শিরোনাম
শনিবার, ১৭ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচন

নিজস্ব প্রতিবেদক

যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচন

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী জাতীয় নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। জনগণ তাদের ভোট দেবে। জনগণ তাদের ভোটের একমাত্র মালিক হিসেবে যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দেবে। আর যে জনগণের ভোট পাবে, সে সরকার গঠন করবে। এটা গণতান্ত্রিক ধারা এবং তা অব্যাহত থাকবে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় জেনেভায় হিলটন হোটেলে সুইজারল্যান্ড   প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি এটা ভালো করেই জানে যে, তাদের খারাপ কর্মকা-ের জন্য তারা জনগণের কোনো ভোট পাবে না এবং সে কারণে তারা এখন নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে পিছু হটার বাহানা খুঁজছে। তিনি বলেন, ‘আসলে তারা (বিএনপি) চোরের ও ভোট কারচুপিকারীদের দল। ভোট ডাকাতি করা ছাড়া তাদের পক্ষে ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব না। অতীতে তারা দেশের সম্পদ বিক্রি করার পূর্বশর্ত মেনে নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিল।’ তিনি বলেন, সুতরাং জনগণ তাদের (বিএনপি) আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না এবং সে কারণেই তারা জনগণের ভোট পায় না। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের জন্য বিএনপির বারবার হুমকি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার এতটা দুর্বল নয়। তিনি বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর নিয়ে হইচই ছিল, তারা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করবে, আমরা এমন দুর্বল পর্যায়ে নেই যে তারা আমাদের পতন ঘটাবে, আমাদের সঙ্গে জনগণ আছে, আমাদের শক্তি আমাদের জনগণ।’ নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিষয়ে বিএনপির দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি, কিন্তু বিএনপি এখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করছে।’
বিএনপি কি পাগল নাকি শিশু হয়ে গেল- প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একবার খালেদা জিয়া দাবি করেছিলেন, পাগল বা শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়। তিনি আরও বলেন, ‘চোরদের, স্বাধীনতাবিরোধীদের ও খুনিদের ক্ষমতায় এনে আমরা বাংলাদেশকে অন্যের কাছে মাথা নত হতে দেব না।’ বিএনপি এখন নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে নানা ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে, নোংরা কৌশল অবলম্বন করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা দিবালোকে মানুষ হত্যা করেছে, যারা লুটপাট করেছে, দুর্নীতি করেছে, দুর্নীতির মামলায় দন্ডিত হয়েছে, এটাই এখন মূল ইস্যু যে তারা দ-িত ব্যক্তির নেতৃত্বে নির্বাচনে যাবে কি না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ বাংলাদেশে যে গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা আমাদের আন্দোলনের ফসল। এ জন্য আমার দলের নেতা-কর্মীরা জীবন দিয়েছেন। আর আমি গ্রেনেড হামলা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গেছি।’ গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতার সুফল তুলে ধরে তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন গণতান্ত্রিক ধারায় দেশ বদলেছে, আজ দেশ উন্নত হয়েছে, আজ বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে আছে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আজ যে মর্যাদা পেয়েছে তা নিয়েই এগিয়ে যাবে। ‘আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত ও সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ে তুলব।’
বাংলাদেশের যে কোনো সংকটে প্রবাসীদের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখে। তিনি প্রবাসীদের হুন্ডির মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে বৈধ মাধ্যমে টাকা পাঠানোর আহ্বান জানান। তিনি বিদেশে যেতে আগ্রহীদের দালালদের সম্পর্কে সচেতন ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন এবং নিবন্ধনের মাধ্যমে বৈধ উপায়ে বিদেশে যাওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সুইজারল্যান্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
দীর্ঘদিনের গণতন্ত্র দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে : ২০০৯ সাল থেকে দেশে গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকায় বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিকভাবে একটি সম্মানজনক অবস্থানে উন্নীত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার জেনেভায় বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম কার্যালয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশের নতুন অর্থনীতি এবং সমাজ’ শীর্ষক আলাপচারিতায় তিনি এ কথা বলেন। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর দেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ থেকে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকায়, দীর্ঘদিন দেশে গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে একটি সম্মানজনক অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই দেশ আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন সূচকে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে ২৮২৪ ডলার হয়েছে, যা ২০০৬ সালে ৫৪৩ ডলার ছিল, দারিদ্র্যের হার ৪১ শতাংশ থেকে প্রায় ১৮ শতাংশে নেমে এসেছে এবং অতি দারিদ্র্যের হার ২১ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর যারা অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছিল তারা জনগণের উন্নয়নে কোনো কাজ করেনি।
১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সংগ্রামের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্র না থাকলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব না। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে দীর্ঘ সংগ্রাম করে আমরা দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছি। দেশের ৫০ লাখ গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে গৃহ প্রদান করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে একজন মানুষও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না। বৈশ্বিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এর ফলে স্যাংশন ও কাউন্টার স্যাংশনের ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্য এবং জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও অর্থনীতির ওপর চাপ পড়েছে। তবে সরকার এই চাপ কাটিয়ে ওঠার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।
মৎস্য খাতে ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার : বাংলাদেশকে মৎস্য খাতে ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)। বৃহস্পতিবার জেনেভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সফরকালীন আবাসস্থলে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ কথা বলেন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো-ইওয়েলা। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, তারা এই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করতে চান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ মৎস্য খাতে খুব একটা ভর্র্তুকি দেয় না। আমরা বলেছি আমরা এটি বিবেচনা করব। কয়েকটি বড় দেশের কারণে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘ডিসপিউট সেটেলমেন্ট বডি’ কয়েক বছর ধরে নিষ্ক্রিয় বলে জানিয়েছেন এর মহাপরিচালক। ওকোনজো-ইওয়েলা বলেন, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জি-২০তে যাচ্ছেন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে কথা বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) এই ‘ডিসপিউট সেটেলমেন্ট বডি’ সক্রিয় করার বিষয়ে কথা বলতে পারেন। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, এই ‘ডিসপিউট সেটেলমেন্ট বডি’ সংস্থাটির মূল শক্তি। ওকোনজো-ইওয়েলা বাংলাদেশকে রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনার পরামর্শ দেন। রপ্তানি ক্ষেত্রে তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ওষুধ এবং আইটি সেক্টরে গুরুত্ব দিতে বলেন তিনি। গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই সেক্টরে বাংলাদেশের সক্ষমতার অভাব রয়েছে।
এ বিষয়ে জাপান, থাইল্যান্ড ও মালদ্বীপ থেকে বিশেষ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি ইতোমধ্যে জাপান ও মালদ্বীপের সঙ্গে কথা বলেছেন। এর আগে একই স্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন কাতারের শ্রমমন্ত্রী আলী বিন সামিক আল মারি। আল বিন সামিক বলেন, তাদের দেশে প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার বাংলাদেশি জনশক্তি কাজ করছে। এসব জনশক্তির কাজে তারা সন্তুষ্ট। কাতারের মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ থেকে আরও জনশক্তি নিতে তারা আগ্রহী। এ বিষয়ে তারা একটি চুক্তি করবে। এ ছাড়া একই স্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী চেয়ারম্যান প্রফেসর ক্লাউস সোয়াব।
প্রধানমন্ত্রীর জেনেভা ত্যাগ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪-১৫ জুন অনুষ্ঠিত ‘ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক সামিট : সোশ্যাল জাস্টিস ফর অল’-এ যোগদান শেষে স্বদেশের উদ্দেশে গতকাল সুইজারল্যান্ডের জেনেভা ত্যাগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টা ৫০ মিনিট) জেনেভা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। ফ্লাইটটি গতকাল গভীর রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা।

সর্বশেষ খবর