বুধবার, ১৪ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

সুষ্ঠু ভোটেও ভোটার কম

বরিশালে ১৫ বছরে কমেছে ৩০, খুলনায় ১৩ শতাংশ

গোলাম রাব্বানী

খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোটেও ভোটার উপস্থিতি কমেছে। বরিশাল সিটিতে ২০০৮ সালে ভোট পড়েছিল ৮১ দশমিক ৯৯ শতাংশ; ২০১৩ সালে ৭২ দশমিক ১ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে ৫৫ শতাংশের বেশি। এবার ভোট পড়েছে ৫১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। একইভাবে       খুলনা সিটিতে ২০০৮ সালে ভোট পড়েছিল ৭৭ দশমিক ৮০ শতাংশ; ২০১৩ সালে ৬৮ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে ৬২ শতাংশ। এবার ভোট পড়েছে ৪৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। বিগত চার নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে এ তথ্য মিলেছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৫ বছরে বরিশালে ভোট কমেছে ৩০ শতাংশ আর খুলনায় ১৩ শতাংশ। অবশ্য ভোটের আগ থেকেই ভোটারদের কেন্দ্রে উপস্থিত করার চ্যালেঞ্জ ছিল মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের। সবাই প্রচারে ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে উৎসাহিত করেছেন।

বরিশালের বিভিন্ন নির্বাচনের ফলাফল : বরিশাল সিটি নির্বাচনে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের শওকত হোসেন হিরণ, ২০১৩ সালে বিএনপির আহসান হাবিব কামাল ও ২০১৮ সালে নৌকার প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ মেয়র নির্বাচিত হন। এবার জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আওয়ামী লীগের আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) বিজয়ী হয়েছেন। তিনি নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফয়জুল করীম হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৮২৮ ভোট। মেয়র পদে অন্য প্রার্থীরা হলেন মো. ইকবাল হোসেন তাপস (জাতীয় পার্টি, লাঙল ৬৬৬৫ ভোট), মো. আলী হোসেন হাওলাদার (স্বতন্ত্র, হরিণ ২৩৮১ ভোট), মিজানুর রহমান বাচ্চু (জাকের পার্টি, গোলাপফুল ২৫৪৬ ভোট), মো. আসাদুজ্জামান (স্বতন্ত্র, হাতি ৫২৯ ভোট), মো. কামরুল আহসান রূপণ (স্বতন্ত্র, টেবিলঘড়ি ৭৯৯৯ ভোট)।

বরিশাল সিটিতে মোট ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ এবং নারী ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন। মেয়র পদে সাতজন ছাড়াও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৫ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বিএনপিসহ অধিকাংশ দলের বর্জনের পাশাপাশি বৃষ্টির বাগড়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ৫১ দশমিক ৪৬ শতাংশ ভোট পড়েছে।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০০৮ সালের ভোটে বরিশালের মেয়র পদে ১০ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৫ এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন নির্বাচনে অংশ নেন। ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৩ জন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত শওকত হোসেন হিরণ টেলিভিশন প্রতীকে ভোট পান ৪৬ হাজার ৭৯৬টি। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পিডিপির সরদার সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু ছাতা প্রতীকে পান ৪৬ হাজার ২০৮ ভোট। ভোট পড়ে ৮১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। ২০১৩ সালে এ সিটিতে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১১ হাজার ২৫৭ জন। মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন তিনজন। সাধারণ ওয়ার্ডে ১৬৬ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৪৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মহাজোট সমর্থিত প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন হিরণকে ১৭ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন ১৮-দলীয় জোট সমর্থিত জেলা বিএনপির সভাপতি আহসান হাবিব কামাল। ভোট পড়ে ৭২ দশমিক ১ শতাংশ। ২০১৮ সালে বরিশাল সিটিতে সেয়র পদে সাত, সাধারণ কাউন্সিলর ৯৪ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন। ভোট পড়ে ৫৫ শতংশের বেশি। আওয়ামী লীগের সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মজিবর রহমান সরোয়ারকে ৮৭ হাজারের বেশি ভোটে হারান।

খুলনার বিভিন্ন নির্বাচনের ফলাফল : খুলনা সিটিতে ২০০৮ সালে তালুকদার আবদুল খালেক, ২০১৩ সালে মো. মনিরুজ্জমান মনি ও ২০১৮ সালে ফের তালুকদার আবদুল খালেক মেয়র হন। ২০১৮ সালে প্রায় ৬৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে নৌকার তালুকদার আবদুল খালেক পরাজিত করেন ধানের শীষের নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে। এবারও তিনি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এবারে নৌকা প্রতীক নিয়ে তালুকদার আবদুল খালেক পেয়েছেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮২৫ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাতপাখা প্রতীক নিয়ে আবদুল আউয়াল পেয়েছেন ৬০ হাজার ৬৪ ভোট। এ নির্বাচনে তৃতীয় স্থানে জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু লাঙল প্রতীকে পেয়েছেন ১৮ হাজার ৭৪ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান মুশফিক টেবিলঘড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ১৭ হাজার ২১৮ ভোট। জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে এস এম সাব্বির হোসেন পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৬ ভোট। এবারে ভোট পড়েছে ৪৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০০৮ সালে বিএনপি নেতা ও ভারপ্রাপ্ত মেয়র মনিরুজ্জামান মনিকে ২৫ হাজার ৮৩৬ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে খুলনায় মেয়র হন আওয়ামী লীগ নেতা তালুকদার আবদুল খালেক। নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৭৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। ২০১৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত তালুকদার আবদুল খালেককে পরাজিত করে খুলনার মেয়র হন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনি। তিনি বিজয়ী হন প্রায় ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে। তিনি পান ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৩ ভোট আর তালুকদার আবদুল খালেক পান ১ লাখ ১৯ হাজার ৪২২ ভোট। ভোটের হার ছিল ৬৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। ২০১৮ সালে প্রায় ৬৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে নৌকার তালুকদার আবদুল খালেক পরাজিত করেন ধানের শীষের নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে। এ নির্বাচনে নৌকা পায় ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৯১ ভোট আর ধানের শীষ প্রতীক পায় ১ লাখ ৯ হাজার ২৫১ ভোট। প্রায় ৫ লাখ ভোটের এ সিটিতে ভোট পড়ার হার ছিল সেবার প্রায় ৬২ শতাংশ। এবার জয়ের পর ভোটার উপস্থিতি নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় খুলনার বিজয়ী মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, ‘আমি মনে করেছিলাম আমাদের ভোটার সব খুলনায় আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের কলকারখানা বন্ধ থাকায় তারা টাকাপয়সা যা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন, সেই টাকা নিয়ে তাদের জন্মস্থান, তাদের বাড়িঘরে চলে গেছে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর