শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৩ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

স্বস্তি মিলছে বিদ্যুতে

লোডশেডিং সামাল দিতে সরকারি উদ্যোগ, সেই সঙ্গে কমেছে তাপমাত্রা

জিন্নাতুন নূর

স্বস্তি মিলছে বিদ্যুতে

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে চার-পাঁচ দিন ধরে লোডশেডিং পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ঢাকায় কয়েক দিন ধরে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকায় লোডশেডিংও হয়নি। এতে গ্রাহক স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। আর ঢাকার বাইরে কোনো কোনো এলাকায় স্বল্প সময়ের জন্য লোডশেডিং হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, হঠাৎ করে বিদ্যুৎ ঘাটতির পরিমাণ চার অঙ্কের ঘর থেকে তিন অঙ্কে নেমে এসেছে। অথচ কয়েক দিন আগেও ঢাকায় চার-পাঁচ ঘণ্টা এবং গ্রামাঞ্চলে ১০ ঘণ্টার ওপর লোডশেডিং হতো। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি হওয়ায় এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ বিদ্যুৎ বিভাগের চেষ্টায় লোডশেডিং পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। গ্রামাঞ্চলে এখন সর্বোচ্চ ৩৫০ মেগাওয়াটের মতো লোডশেডিং করা হচ্ছে। আর রাজধানীতে ৮ জুনের পর থেকে লোডশেডিং নেই বললেই চলে। ঢাকার দুই বিতরণ কোম্পানি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ (পিজিসিবি)-এর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও ঢাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৮ জুন থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা প্রায় লোডশেডিংমুক্ত। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও জানান, বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কমে আসায় লোডশেডিং পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এখন পল্লী বিদ্যুতের এলাকাগুলোয় মোট চাহিদার ৮ থেকে ১০ শতাংশ লোডশেডিং হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও যেখানে গ্রামাঞ্চলে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘাটতি ছিল দুই থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াট, বর্তমানে তা ১৫০ থেকে ৩৫০ মেগাওয়াটে নেমে এসেছে।

পিডিবিসূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত দিনের বেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। আর সরবরাহ করা হয় ১১ হাজার ১২৮ মেগাওয়াট। লোডশেডিং হয় ৩৫৫ মেগাওয়াট। এর আগে ১১ জুন বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১২ হাজার ৫২৬ মেগাওয়াট আর সরবরাহ করা হয় ১২ হাজার ৩৫৬ মেগাওয়াট। লোডশেডিং হয় ১৬২ মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, লোডশেডিং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে। এখন কয়লা আসছে, গ্যাসও আসছে। বিদ্যুৎও ঠিক হয়ে যাবে। ডিপিডিসি ও ডেসকোর কর্মকর্তারা জানান, কয়েক দিন আগেও ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে গ্রাহক অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু কয়েক দিন ধরে তারা চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়ায় কোথাও লোডশেডিং করতে হচ্ছে না। তারা জানান, কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত হওয়ায় তাপমাত্রা কম থাকায় বিদ্যুতের চাহিদাও কম। ফলে লোডশেডিং প্রায় শূন্যের কোঠায়। এ সময়ে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় আড়াই থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াট কমেছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-এর পরিচালক (জনসংযোগ) মো. শামীম হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বৃষ্টির জন্য তাপমাত্রা কমে আসায় লোডশেডিং কমে এসেছে। ঢাকায় বর্তমানে লোডশেডিং হচ্ছে না আর ঢাকার বাইরে সার্বিকভাবে সর্বোচ্চ ১৫০ থেকে ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে।

ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কয়েক দিন ধরে আমাদের আওতাভুক্ত এলাকাগুলো একেবারে লোডশেডিংমুক্ত। গতকাল আমাদের চাহিদা ছিল ১ হাজার ৬৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের। আগের দিনও ১ হাজার ৬৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা ছিল। রাতের বেলা এ চাহিদা আরও কমে যায়। তিনি জানান, চাহিদার সব বিদ্যুৎই আমরা পাচ্ছি, ফলে কোনো লোডশেডিং হচ্ছে না। বিদ্যুৎ বিভাগের গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার পরও আমরা ১৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি। এখানে আমরা প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি। বাড়তি এ বিদ্যুৎ এসেছে লোডশেডিং মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে। বিশেষ করে আদানি থেকে আগে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। এখন আদানির দুটি ইউনিট থেকে আমরা ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছি। এখানে অতিরিক্ত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্যাস থেকে আগে ৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। এখন সেখানে উৎপাদন বৃদ্ধি করে ৬ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। এখানেও গড়ে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফার্নেস তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয়ও উৎপাদন একটু একটু করে বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুধু আবহাওয়া অনুকূলে ছিল বলেই যে লোডশেডিং কমেছে এমন নয়, বরং বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করে লোডশেডিং পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির যে উন্নতি হয়েছে তা সামনে আরও উন্নত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। জানা যায়, বাঁশখালীর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে কিছুদিন আগে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাওয়ার আগে পরীক্ষামূলকভাবে জাতীয় গ্রিডে ৩০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিয়েছে। সরকার এ বিদ্যুৎ বোনাস হিসেবে পেয়েছে। জানা যায়, কয়লার অভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ থাকলেও এর কয়লাও দ্রুত এসে যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, এ জুনেই কেন্দ্রটি আবার পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদনে যেতে পারবে। অন্যদিকে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লাও এখন আসার অপেক্ষায়। কয়লা পাওয়ার পর চলতি মাসের ২৫ তারিখের মধ্যে কেন্দ্রটি আবার উৎপাদনে যেতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর