মঙ্গলবার, ১৩ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

কমিটি নিয়ে ফের সংঘর্ষ ছাত্রদলের

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রদলের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চলমান উত্তেজনা কিছুতেই কমছে না। দফায় দফায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণ, ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় সংগঠনটির কার্যক্রম এখন প্রশ্নবিদ্ধ। আর এসব সংঘর্ষে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি যুবদল, কৃষক দলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরাও যোগ দিচ্ছেন। এতে করে পরিস্থিতি যে কোনো দিকে মোড় নিতে পারে বলে মনে করছে সাধারণ মানুষ। তবে চলমান এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা বিএনপি নীরব। কমিটি ঘোষণার পর থেকে চার দিন ধরে তুমুল উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে জেলা বিএনপির ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি।

এদিকে চলমান বিবাদের মধ্যেই গতকাল সকালে শহরের লোকনাথ টেংকের পাড় মাঠে উভয় পক্ষ কর্মসূচি গ্রহণ করে। তবে পুলিশের অনুমতি না থাকায় ছাত্রদলের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির নেতারা শহরতলির বিরাসার থেকে শুভেচ্ছা মিছিল করতে চাইলে জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ফোজায়েল চৌধুরীর নেতৃত্বে পদবঞ্চিতরা ককটেল নিক্ষেপ শুরু করেন। এ সময় নতুন কমিটির নেতা-কর্মীরাসহ তাদের পক্ষে যুবদল, কৃষক দলের নেতা-কর্মীরাও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এতে উভয় পক্ষই দা, ককটেলসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বিরাসার মোড়ে অন্তত ১০টি ককটেল বিস্ফোরণের পর মুহূর্তেই এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিরাসার-সংলগ্ন খৈয়াসার রোডে দুই পক্ষই দা ও ককটেল হাতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক ককটেল নিক্ষেপে পুরো এলাকায় তীব্র আতঙ্কে মানুষ দিগি¦দিক ছোটাছুটি শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় অবিস্ফোরিত বেশ কয়েকটি ককটেল উদ্ধার করে পানিতে ডুবিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়। পরে ছাত্রদলের নতুন কমিটির নেতারা শহরের মধ্যপাড়া এলাকায় একটি ঝটিকা মিছিল বের করে। তবে সেখানেও পুলিশ উপস্থিত হলে তারা সেখান থেকে চলে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির দফতর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জেলা ছাত্রদলের সাত সদস্যের আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে শাহীনুর রহমান শাহিনকে আহ্বায়ক ও সমীর চক্রবর্তীকে সদস্য সচিব করা হয়। কমিটির ঘোষণার পর থেকেই শহরের পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তাদের দাবি, কমিটিতে ত্যাগীদের বাদ দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের ঠাঁই দেওয়া হয়েছে। এরই জেরে শুক্রবার বিকালে জেলা ছাত্রদলের বিদায়ী কমিটির আহ্বায়ক রুবেল চৌধুরী ফোজায়েল, সদস্য সচিব মহসিন মিয়া হৃদয় ও যুগ্ম-আহ্বায়ক সাজিদুর রহমানের নেতৃত্বে জেলা শহরের টি এ রোড ও পাওয়ার হাউস রোডে বিক্ষোভ মিছিল হয়। মিছিল শেষে তারা কান্দিপাড়ায় জেলা ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক শাহীনুর রহমান ও কৃষক দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক কাউসার কাউন্সিলরের বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর চালায়। শনিবার রাতেও পদবঞ্চিতরা ফের ভিপি শামীম, নতুন কমিটির আহ্বায়ক শাহীনসহ নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা করে। তবে এ সময় তাদের পক্ষের লোকজন প্রতিরোধ গড়ে তুললে উভয় পক্ষে গোলাগুলিসহ ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

রবিবার পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত থাকলেও সন্ধ্যায় জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটির আহ্বায়ক শাহিনুর রহমান শাহিনের নেতৃত্বে শহরের লোকনাথ টেংকের পাড় মাঠে শুভেচ্ছা মিছিল এবং সদ্য বিদায়ী কমিটির আহ্বায়ক ফোজায়েল চৌধুরী চলমান লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি দেয়। এতে করে উভয় পক্ষের মধ্যে ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল সকাল থেকেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম শেখ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য শহরজুড়ে অবস্থান নেন। তবে ছাত্রদলের নতুন কমিটির নেতারা শহরতলির বিরাসার পয়েন্ট থেকে আনন্দমিছিল শুরু করলে প্রতিরোধ গড়ে তুলে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা ককটেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে উভয় পক্ষই সংঘর্ষে জড়িয়ে যায়।

 

 

 

সর্বশেষ খবর