শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

রপ্তানি বাড়াতে ব্যর্থ বিদেশ মিশন

অর্থ বিভাগের চিঠি

মানিক মুনতাসির

রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে ও রপ্তানির নতুন বাজার খুঁজতে বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলো। ফলে রপ্তানির নতুন বাজার অনুসন্ধান পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে তৈরি পোশাক খাতের বাইরে তেমন কোনো নতুন পণ্যের বাজারও তৈরি করতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। প্রায় দুই বছর আগে শুরু হওয়া ডলার সংকট ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এ সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে। ফলে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে ডলার সংকট। যার প্রভাবে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতেও সংকট তৈরি হয়েছে। অর্থনীতি শক্তিশালী করতে সরকার নজর দিচ্ছে রপ্তানি খাতে। যার অংশ হিসেবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলোকে। ২০২৬ সালের মধ্যে রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চায় সরকার। এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা ৪ জুন বিদেশের মিশনগুলোতে পাঠানো হয়েছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানান, কভিড মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনীতির চাপ দেশের অর্থনীতিতেও পড়ে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সহসা থামার সম্ভাবনা কম। সংঘাতের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রধান পণ্যগুলোর মূল্যবৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতিতে উল্লম্ফন ঘটেছে। আগামীতে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে কি না তা অনিশ্চিত। আগামীতে ইউক্রেনের লড়াই তীব্রতর হলে এবং অন্য দেশ জড়িয়ে পড়লে বিশ্ব অর্থনীতি অত্যন্ত বিপজ্জনক পর্যায়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে আগামী অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে সংকটের মধ্যেও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকার রপ্তানি খাতের ওপর নজর দিয়েছে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তরণ ঘটবে। ফলে বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাওয়া সুযোগ-সুবিধা কমে যাবে। এ জন্য টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে রপ্তানির ওপর জোর দিয়েছে সরকার। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোকে রপ্তানি বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রপ্তানির যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা করার নির্দেশনা দিয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানি বাড়ানোর মতো সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। এ ছাড়া প্রতি বছর চীন থেকে যেসব শিল্প-কারখানা স্থানান্তর হচ্ছে তার ৪ থেকে ৫ শতাংশ কারখানা বাংলাদেশে এলে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন নয়।’ এ ছাড়া আগামী তিন বছরের মধ্যে ভারতে রপ্তানি ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছে যাবে। আমরা রপ্তাানি খাতকে বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নিয়েছি। যেখানে বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

জানা গেছে, আগামীতে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে রপ্তানি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। এ জন্য ২০২৬ সালে দেশের রপ্তানি আয় ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনাও করা হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে রপ্তানি ৮০ বিলিয়ন ডলার করার প্রাক্কলন করেছে সরকার। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সরকার পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণের চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে প্রধান রপ্তানিপণ্য পোশাকের রপ্তানি প্রবৃদ্ধির বর্তমান ধারা আরও জোরদারের উদ্যোগ নিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের সর্বশেষ তথ্যের ভিত্তিতে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে কাজ শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরই অংশ হিসেবে বিদেশে অবস্থিত দূতাবাস এবং মিশনগুলোকে তথ্য পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। যাতে যৌক্তিকভাবে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা যায়।

সর্বশেষ খবর