বুধবার, ২১ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইসির আরেক চ্যালেঞ্জ

সংসদের আগে বড় নির্বাচন আজ সিসি ক্যামেরায় ঢাকা থেকে মনিটরিং সিলেট রাজশাহী সিটি ভোট

গোলাম রাব্বানী

গাজীপুর, খুলনা, বরিশালের পর রাজশাহী ও সিলেট সিটি ভোটে আজ আরেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বড় এ নির্বাচনের দিকে চোখ রয়েছে সবার। আজ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে দুই সিটিতে। ভোট গ্রহণ হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। থাকবে সিসি ক্যামেরাও। সিটি ভোটের মাধ্যমে জনগণের আস্থা ফেরাতে চেষ্টা করছে নির্বাচন কমিশন। সিটি ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। নির্বাচনে অংশ নিয়েও একটি দলের ভোট বর্জনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের জন্য কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটি দল ভোটে অংশ নিলেও নেই বিএনপি। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া গাজীপুর, বরিশাল ও খুলনা সিটির ভোট ছিল শান্তিপূর্ণ। তবে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল। জাতীয় পার্টি, জাকের পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের মেয়র প্রার্থীকে তেমন লড়তে হবে না। এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ভোটের পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে রাজশাহী ও সিলেটে ভোট কেমন হয় তা দেখার অপেক্ষায় দেশবাসী।

ইসি বলছে, প্রতিটি নির্বাচনই সমান গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জের। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ভোটের দিন ও নির্বাচনোত্তর অনিয়ম, গোলযোগ ও সহিংসতা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সাধারণ ছুটি থাকছে নির্বাচনী এলাকায়। ঢাকা থেকে ৩ হাজার ২১০টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া দুই সিটিতে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারা পর্যবেক্ষণে মাঠে থাকছেন। তারা ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি তাৎক্ষণিক ইসিকে অবহিত করবেন। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলেছেন, সিটি নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণে ইসির মূল পরীক্ষা হচ্ছে ‘গোপন বুথের ডাকাত’ ঠেকানো। এ ছাড়া বিএনপি ছাড়া সিটি নির্বাচনে কয়েকটি দল ছিল। কিন্তু বরিশাল সিটির ভোটে দলীয় প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনার প্রেক্ষাপটে ইসলামী আন্দোলন রাজশাহী ও সিলেটের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত দিয়েছে। যদিও তাদের দলীয় প্রতীক থাকছে। তবে সব মিলে কেন্দ্রে ভোটার আনা প্রার্থী ও ইসির জন্য চ্যালেঞ্জ হবে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ইভিএমে ভোটের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে; প্রতিটি নির্বাচনই আমাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জের। সব নির্বাচন থেকে অভিজ্ঞতা নিচ্ছি, ভোটারদের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচনে বিধিবিধান প্রতিপালন নিশ্চিতকল্পে আমাদের অবস্থান কঠোর ছিল, আগের মতো রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচনের প্রতিটি পদক্ষেপেই আমরা সূতীক্ষè নজর রেখে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। এ ছাড়া আমরা সরাসরি সিসি ক্যামেরায় এ নির্বাচন ঢাকা থেকে পর্যবেক্ষণ করব। নির্বাচনপূর্ব, ভোটের দিন ও নির্বাচনোত্তর অনিয়ম, গোলযোগ ও সহিংসতা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আচরণবিধি প্রতিপালনে স্থানীয়ভাবে বেশ কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে অভিযোগ খতিয়ে দেখে সিলেটে একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রার্থিতাও বাতিল করা হয়েছে। নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার ব্যাপারে প্রশাসন, পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা শতভাগ নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করেছি এবং নির্বাচন প্রচারণায় অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলা করলে কোনো ধরনের ছাড় দেইনি। পাঁচ সিটির মধ্যে গাজীপুরের পর খুলনা ও বরিশালে ইভিএমে ভোট দিতে তেমন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি। আশা করি, রাজশাহী এবং সিলেটেও কোনো অসুবিধা হবে না। বর্ষা মৌসুমের কথা মাথায় রেখে ব্যাটারি, চার্জার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতিতেও যেন ত্রুটি না থাকে সে বিষয়ে কারিগরি দল সক্রিয় থাকবে। আমাদের কাছে সব প্রার্থী সমান, সব দলও সমান। ভোটারদের নির্বিঘ্ন পরিবেশ তৈরিতে আমরা বদ্ধপরিকর। সব অংশীজনের সক্রিয় এবং আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি। এদিকে ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তায় সিলেটের প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন এবং প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ জন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবেন।। নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে মোবাইল ফোর্স ৪২টি, স্ট্রাইকিং ফোর্স ১৪টি, রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স ছয়টি, র‌্যাবের ২২টি টিম এবং ১০ প্লাটুন বিজিবি মাঠে থাকবে। এ ছাড়া ৫৯ জন নির্বাহী হাকিম ও ১৪ জন বিচারিক হাকিম নির্বাচনী মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন। রাজশাহীতে ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তায় প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন এবং প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবেন। নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে মোবাইল ফোর্স ৩০টি, স্ট্রাইকিং ফোর্স ১০টি, রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স ছয়টি, র‌্যাবের ১৬টি টিম এবং ৭ প্লাটুন বিজিবি থাকবে। ৪৩ জন নির্বাহী হাকিম ও ১০ জন বিচারিক হাকিম দায়িত্ব পালন করবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর