বুধবার, ২১ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

পুনরুদ্ধার না ইতিহাস

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

পুনরুদ্ধার না ইতিহাস

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়রের মুকুট পরেছিলেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। সেই পরিষদে কাউন্সিলর ছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। এরপর  টানা ১০ বছর আসন ধরে রেখেছিলেন কামরান। সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে ঘটে ছন্দপতন। হেভিওয়েট কামরানকে পরাজিত হতে হয় সেই আরিফের কাছে। এরপর টানা দুবার আরিফে ধরাশায়ী হন কামরান। সেই পরাজয়ের জন্য দায়ী করা হয় দলের দুর্বল সাংগঠনিক অবস্থাকে। আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতার ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ও কামরানকে নির্বাচনে ডুবিয়ে ছিল এমনটাও ছিল আলোচনায়। তাই এবার কেন্দ্র থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় দলীয় ঐক্যে। কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেটে এসে দলীয় নেতা-কর্মীদের কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বলেছেন, ‘হারের হ্যাটট্রিক নয়, আনোয়ারুজ্জামানকে দিয়ে মেয়রের আসন পুনরুদ্ধার’ চান তারা। মেয়রের আসন পুনরুদ্ধারের সেই অগ্নিপরীক্ষায় স্থানীয় নেতারা কতটুকু সফল হতে পেরেছেন তা প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আজ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত। আর ‘নৌকা’বিরোধী ভোটে জাতীয় পার্টির প্রার্থী কী চমক দেখাতে পারেন, সেটার জন্য সিলেটবাসীকে ফলাফল পর্যন্ত থাকতে হচ্ছে অপেক্ষায়। নির্বাচনে লাঙ্গলের বিজয় হলে সেটা হবে নতুন ইতিহাস। এর আগে সিলেট সিটি নির্বাচনে দুবার প্রার্থী দিলেও জামানত হারিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার আটজন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল। সিলেটে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা শক্তিশালী না থাকায় শুরু থেকেই কর্মী সংকটে পড়েন বাবুল। নির্বাচনে তার ভরসা হয়ে ওঠে ‘নৌকা’বিরোধী ভোট। কাউন্সিলররা ভোটারদের কেন্দ্রে টানতে পারলে নৌকাবিরোধী ভোট লাঙ্গলে পড়বে- এমন আশায় বুক বেঁধে আছেন তিনি। নৌকার ভোটারের চেয়ে বিরোধী বলয়ের ভোট বেশি হবে- এমন প্রত্যাশাও করছেন তিনি। কিন্তু শেষ সময়ে এসে বৈরী আবহাওয়ায় বাবুলের কপালে ভাঁজ পড়ে। নিজের জয়ের ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী এমন প্রশ্নের জবাবে বাবুল বলেন, মানুষ এই সরকারকে আর পছন্দ করছে না। তারা নৌকার বিপক্ষে ভোট দিয়ে সরকারকে কড়া বার্তা দিতে চায়। এ জন্য লাঙ্গলের পক্ষে জোয়ার উঠেছে। সেই জোয়ার দেখে প্রশাসন ও সরকারদলীয় প্রার্থী নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন।

তবে বাবুল নৌকাবিরোধী ভোট দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পারের যতই কথা বলুন না কেন সেটা আমলে নিতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। টানা দুবার দলীয় প্রার্থীর পরাজয়। দল ক্ষমতায় থাকলেও মেয়রের চেয়ারে নেই দলীয় প্রতিনিধি। এই দুঃখ এবার ঘুচাতে চায় দলটি। এবার পরাজয়ের পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেজন্য কেন্দ্র থেকে নেওয়া হয় বিশেষ উদ্যোগ। কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপে পড়ে সব বিভেদ ভুলে এবার দলীয় প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে মাঠে নামেন আধাজল খেয়ে।

বিএনপি-জামায়াতকে নিয়ে শেষ হিসাব : সিটি নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি- জামায়াত। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিএনপি। ভোটের দিন নেতা-কর্মীদের কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করেছে দলটি। কিন্তু জামায়াত মেয়র পদে প্রার্থী না দিলেও বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। ফলে নির্বাচনের দিন জামায়াতের নেতা-কর্মীরা ভোট দিতে যাবেন এমনটা প্রায় নিশ্চিত।

নিরাপত্তায় থাকবে ২৬০০ পুলিশ : সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্ন করতে নগরীতে কাজ করছে প্রায় ২৬০০ পুলিশ সদস্য। মাঠে রয়েছেন ১৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৪২টি ওয়ার্ডে ৪২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। নির্বাচনে কোনো বিশৃঙ্খলা হলে তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবেন।

সর্বশেষ খবর