মঙ্গলবার, ১৩ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা
নেতা-কর্মীদের শেখ হাসিনা

আবার ক্ষমতায় যেতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

আবার ক্ষমতায় যেতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, সামনে কঠিন নির্বাচন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আওয়ামী লীগ বাদে অন্য কেউ ক্ষমতায় এলে উন্নয়ন এবং দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।

গতকাল দুপুরে গণভবনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং ঢাকা-১৭ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয়, জনগণের জীবনমান উন্নত হয়, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বিদেশে বাংলাদেশের সম্মান মর্যাদা বেড়েছে অনেক। তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত যে পরিবর্তনটা দৃশ্যমান হয়েছে, আওয়ামী লীগ ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় আছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। আমরা মানুষের মন জয় করেই ক্ষমতায় এসেছি। আর ক্ষমতায় এসে ধারাবাহিক উন্নয়ন করে যাচ্ছি।

সরকার প্রতিটি জেলায় পরিকল্পিত উন্নয়ন করেছে মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর ’৭৫ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত যে অন্যায়-অত্যাচার করা হয়েছে, আমরা তার প্রতিশোধ নেই নাই। আমরা অন্যায়ের জবাব দিচ্ছি উন্নয়ন করে। আজ গ্রামে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা একেবারে নাই বললেই চলে। তিনি বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে না পারলে গত সাড়ে ১৪ বছরে আমরা যে উন্নয়ন করেছি তার সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ সরকার যে উন্নয়ন করেছে, সেগুলো বেশি করে প্রচার করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের তিনি নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে উন্নয়ন যেন অব্যাহত থাকে এবং আওয়ামী লীগকে যে আবারও ক্ষমতায় আনা দরকার সেটাও মানুষের কাছে তুলে ধরতে নেতা-কর্মীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। বলেন, উন্নয়নের কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি মানুষের আস্থাবিশ্বাস অর্জন করতে হবে।

সামনে জাতীয় নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত দলকে আরও শক্তিশালী, সুসংগঠিত করতে হবে। দলের দুঃসময়ের নেতা-কর্মীরা যেন অবহেলিত না হয় সে বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। তিনি বলেন, দুঃসময়ের নেতা-কর্মীরাই দলের দুঃসময়ে এবং যে  কোনো প্রয়োজনে পাশে থাকবে। আমার একমাত্র শক্তি আমার সংগঠন। সাংগঠনিক শক্তি না থাকলে বড় কোনো অর্জন সম্ভব হয় না। তাই দলকে সুসংগঠিত করতে হবে তৃণমূল পর্যায়ে থেকে। বাংলাদেশকে নিয়ে নানা চক্রান্ত শুরু হয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই চায় না আমাদের দেশটি এগিয়ে যাক। এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক চক্রান্তের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের উসকানিতে বিএনপি আজ লাফাচ্ছে তারা কিন্তু তাদের ক্ষমতায় বসাবে না। তারা শুধু তাদের ব্যবহার করবে। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে বারবার ধ্বংস করার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সে চেষ্টা কখনোই সফল হয়নি। আওয়ামী লীগ আজ মানুষের মন জয় করে শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। দলকে লীগকে আরও শক্তিশালী করা দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাবা-মা-ভাই সবাইকে হারানোর পর আওয়ামী লীগই আমার পরিবার। বাংলাদেশের জনগণ আমার সমস্ত শক্তি। তারাই আমার একমাত্র ভরসা। তাদের জীবনমান উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। করোনা মহামারির মধ্যে আওয়ামী লীগই একমাত্র দল যারা সবচেয়ে বেশি মানুষের পাশে থেকে অবদান রেখেছে। ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাতকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরাফাতকে আপনাদের হাতে তুলে দিলাম, নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই মিলে কাজ করবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ কখনো ভোটারবিহীন নির্বাচন করেনি। ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছে খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেসবাউল হক সাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, ঢাকা-১৭ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ওয়াকিল উদ্দিন, কাদের খান, চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ, দলীয় প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত (মোহাম্মদ এ আরাফাত)-সহ অন্যান্য মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং ঢাকা-১৭ আসনের থানা, ওয়ার্ড সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন।

আরাফাতকে মনোনয়ন দেওয়ার কারণ : বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, সূচনা বক্তব্য শেষে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ আসন থেকে ২২ জন মনোনয়ন চেয়েছিলেন। সবাই যোগ্য ব্যক্তি। অনেকেই বীর মুক্তিযোদ্ধা, দলের দুঃসময়ের কান্ডারি। কাদের খান, ওয়াকিল সাহেব তো আমাদের সঙ্গে আছেনই। তারাই দুর্দিনে দলটাকে ধরে রেখেছেন। কিন্তু নানা কারণে আমরা মনোনয়ন দিতে পারিনি। মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে মনোনয়ন দিয়েছি, কারণ হলো, সে তরুণ। ভালো বক্তা। তাকে দিয়ে অনেক কাজ করাই। নির্বাচনী এলাকাটি কূটনৈতিক জোন। সব দিক বিবেচনা করেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যাদের দিতে পারিনি, তাদেরও দলের জন্য অবদান রয়েছে। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার প্রার্থীর পাশে থাকবেন, নৌকাকে বিজয়ী করবেন। 

 

সর্বশেষ খবর