বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা
ব্যাংক কোম্পানি বিল পাস

ঋণখেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞাসহ ঋণ প্রদানে অনিয়মের ক্ষেত্রে দায়ী ব্যাংকের পরিচালক বা নির্বাহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রেখে সংসদে পাস হয়েছে ‘ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) বিল-২০২৩’। বিলটি পাসের প্রতিবাদে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যরা সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল জাতীয় সংসদের বৈঠকে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর আগে বিলটি পাসের বিরোধিতা করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা অর্থপাচার, ব্যাংক খাতে অব্যবস্থাপনা ও আর্থিক অনিয়মের ঘটনা তুলে ধরে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। তবে সংসদে তাদের আনা জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। বিলে বলা হয়, ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞাসহ বেশকিছু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। এ জন্য ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা শনাক্ত ও চূড়ান্ত করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুটি পৃথক কমিটি গঠন করবে। সময়ে সময়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ইচ্ছাকৃত এসব ঋণখেলাপির তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাবে। এ সময় ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চাইলে ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে আপিল করতে পারবে। তবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

পাস হওয়া বিলে ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোর ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। এতে নতুন ধারা যোগ করে বলা হয়েছে, যে উদ্দেশ্যেই ব্যাংক কোনো সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করুক না কেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত হার বা পরিমাণের বেশি সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মূলধন হিসেবে বিনিয়োগ করতে পারবে না।

বিলে বলা হয়েছে, একজন পরিচালক অন্য কোনো কোম্পানিতে পরিচালক থাকতে পারবেন না। কোনো ব্যক্তি ব্যাংকের পরিচালক হলে একই সময়ে তিনি অন্য কোনো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা কোম্পানি বা এসব কোম্পানির কোনো সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালক থাকতে পারবেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিবেচনায় এমন কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান যা ওই ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা বীমা কোম্পানির ওপর নিয়ন্ত্রণ বা যৌথ নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাব বিস্তার করে- এমন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকবে না বলেও বিলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে কোনো পরিচালক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালক হতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে কিছু বলা ছিল না। এ ছাড়া বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ব্যাংকের শেয়ারের মালিক হলে তার প্রতিনিধি হিসেবে অন্য কাউকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। তবে বিলে কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একটি একক পরিবারের সদস্যের বাইরে তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বা নিয়ন্ত্রণাধীন সর্বোচ্চ দুটি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির পক্ষে প্রতিনিধি পরিচালক থাকতে পারবে। কিন্তু কোনো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির পক্ষে একজনের অধিক ব্যক্তি প্রতিনিধি পরিচালক নিযুক্ত হতে পারবে না। বিলে বলা হয়েছে, কোনো পরিচালক কমপক্ষে নিরবচ্ছিন্নভাবে তিন মাস বিদেশে অবস্থান করলে তার অনুপস্থিতির কারণে পর্ষদ চাইলে মূল পরিচালকের বিপরীতে বছরে সর্বোচ্চ একবার একজন বিকল্প পরিচালক নিযুক্ত করতে পারবে। বিলে বিকল্প পরিচালক নিয়োগ, মেয়াদকাল ও যোগ্যতা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর