শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৩ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

দুই যুগ ধরে উজাড় বন নীরব বন বিভাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুই যুগ ধরে উজাড় বন নীরব বন বিভাগ

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার সলিমপুর মৌজার ফৌজদারহাট পোর্ট লিংক রোড সংলগ্ন আনুমানিক ১৯৪ একর খাসজমিতে প্রচুর গাছপালা ছিল। গত প্রায় দুই যুগে গাছ কেটে উজাড় করেছে দুর্বৃত্তরা। একই সঙ্গে তারা মাটি কেটে ও বিক্রি করে সৃষ্টি করেছে জলাধার। একটি অংশে পার্ক থাকলেও সন্ধ্যার পর চলত নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ আর মাদকের ব্যবসা। দুই যুগ ধরে এমন দৃশ্য সত্ত্বেও বন বিভাগ উপগ্রহ থেকে নেওয়া গুগল আর্থ-এর ছবি বিশ্লেষণ করে এবং সরেজমিন স্থানীয় প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

জানা যায়, চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি অবৈধ দখলদার ও মাদক ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করে পুরো জায়গার নিয়ন্ত্রণে নেয় জেলা প্রশাসন। তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ১৯৪ একর খাসজমিতে ২০০০ সালে মাত্র একটি জলাধার ছিল। কিন্তু এখন সেখানে জলাধার ১২টি। অবৈধভাবে কোটি কোটি টন মাটি কেটে ও বিক্রি করে পাওয়া টাকায় বানানো হয় শুকতারা পার্ক, যার অভ্যন্তরে সন্ধ্যার পরে চলত নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ ও মাদকের ব্যবসা। গুগল আর্থের ইমেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ওই ১৯৪ একর খাস জায়গায় ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে প্রচুর গাছপালা ছিল; ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে দেখা যায় ওসব গাছের মাত্র ২০ ভাগ রয়েছে। অর্থাৎ তাই প্রশ্ন ওঠে, ২০০৮-২০০৯ এর শীত মৌসুমে সেখান থেকে প্রচুর গাছ কাটা হলে বন বিভাগ কী পদক্ষেপ নিয়েছে? এরপর আবারও বনায়ন করেছে বন বিভাগ এবং প্রাকৃতিক কারণে কিছুটা বন সৃষ্টি হয়। ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে কিছু গাছপালা থাকলেও ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে প্রায় সম্পূর্ণ বন নিধন করা হয়েছে। এরপর ২০১৫ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে পুনরায় বন সৃষ্টি হলেও ২০১৬ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে আবারও ফাঁকা হয়েছে এ বনভূমি। অর্থাৎ প্রায় প্রতি শীতেই বনদস্যু এবং বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বন উজাড় করা হয়েছে। কিন্তু বন বিভাগ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

এরপর থেকে ২০২২ সালের শীতকাল পর্যন্ত অবিরত জঙ্গল উজাড় করে অবৈধভাবে গভীর পুকুর সৃষ্টি করে মাছচাষ এবং শুকতারা পার্ক তৈরি করা হলেও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের টনক নড়েনি। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের দখলে আসার পর থেকেই ওই জায়গাকে চট্টগ্রামের জনসাধারণের জন্য একটি দৃষ্টিনন্দন পার্ক তৈরির কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু এখানে হঠাৎ করে সোচ্চার বন বিভাগ। তাদের দাবি, ওই বন বিভাগের জমি থেকে গাছ কাটা হয়েছে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলীর ওই অংশে সরকারি জায়গায় তিনটি ইটভাটা অবৈধভাবে গাছপালা কেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেছে, মাটি কেটে ইটভাটার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। বন বিভাগ তখন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি। ২০২০ সালে জেলা প্রশাসনের তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল আলম অভিযান করে ইটভাটাগুলো উচ্ছেদ করেছিলেন।

এ বিষয়ে সীতাকুন্ডে র উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, বিগত ২০১৯ সালের দিয়ারা জরিপে ওই ১৯৪ একর জমি সম্পূর্ণ সরকারের অধীনে অর্থাৎ ১ নম্বর খাস খতিয়ানে লিপিবদ্ধ রয়েছে। ১ নম্বর খাস খতিয়ানের জমির এখতিয়ার জেলা প্রশাসকের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাকিব হাসান বলেন, জেলা প্রশাসনের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত। আমাদের কাজে বন বিভাগের আপত্তি থাকলে তারা আসতে পারতেন, পত্র মারফত যোগাযোগ করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তারা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় যেভাবে জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন তা বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয়ে ব্যাঘাত ঘটাবে এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকা  বাধাগ্রস্ত হবে। আমাদের জেলা প্রশাসন সব সময়ই পরিবেশবান্ধব। ২০২৩ সালে চট্টগ্রামে ২৩ লাখ পরিবেশবান্ধব বৃক্ষ রোপণের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী শনিবার ডিসি পার্কে ১ হাজার বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হবে।

এ বিষয়ে সীতাকুন্ডে র সংসদ সদস্য দিদারুল আলম বলেন, জেলা প্রশাসনের পার্ক নির্মাণের বিষয়টি সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। পার্ক নির্মাণ হলে চট্টগ্রামের মানুষের নিঃশ্বাস ফেলার একটি জায়গা তৈরি হবে। উল্লেখ্য, সীতাকু  বনের বিট অফিসের পাশেই সরকারি শত শত সেগুন গাছ কেটে দুষ্কৃতকারীরা বিক্রি করলেও বনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে আসার পর সীতাকুন্ডে র সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম অভিযান চালিয়ে সেগুনগাছ ভর্তি ট্রাক জব্দ করেন। পরে গত বছরের ২৯ অক্টোবর ‘বনের গাছ কেটে পাচারের চেষ্টা, রহস্যজনক কারণে নীরব বন কর্মকর্তারা, প্রশাসনের অভিযানে গাছভর্তি ট্রাক জব্দ’ শিরোনামে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে খবর প্রচারিত হয়। জানা গেছে, এরপর থেকেই জেলা প্রশাসনের কাছে বন বিভাগের আপত্তির সূত্রপাত।

 

 

সর্বশেষ খবর