বুধবার, ২১ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

লাখ কোটি টাকার দায় সরকারের ঘাড়ে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

লাখ কোটি টাকার দায় সরকারের ঘাড়ে

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দেশি-বিদেশি সংস্থা থেকে যে ঋণ নেয়, তার জন্য সার্বভৌম গ্যারান্টি দিতে হয় সরকারকে। চলতি বছরের মার্চ শেষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঋণের বিপরীতে দেওয়া সরকারের সার্বভৌম গ্যারান্টিতে দায়-এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে নতুন করে আরও ৩৬ হাজার কোটি টাকা দায়-এর বিপরীতে সার্বভৌম গ্যারান্টি ইস্যু করেছে সরকার। এ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে সরকারের ঢালাও গ্যারান্টি কমাতে বলছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

সূত্র জানান, সরকারকে ঋণে সহায়তা দেওয়ার জন্য আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছে তার মধ্যে দুর্বল ও ঝুঁকিগ্রস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর ফাইন্যানশিয়াল স্টেটমেন্ট উন্নয়ন এবং ঝুঁকি কমানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে ঋণদাতা সংস্থাটি। ওই শর্ত মেনে এসব প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে দেওয়া সার্বভৌম গ্যারান্টি কমানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা অবশ্য সার্বভৌম গ্যারান্টিকে সরকারের ‘দায়’ বলতে নারাজ। তারা একে ‘প্রচ্ছন্ন দায়’ বলে অভিহিত করেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা) ড. মোহাম্মদ আলতাফ-উল-আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা সরকারের দায় নয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দায়। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যদি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, সে ক্ষেত্রে গ্যারান্টির জন্য সরকারকে অর্থ পরিশোধ করতে হবে। তবে আমরা এ ধরনের গ্যারান্টি কমানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এখন আর চাওয়ামাত্রই কাউকে সার্বভৌম গ্যারান্টি দেওয়া হচ্ছে না।’

কার ঋণে গ্যারান্টি দিচ্ছে সরকার : অর্থ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, যেসব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার ঋণে সরকার সার্বভৌম গ্যারান্টি দিচ্ছে তার মধ্যে বাংলাদেশ বিমান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, সারকারখানা, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংক, বিএডিসি, বিসিআইসি, টিসিবি, বিটিএমসি উল্লেখযোগ্য। ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অনু বিভাগের তথ্যানুযায়ী, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে উড়োজাহাজ, উড়োজাহাজের স্পেয়ার পার্টস কিনেছে। সংস্থাটির প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার ঋণের বিপরীতে গ্যারান্টি দিয়েছে সরকার। বিপিসির ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণের গ্যারান্টি দিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে সরকারের গ্যারান্টি রয়েছে। এর মধ্যে পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ৮৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের বিপরীতে সার্বভৌম গ্যারান্টি দিয়েছে সরকার। পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৩০৫ মিলিয়ন ডলারের বিপরীতে সার্বভৌম গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) ইউরিয়া সার আমদানির জন্য সরকারি গ্যারান্টিতে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান টিসিবির ১ হাজার ৩২২ কোটি টাকার ঋণের বিপরীতে ৪১টি গ্যারান্টি দিয়েছে সরকার। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির রাইস ব্রেন ভোজ্য তেল কেনার একটি প্রস্তাবেও গ্যারান্টি দেয় সরকার। এ ছাড়া বিজেএমসি, বিসিএফসি ও বিটিএমসির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং চিনি ও পাটকলগুলোর ঋণের বিপরীতেও সরকার গ্যরান্টি দিয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অনেক প্রতিষ্ঠান দেশি-বিদেশি সংস্থা থেকে উচ্চসুদে ঋণ নিয়ে সরকারের গ্যারান্টি চাইছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে লোকসানি হওয়ায় সরকারের গ্যারান্টি ছাড়া তাদের কেউ ঋণ দিতেও চাইছে না। এসব বিবেচনায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ঢালাওভাবে আর গ্যারান্টি দেবে না সরকার। শুধু জনস্বার্থ ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়গুলো বিশেষভাবে বিবেচনা করা হবে।

 

সর্বশেষ খবর