ কোর্টের রায়ে তিনি বেকসুর খালাস পান।