সোমবার, ১২ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

জামায়াতকে নিয়ে নীতির পরিবর্তন হয়নি : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ বছর পর জামায়াতে ইসলামীকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ায় আওয়ামী লীগের নীতির পরিবর্তন হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। গতকাল রাজধানীর রাজারবাগে হাইওয়ে পুলিশের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জামায়াত অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। দেশের অনেক অনিবন্ধিত দলই বিভিন্ন প্রোগ্রাম করে। অনিবন্ধিত            রাজনৈতিক দল তাদের সভা-সমাবেশ ইনডোরে করতেই পারে। তারা ইনডোরে সমাবেশ করতে চেয়েছিল, ডিএমপি কমিশনার সেটা যাচাই করে অনুমতি দিয়েছেন।

সাধারণত জামায়াত জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে তাদের সমাবেশ করে থাকে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এসব সমাবেশে অনেক সময় আমরা দেখেছি যে তারা যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে। এসব কিছু মাথায় রেখেই তাদের ইনডোর সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। জামায়াতকে অনুমতি দেওয়ায় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নীতির কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ইনডোরে তাদের সভা সমাবেশ করতেই পারে।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের ২ হাজার ৯৯১ কিলোমিটার মহাসড়কে মানুষের চলাচলের মানোন্নয়ন, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণ, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা, চালক-হেলপারসহ সড়ক ব্যবহারকারীদের দুর্ঘটনা রোধে সচেতন করার ক্ষেত্রে হাইওয়ে পুলিশ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এবারের ঈদুল ফিতরে মানুষের নিরাপদে ঘরে ফেরা এবং মহাসড়কে যানজট নিরসন, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড রোধে হাইওয়ে পুলিশ প্রশংসনীয় অবদান রেখেছে। দেশের আঞ্চলিক ও জাতীয় মহাসড়কে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা হাইওয়ে পুলিশের অন্যতম দায়িত্ব। এ ছাড়া মহাসড়কের সব অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা বন্ধ করার পাশাপাশি যানজট, দুর্ঘটনা কমিয়ে জনগণকে কাক্সিক্ষত সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে হাইওয়ে পুলিশে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ভিশন-২০২১, রূপকল্প-২০৪১, এসডিজি বাস্তবায়ন এবং প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন সামনে রেখে বর্তমান সরকার যোগাযোগব্যবস্থায় গত এক দশকে দৃশ্যমান উন্নয়ন সাধন করেছে। এর মধ্যে পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, উড়ালসড়ক, মেরিন ড্রাইভসহ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে, চার লেনবিশিষ্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক উল্লেখযোগ্য।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান বলেন, ২০১৫ সালে বিএনপি এবং জামায়াত পেট্রলবোমা দিয়ে আগুনসন্ত্রাস করেছিল। তখন মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে, যানবাহন পোড়ানো হয়েছে। পরিবহন শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। তিনি এ ধরনের পরিস্থিতির যেন আর মুখোমুখি হতে না হয় সে জন্য সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমদ বলেন, অনেক সময় চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে অনেক মূল্যবান জীবন ও সম্পদহানি হয়। তিনি বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচলও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। আমাদের এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি বলেন, দেশে ২১ হাজার কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এর নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য হাইওয়ে পুলিশের সরঞ্জাম ও জনবল বাড়ানো প্রয়োজন। তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট মালিক, স্মার্ট শ্রমিক ও স্মার্ট পরিবহন গড়ে তুলতে হবে। তিনি পরিবহন খাতের সব অরাজক পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হাইওয়ে পুলিশকে স্মার্ট বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে, যাতে তারা কুইক রেসপন্স করতে পারে। তিনি বলেন, হাইওয়ে পুলিশে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সড়কও ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া হাইওয়ে পুলিশের সদস্যদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।

সভাপতির বক্তব্যে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, হাইওয়ে পুলিশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে মহাসড়কের শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ফলে মহাসড়ককেন্দ্রিক চোরাচালান, মানব পাচার, মাদকদ্রব্য পরিবহন, রপ্তানিপণ্য চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। গত ঈদুল ফিতরের সময় পুলিশের সদস্যরা এবং হাইওয়ে পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশের প্রতিটি সড়ক, মহাসড়ক সচল রেখেছে। ফলে মানুষ নির্বিঘ্নে স্বস্তিতে ঈদে বাড়ি যেতে পেরেছে।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পুলিশপ্রধান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক অনুগ্রহে হাইওয়ে পুলিশের জন্য নতুন থানা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সার্বক্ষণিক নজরদারির লক্ষ্যে ‘হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটার এলাকার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ক্যামেরা ও ডেটা সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান। তিনি বলেন, মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি ও মাদক দমনসহ দুর্ঘটনা রোধে হাইওয়ে পুলিশের সব সদস্য অত্যন্ত আন্তরিকতা, দক্ষতা ও পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। পাশাপাশি বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক ও আত্মমর্যাদাশীল ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণেও কাজ করে যাচ্ছে। অনুষ্ঠানে ‘সড়ক সারথি’ স্মরণিকা এবং ‘তদন্ত ম্যানুয়েল’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এ ছাড়া ‘হ্যালো এইচপি’ মোবাইল অ্যাপ উদ্বোধন করা হয়। হাইওয়ে পুলিশের কার্যক্রম সম্পর্কে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানকে স্মৃতিময় করে রাখতে কেক কাটা হয়। দায়িত্ব পালনকালে জীবন উৎসর্গকারী হাইওয়ে পুলিশের শহীদ কনস্টেবল রাব্বী ভূঁইয়ার স্ত্রী ও সন্তানকে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা স্মারক ও উপহার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে পরিবহন মালিক-শ্রমিক এবং পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর