বুধবার, ২১ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

উত্তাপহীন রাজশাহী

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

উত্তাপহীন রাজশাহী

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ আজ। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) টানা ভোট গ্রহণ চলবে।

অন্য সিটি করপোরেশনগুলোর মতো রাজশাহী সিটি নির্বাচনেও অংশ নেয়নি বিএনপি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী দিলেও বরিশালের ঘটনার পর ভোট বয়কট করেছে। ফলে বিএনপিবিহীন ভোটে আওয়ামী লীগের একতরফা জয় দেখছেন অনেকে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের জয় দেখলেও আশা ছাড়তে চান না জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন।

গতকালই কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ও নির্বাচনী সরঞ্জাম। নির্বাচনী মাঠে আছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ঢাকা থেকে ভোট মনিটরিংয়ের জন্য কেন্দ্রে কেন্দ্রে থাকছে সিসি ক্যামেরা। এবার ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন ভোটার ভোট দেবেন, যার মধ্যে ৩০ হাজার নতুন ভোটার। আজ সিটি এলাকায় থাকছে সাধারণ ছুটি। ইভিএমে ভোট দেওয়া নিয়ে তরুণ ভোটারদের উৎসাহ বেশি। ১৫৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১৪৮টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) বলে চিহ্নিত করেছে কমিশন। নগরীজুড়ে থাকছে নি-িদ্র নিরাপত্তা। প্রতিটি কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকবেন একজন করে এসআইর নেতৃত্বে ২৫ জনের পুলিশি টিম। গুরুত্বপূর্ণ ১৪৮টি কেন্দ্রে থাকবেন তিনজন করে বাড়তি পুলিশ সদস্য। এ ছাড়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ দল থাকবে ১০টি। র‌্যাবের ১৯টি টিমের পাশাপাশি মোতায়েন থাকবে ১০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য। প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। নগরীতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। আরএমপি সদর দফতরে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। মহানগর পুলিশ কমিশনার আনিসুুর রহমান বলেন, প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ২৫ জন করে পুলিশ ও আনসার নিয়োজিত থাকবেন। কেন্দ্রের ৪০০ মিটারের মধ্যে বহিরাগত প্রবেশ করতে পারবে না। রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করার জন্য কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। ইভিএম মেশিনে কারিগরি সমস্যা চিহ্নিত করতে প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে কারিগরি টিমের সদস্য থাকবেন।

ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা : প্রতিটি কেন্দ্রে একটি এবং কক্ষে একটি করে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ১৫৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৫৩টিতে বসানো হচ্ছে ১ হাজার ৫৬০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। আরএমপি পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং বিজিবি স্কুল কেন্দ্রে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানো হচ্ছে না।

মেয়র পদে যারা লড়ছেন : নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন (নৌকা), জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী মুরশিদ আলম ফারুকী (হাতপাখা) ও জাকের পার্টির প্রার্থী লতিফ আনোয়ার (গোলাপ ফুল), যদিও প্রচারণার মাঝপথে নির্বাচন থেকে সরে গেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুরশিদ আলম ফারুকী।

যান চলাচল বন্ধ : সিটি এলাকায় ১৯ জুন রাত ১২টা থেকে ২২ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পুলিশ। গতকাল দিবাগত রাত ১২টা থেকে আজ রাত ১২টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সব ধরনের ভারী যানবাহন। তবে নির্বাচনে সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত দেশি-বিদেশি সাংবাদিক (পরিচয়পত্র থাকা সাপেক্ষে), নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা, কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক ও অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগে ব্যবহৃত যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।

‘প্রতিশ্রুতি পূরণে নিজেকে উৎসর্গ করব’ : প্রচারণার শুরু থেকেই গুরুত্ব দিয়েছেন কর্মসংস্থানকে। ইশতেহারেও ঘোষণা ছিল বিজয়ী হলে সবার আগে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নেবেন। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা ছিল না, তাই নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বসে দিনটি কাটিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। সেখানেই নির্বাচনের আগে জানানো প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘নগরবাসী আবার সুযোগ দিলে প্রতিশ্রুতি পূরণে নিজেকে উৎসর্গ করব।’ এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন সকালে ভোট দেবেন উপশহর স্যাটেলাইট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

‘শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে চাই’ : জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেছেন, ইভিএম নিয়ে আমাদের এখনো শঙ্কা আছে। এর পরও কেন্দ্রের নির্দেশে নির্বাচনের মাঠে আছি। শেষ পর্যন্ত মাঠে থেকে দেখতে চাই। যদি মানুষ তার পছন্দমতো ভোট দিতে পারে অবশ্যই লাঙ্গল বিজয়ী হবে। সাইফুল ইসলাম স্বপন নগরীর আটকোষী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দেবেন। রাজশাহী সিটিতে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ জন, নারী ১ লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ জন ও হিজড়া ভোটার ৬ জন। ১৫৫টি ভোট কেন্দ্রের ১৫৩টি কক্ষে ভোট গ্রহণ করা হবে।

এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে চারজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১১ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৪৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে এরই মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নির্বাচন বয়কট করেছে।

সর্বশেষ খবর