বুধবার, ১৪ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

ডিজিটাল প্রহসন দাবি বিরোধীদের

বরিশাল

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশাল সিটিতে সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনের ফল নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে নাগরিকদের মাঝে। এ নির্বাচনকে ডিজিটাল প্রহসন দাবি করেছেন পরাজিত জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রূপণ। তবে আওয়ামী লীগ বলছে, ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করায় এসেছে এমন সাফল্য।

সোমবার অনুষ্ঠিত বিসিসির পঞ্চম পরিষদের নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীকে ৫৩ হাজার ৯৮০ ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত। তিনি পেয়েছেন ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট। এর আগে ২০০৩ সালে দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার পরও বিএনপির মজিবর রহমান সরোয়ার আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়েছিলেন ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে। তিনি পেয়েছিলেন প্রায় ৪৩ হাজার ভোট। ২০০৮ সালে নগরবাসীর কাছে একেবারে অপরিচিত বিএনপি নেতা এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুকে ৫০০ ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের শওকত হোসেন হিরণ। তিনি পেয়েছিলেন প্রায় ৪৫ হাজার ভোট। তবে ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিএনপির অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রার্থীর কাছে প্রায় ১৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন আওয়ামী লীগের আলোচিত প্রার্থী হিরণ। ২০১৮ সালের একতরফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহ অনেকটা জোর করেই জিতেছিলেন ১ লাখ ১১ হাজার ভোট পেয়ে। সিটির প্রথম মেয়র ও সদর আসনে বিএনপির চারবারের সাবেক এমপিকে হারিয়েছিলেন প্রায় ৯০ হাজার ভোটের ব্যবধানে। ওই প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন ছাড়া আওয়ামী লীগ প্রার্থী এত বিপুলসংখ্যক ভোট পাননি বরিশাল সিটিতে।

এক বিশ্বস্ত সূত্র জানান, আওয়ামী লীগ নেতারা বিপুল বিজয়ের নানা ব্যাখ্যা দিলেও তাঁদের নীতিনির্ধারকরা ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীকে ঠেকাতে গোপনে আঁতাত করেন বিএনপি এমনকি জামায়াতের সঙ্গেও। নির্বাচনের প্রাক্কালে ঢাকার গুলশানে এক বাসায় এবং একটি রেস্তোরাঁয় বরিশাল বিএনপির এক সিনিয়র নেতা এবং মহানগর জামায়াতের এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে পৃথক গোপন সভা করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর এক সদস্য এবং বরিশালের একজন প্রতিমন্ত্রী। হাতপাখা একবার সুযোগ পেলে অন্য বড় দলগুলোর অস্তিত্ব হুমকিতে পড়বে- এমন ইস্যুতে ওই দুটি বৈঠকের আয়োজন করেন আওয়ামী লীগের দুই নেতার আস্থাভাজন আমেরিকাপ্রবাসী এক ব্যবসায়ী। বরিশালের বাসিন্দা ওই ব্যবসায়ী এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করলেও তাঁর নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত ভিতরে একাট্টা হওয়ায় মেয়র প্রার্থীর বিপুল বিজয় সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন পর্দার আড়ালের ওই কারিগর।

এবার সাফল্যের রহস্যের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছে। সাধারণ মানুষও আমাকে গ্রহণ করেছে। তাই তারা আমাকে নির্বাচিত করেছে। তবে বরিশাল সিটিতে আওয়ামী লীগের এত ভোট নেই, দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। তিনি বলেন, আগে প্রার্থী ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ভাতিজা, এখন প্রার্থী প্রধানমন্ত্রীর ভাই। একই দল একই প্রশাসন ক্ষমতায়। ২০১৮ সালে ভাতিজা প্রশাসনের সহায়তায় পেশিশক্তির ব্যবহার করে মেয়র হয়েছিলেন। এবার ইভিএম দিয়ে ডিজিটাল কারচুপি করে চাচাকে নির্বাচিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৩০ ভাগ ভোট পড়েছে। ৩টা থেকে এক ঘণ্টার বেশি ভারী বৃষ্টি এবং বজ্রপাত হয়েছে। শেষ ঘণ্টায় কোনো ভোটার কেন্দ্রে যায়নি। তাহলে ২১% ভোট এলো কোথা থেকে, প্রশ্ন রাখেন তিনি।

সোমবার সন্ধ্যায় ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম সিটি ভোটকে প্রহসনের নাটক উল্লেখ করে এ ফল প্রত্যাখ্যান করেন।

বিএনপি থেকে আজীবন বহিষ্কৃত পরাজিত স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রূপণ বলেন, ভোটের ফল অবিশ্বাস্য। ভোট কেন্দ্রের গোপন বুথে ঢুকে ক্ষমতাসীনরা মানুষের ভোট ছিনিয়ে নিয়েছে। ভোট শেষে সব পোলিং এজেন্টকে বের করে দিয়ে কক্ষ আটকে ১০ মিনিট গোপনে কাজ করেছেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা। ১০ মিনিট পর পোলিং এজেন্টদের একটি প্রিন্ট কপি ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কক্ষ আটকে ফল নিয়ে কারচুপির সন্দেহে ওই প্রিন্ট কপিতে স্বাক্ষর করেননি পোলিং এজেন্টরা। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের এসব অভিযোগ সত্য নয়, দাবি করেছেন নৌকা প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার।

সর্বশেষ খবর