মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

চিকিৎসা গাফিলতিতেই হলো সর্বনাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

চিকিৎসা গাফিলতিতেই হলো সর্বনাশ

মাহবুবা রহমান আঁখি

ভুল চিকিৎসায় নবজাতক ও মা মাহবুবা রহমান আঁখির (২৫) মৃত্যুর ঘটনায় গাফিলতি ছিল, স্বীকার করেছে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে হাসপাতালের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। হাসপাতালটির উপপরিচালক ডা. এ টি এম নজরুল ইসলাম গতকাল সাংবাদিকদের সামনে এ গাফিলতির কথা স্বীকার করেন।

ডা. এ টি এম নজরুল ইসলাম বলেন, আঁখির চিকিৎসায় সেন্ট্রাল হাসপাতালের অবশ্যই গাফিলতি ছিল। প্রথম গাফিলতি ছিল ডা. সংযুক্তা সাহার। তারপর ওটিতে অস্ত্রোপচারে যারা ছিলেন তাদের। কারণ তারা সিনিয়র ডাক্তারদের ডাকেননি। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। প্রতিবেদন পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে গতকাল মাহবুবা রহমান আঁখি ও তার সন্তানের লাশের ময়নাতদন্ত করেন ঢামেকের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোখলেসুর রহমান। তাদের শরীরের অঙ্গ (অর্গান) রাখা হয়েছে পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। পরে পরিবারের কাছে লাশ দুটি হস্তান্তর করা হয়। রোববার ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আঁখির। সন্ধ্যায় সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর আঁখি ও তার সন্তানের লাশ দুটি ঢামেক মর্গে পাঠায় ধানমন্ডি থানা পুলিশ। আঁখির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. মোখলেসুর রহমান বলেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য মা ও ছেলের শরীর থেকে অর্গান রাখা হয়েছে। এগুলোর রিপোর্ট এলে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। ঢামেকের একটি সূত্র জানায়, আঁখির ভিসেরা, রক্ত, ফুসফুস ও কিডনি রাখা হয়েছে। তার সন্তানের ভিসেরা ও ফুসফুস রাখা হয়েছে। এসব কিছুই পরীক্ষার পর প্রতিবেদন আকারে জমা দেওয়া হবে।

আঁখির চাচা শফিকুর রহমান মজুমদার বলেন, আঁখি ও তার সন্তানের লাশ লাকসামের গায়নের ডহরা গ্রামে আমার ভাইয়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে। গতকাল আঁখির পরিবার যায় ঢামেক মর্গে। তারা সেন্ট্রাল হসপিটালের লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানান। তারা অভিযুক্ত ডা. সংযুক্তা সাহার কঠোর শাস্তি দাবি করেন। এ ঘটনায় জড়িত সেন্ট্রাল হসপিটালের অন্য চিকিৎসকদেরও শাস্তির দাবি জানায় ভুক্তভোগী পরিবারটি। ৯ জুন রাত ১২টা ৫০ মিনিটে প্রসব ব্যথা ওঠার পর আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে ভর্তি করা হয়। কিন্তু ভুল চিকিৎসায় আঁখি ও তার সন্তানের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ আরও পাঁচ-ছয়জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ অভিযোগ এনে মামলা করেন আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী। মামলায় হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সংযুক্তার নামও রয়েছে। এর পর সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক শাহজাদী ও মুনাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

তার আগে তিন মাস ধরে সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন মাহবুবা রহমান আঁখি। তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক ছিল। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমেই আঁখির সন্তান প্রসব সম্ভব, আশ্বস্ত করেছিলেন ডা. সংযুক্তা সাহা। গত ৯ জুন আঁখিকে হাসপাতালে ভর্তি করার সময় থেকে চিকিৎসকরা তার পরিবারের সঙ্গে ডা. সংযুক্তা সাহাকে নিয়ে মিথ্যাচার করে। তাদের জানানো হয়, সংযুক্তা অপারেশন থিয়েটারে কাজ করছেন। কিন্তু তিনি হাসপাতালেই ছিলেন না।

 

সর্বশেষ খবর