বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা
বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

গুরুত্ব দিন সামাজিক ন্যায়বিচারে

প্রতিদিন ডেস্ক

গুরুত্ব দিন সামাজিক ন্যায়বিচারে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক সামিট সম্মেলনে বক্তব্য দেন -পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একমাত্র সামাজিক ন্যায়বিচারই স্থায়ী শান্তি ও টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি রচনা করতে পারে। তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিশ্বব্যাপী শান্তিপূর্ণ, ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের প্রয়াসে সামাজিক ন্যায়বিচারকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। গতকাল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় প্যালেস ডি নেশনস-এ ‘ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক সামিট-২০২৩’-এর পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। খবর বাসস। শেখ হাসিনা বলেন, এই শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে একটি বৈশ্বিক জোট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসহ সব আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এজেন্ডার কেন্দ্রে সামাজিক ন্যায়বিচারকে স্থান দেওয়ার একটি সুযোগ করে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছেন। প্রথমত, এই জোটটিকে একটি মান-নির্ধারক বা দরকষাকষির ফোরামের পরিবর্তে একটি পরামর্শমূলক বা অ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফরম হিসেবে গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয় হবে। দ্বিতীয়ত, বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সামাজিক ন্যায়বিচারকে এক আন্তর্জাতিক মহল কর্তৃক অন্য মহলের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের বিষয়ে এই জোটকে সতর্ক থাকতে হবে। তৃতীয়ত, এই জোটকে একটি নিয়মতান্ত্রিক বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থার আওতায় সামাজিক ন্যায়বিচারকে একটি সংরক্ষণবাদী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করে বরং এর ব্যাপক প্রসারে ভূমিকা রাখার বিষয়ে প্রচারণা চালাতে হবে। চতুর্থত, শোভনকর্ম এবং উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করার জন্য এ জোটের বিষয়ে আইএলওর নিজস্ব অংশীজনদের থেকে ব্যাপক সমর্থন নিশ্চিত করতে হবে। পরিশেষে আমাদের তরুণ সমাজকে সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রবক্তা হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এ জোটকে মনোযোগী হতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান শতাব্দীর বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বের জন্য আমাদের একটি নতুন সামাজিক চুক্তি তৈরি করতে হবে। এই সামাজিক চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হবে- টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সবার জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিষয়ক দুটি নতুন মৌলিক আইএলও সনদ অনুস্বাক্ষরের বিষয়টিও আমরা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছি। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, শ্রম অধিকার নিয়ে সোচ্চার কয়েকটি উন্নত দেশ এখন পর্যন্ত নিজেরা অধিকাংশ মৌলিক আইএলও সনদ অনুস্বাক্ষর করেনি। যেমন, একটি বড় শিল্পোন্নত দেশ মাত্র দুটি মৌলিক সনদ অনুস্বাক্ষর করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার আটটি ঝুঁকিপূর্ণ খাতকে শিশু শ্রমমুক্ত ঘোষণা করেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত ১ লাখ শিশুকে উপানুষ্ঠানিক ও কারিগরি শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম চলছে। আমি একটি সুস্থ ও নিরাপদ আগামী প্রজন্মের স্বার্থে দেশ শিশু শ্রমের অভিশাপ থেকে মুক্তি চাই। তারা আইএলওর সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৩ ও ২০১৮ সালে দুবার বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ সংশোধন করেছেন। অধিকন্তু বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫-এ সংশোধন করা হয়েছে। এ বছর নাগাদ শ্রম আইন, ২০০৬-এ আরও সংশোধনী আনার কাজ চলছে।

দুই সেক্টরে দক্ষ কর্মী নেবে সুইজারল্যান্ড : বাংলাদেশে দক্ষতা প্রশিক্ষণের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ড গতকাল একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে। ফলে মেডিকেল ও আইটি সেক্টর থেকে সুইজারল্যান্ডে দক্ষ কর্মী রপ্তানির সুযোগ বাড়াবে। সুইস কনফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অ্যালেন বেরেস্ট ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে বৈঠকের পর প্যালাইস ডেস নেশনসের দ্বিপক্ষীয় বৈঠককক্ষে এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাসস

সুইজারল্যান্ড ও বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি জুর্গ লাউবার ও সুফিউর রহমান নিজ নিজ দেশের পক্ষে ‘জ্ঞান বিনিময় ও দক্ষতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। সুইস কনফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অ্যালেন বেরেস্ট ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন। পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর দক্ষতা প্রশিক্ষণ ও জ্ঞান বিনিময়ের অংশীদারির পথ প্রশস্ত করবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সুইজারল্যান্ডের কিছু বিশেষ প্রতিষ্ঠান বিশেষত জুরিখে একটি ইনস্টিটিউট রয়েছে, যেটি প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ওপর কাজ করে এবং এ ইনস্টিটিউটটি সাধারণত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করে। বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য হচ্ছে গবেষণা ও উদ্ভাবনে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য জুরিখের এ ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংযুক্ত করা।

দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে, কারণ তারা (সুইজারল্যান্ড) বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি বিশেষ করে মেডিকেল ও আইটি খাত থেকে জনশক্তি আমদানি করতে চায়। সেই লক্ষ্যে সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের অধীনে বাংলাদেশে প্রাথমিক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেবে ও পরবর্তীতে এই দক্ষ জনশক্তি সে দেশে নিয়োগ দেবে। তিন দিনের সরকারি সফরে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয় সময় ১৩ জুন বিকাল ৫টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট জেনেভা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ১৪ ও ১৫ জুন সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় ‘ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক সামিট : সোশ্যাল জাস্টিস ফর অল’-এ যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর এ সুইজারল্যান্ড সফর।

সর্বশেষ খবর