শিরোনাম
শনিবার, ১৭ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

জাতীয় পার্টিতে ফের অস্থিরতা

জি এম কাদের ও রওশনের আলাদা প্রার্থী, কে পাচ্ছেন লাঙ্গল

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

জাতীয় পার্টিতে ফের অস্থিরতা

জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনের জন্য আলাদা আলাদা প্রার্থী ঘোষণা করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এবং বিরোধী দলের নেতা ও পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। এতে ফের প্রকাশ্যে এলো দুই নেতার দ্বন্দ্ব। দলের নেতা-কর্মীরা এ নিয়ে পড়েছেন অস্বস্তিতে। পার্টিতে বিরাজ করছে অস্থিরতা। জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীসহ সব মহলের আলোচনা ঢাকা-১৭ তে কে পাচ্ছেন পার্টির মনোনয়ন।  রওশন এরশাদ মনোনয়ন দিয়েছেন জাপা থেকে অব্যাহতি পাওয়া দলের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশীদকে। অন্যদিকে জি এম কাদের দলের পক্ষে মনোনয়ন দিয়েছেন মেজর (অব.) সিকদার আনিছুর রহমানকে।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে দলটিতে বিভক্তি ততবেশি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। গত কয়েক মাসে ৪৩টি জেলা কমিটি অনুমোদন দেন রওশন এরশাদ অনুসারীরা। কাজী মামুনুর রশীদ মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করেন প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্রের রিট পিটিশনে লাঙ্গল প্রতীকের ১১৫৩/২০০০ সালের মামলার রায়ের কপি। এ ছাড়াও সংযুক্ত করেন ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অনুমোদিত ও তৎকালীন মহাসচিবের সই করা দলীয় গঠনতন্ত্রের প্রথম মুদ্রণ কপি। অপরদিকে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের ঢাকা-১৭ আসনে মনোনয়ন দিয়েছেন মেজর (অব.) সিকদার আনিছুর রহমানকে। গত বুধবার দলের বনানী চেয়ারম্যান কার্যালয়ে মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জি এম কাদের। জানা গেছে, পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশন, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যন্ত মনোনয়ন দিয়ে আসছেন। তাছাড়া দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মনোনয়ন দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব। এ অবস্থায় হঠাৎ করে দলের আলংকারিক পদ দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ কোর্টের রায় জমা দিলেই নির্বাচন কমিশন তা গ্রহণ করবে কিনা, আর রায়ে কী আছে- এই নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সংসদে পৃথক গ্রুপ করেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং মহাসচিব নাজিউর রহমান মঞ্জু ছিলেন মূল দলে। তখন সিরাজগঞ্জ, মেহেরপুর-১, ফরিদপুর-৪, উপনির্বাচনে উভয়পক্ষ প্রতীক লাঙ্গল দাবি করেন। তখন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ পায়। কিন্তু ১৯৯৯ সালে টাঙ্গাইল-৮ আসনে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি এবং হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি উভয়ই লাঙ্গল প্রতীক চায়। এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি প্রার্থী কাজী আশরাফ সিদ্দিকীকে প্রতীক বরাদ্দ দেয় প্যান্ট এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর প্রার্থীকে শার্ট। ফলে কাজী আশরাফ সিদ্দিকী ইলেকশন কমিশনে পিটিশন করেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা প্যান্ট ও শার্ট প্রতীক বহাল রাখেন। কাজী আশরাফ সিদ্দিকী ব্যারিস্টার রফিকুল হকের মাধ্যমে হাই কোর্টে যান। তিনি জানান, ফরিদপুর, মেহেরপুর, সিরাজগঞ্জে লাঙ্গল প্রতীক দেওয়া হয়েছে। তখন আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি রিট পিটিশন করে। আদালত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির যিনি সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবেন তার অনুকূলে লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষমতা দেন। পরবর্তীতে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গেলে সুপ্রিম কোর্ট হাই কোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। পরবর্তী ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসে। জাতীয় পার্টি নামে লাঙ্গল প্রতীকে বর্তমানে নিবন্ধিত দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। এ ছাড়াও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি-জেপি সাইকেল প্রতীক, আন্দালিব রহমানের বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি গরুর গাড়ি প্রতীক, ডা. এম এ মুকিতের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি কাঁঠাল প্রতীকে রয়েছে। নিবন্ধনের বাইরে জাতীয় পার্টি (জাফর) নামে আরেকটি দল রয়েছে।

আরও জানা গেছে, ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনের গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনের আওতায় আসে। আরপিও অনুযায়ী বর্তমানে দলের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষমতা শুধু নিবন্ধিত দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের। ওই সময়ের কোর্টের রায়ের জন্য নির্বাচন কমিশনে লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ পায় বর্তমান জাতীয় পার্টি। আর বর্তমান গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার এখতিয়ার পার্টির চেয়ারম্যান মহাসচিবের। বর্তমানে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে ওই সময়ের রায় কার্যকর নয়। জানতে চাইলে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নিয়মানুযায়ী মনোনয়ন দেওয়ার জন্য বোর্ড গঠন করতে হয়, তৃণমূলের মতামত নিতে হয়। পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক দলের অভিভাবক। এটি সম্মানিত পদ। তিনি পার্টির চেয়ারম্যানকে মতামত দেবেন। চেয়ারম্যান মতামত নিতেও পারেন নাও নিতে পারেন। প্রধান পৃষ্ঠপোষক দলের কাউন্সিলর নন, তার প্রতীক দেওয়ার এখতিয়ার নেই। তিনি বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী পার্টির চেয়ারম্যান প্রতীক বরাদ্দ দেবেন। চেয়ারম্যান কোনো কারণে প্রতীক বরাদ্দ দিতে না পারলে মহাসচিব দেবেন। অতীতে এ ঘটনা ঘটেছে। ওই সময়ের রায় এখন মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

সর্বশেষ খবর