বুধবার, ২১ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

মোদি-বাইডেন বৈঠক নিয়ে কৌতূহল

পাশে পেতে হোয়াইট হাউসে লাল গালিচা সংবর্ধনা

গৌতম লাহিড়ী, নয়াদিল্লি

মোদি-বাইডেন বৈঠক নিয়ে কৌতূহল

ওয়াশিংটন যাওয়ার পথে প্রথমে নিইউয়র্কে পৌঁছানোর আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের প্রাথমিক রূপরেখা জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁর দিল্লি ছাড়ার আগে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারত-মার্কিন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নয়া দিগন্তে উন্মোচনের সঙ্গে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অবাধ, মুক্ত অন্তর্মুখী অভিন্ন নীতি নিয়ে এগোনোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই সময়ে তিনি কোনো রাষ্ট্রের নাম না করলেও, সফরের পূর্বসন্ধ্যায় ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে এক সাক্ষাৎকারে চীনের সম্পর্কে স্পষ্ট মত প্রকাশ করেছেন। এক সরকারি সূত্রের মতে, ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও মিয়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব খর্ব করার যৌথ রণনীতি ঘোষণা করবে। মোদির বিবৃতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গভীর মনোযোগের সফঙ্গ বিশ্লেষণ করছে। এর সঙ্গে শুধু সাধারণ নির্বাচন অগ্রাধিকার পাচ্ছে তা নয়; বাংলাদেশ সম্প্রতি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ‘দৃষ্টিভঙ্গি’ বলে যে দলিল প্রকাশ করেছে, তাতেও ভারত যুক্তরাষ্ট্রের মতের সঙ্গে ভিন্নমত নয় বলে মনে করে বাংলাদেশ।

নরেন্দ্র মোদির সফরের দিকে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে কেবল ভারতীয়রাই কৌতূহল ভরে অপেক্ষা করছেন তা নয়, সদ্য শেষ রিপোর্ট অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশিরাও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক মেরুকরণ অনুসারে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন বলে ওয়াশিংটন দূতাবাস পর্যবেক্ষণ করছে। বাংলাদেশ ‘নিরপেক্ষ’ পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে চলছে। মোদি-বাইডেনের বৈঠকের দিকেও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে যৌথনীতি কীভাবে বাংলাদেশেও প্রভাব ফেলতে পারে। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রায় ২৪ ঘণ্টা মোদির সফরের ওপর তীক্ষè নজর রাখছে। ভারতীয় সরকারি সূত্রের মতে, নৈশভোজের সময় প্রধানমন্ত্রী মোদি যখন অতিথিদের সঙ্গে টেবিলে টেবিলে গিয়ে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ করবেন, তখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের সঙ্গেও শুভেচ্ছা বিনিময় হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র এবার মোদির রাষ্ট্রীয় সফরকে অনেকটা গুরুত্ব দিতে চাইছে। আগামী বছরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তার আগে ভারতের মতো রাষ্ট্রকে কূটনৈতিক দিক থেকে পাশে নেওয়ার জন্য হোয়াইট হাউস সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে, লাল কার্পেটে সংবর্ধনা তো বটেই, এমনকি মোদি নিরামিষাশী বলে ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন নিজে নৈশভোজের মেনু চূড়ান্ত করছেন বলে ভারতের গণমাধ্যম জানিয়েছে। বিশ্বখ্যাত শেফ কার্টিস বিশেষ অরগানিক সবজির পদ তৈরি করছেন।

টাইমস ম্যাগাজিন তাদের প্রচ্ছদে ‘যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বন্ধু’ শিরোনামে প্রবন্ধ ছেপেছে। যেমন করেই হোক ভারতকে এবার স্ট্র্যাটেজিক অংশীদার করতে চান বাইডেন। যে মোদি এর আগের নির্বাচনে ‘আব কি বার ট্রাম্প সরকার’ স্লোগান দিয়েছিলেন সেই স্মৃতি এবার ভুলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিশ্ব রণনীতিতে ভারতকে পাশে চায়। নরেন্দ্র মোদি এই ‘চাপ’ কতটা গ্রহণ করেন তার জন্য সবার সঙ্গে বাংলাদেশও অপেক্ষা করে আছে। যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে মোদির স্পষ্ট ঘোষণা- সুসম্পর্ক তৈরি করতে হলে সীমান্তে শান্তি চাই। এ বক্তব্য হোয়াইট হাউসকে এতটাই সন্তুষ্ট করেছে যে, এবা যুদ্ধবিমানের ডবল ইঞ্জিন থেকে ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে হানা দেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রোন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে দিতে চলেছে। নিরপেক্ষ কূটনীতিদের আশঙ্কা মোদি-বাইডেনের ‘চুক্তি’র পরে দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সামরিক উত্তেজনা বাড়বে না তো?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর