বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

গণতন্ত্রের পথে সরকার বড় অন্তরায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

গণতন্ত্রের পথে সরকার বড় অন্তরায়

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এক দফা আন্দোলনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের বিকল্প কোনো পথ নেই। জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিকে ক্ষমতায় আনতে এই দাবি আদায়ে আজ সমগ্র জাতি সরকার পরিবর্তনে ঐক্যবদ্ধ। আগামীতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন হবে। এই সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না। গণতন্ত্রের পথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার সবচেয়ে বড় অন্তরায় বলে উল্লেখ করেন দলের এই নীতিনির্ধারক।

গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে হোটেল সিক্স সিজনে ‘পঞ্চদশ সংশোধনীর সাংবিধানিকতা : নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখনো সংবিধানসম্মত’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে নিজেদের বক্তব্য ও মতামত উপস্থাপন করেন অতিথিরা। তারা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে বিএনপির দাবি যৌক্তিক। কারণ বর্তমান সরকার গণতন্ত্রের পথে এখন সবচেয়ে বড় অন্তরায়। শেখ হাসিনা সরকারকে এক দফা আন্দোলনের মাধ্যমে পদত্যাগ করাতে না পারলে কোনো সমাধান হবে না।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বেগম সেলিমা রহমান, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন, সদস্যসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, শিরিন সুলতানা প্রমুখ অংশ নেন। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা হাসনাত কাইয়ুম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণফোরাম নেতা অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নুরুল হক ব্যাপারীসহ সংবিধান বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া আইআরআই, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিসহ বেশ কয়েকটি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০০৬ সালে বিরোধী দলের নেত্রী থাকা অবস্থায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী একটি বক্তব্য রেখেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, ‘সংবিধানের ধারা অব্যাহত রাখতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান কার্যকর করতে হবে।’ সংস্কারের কথা বলে তিনি সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলেছিলেন। তবে আজ কেন তত্ত্বাবধায়ক দিতে তার এত আপত্তি!

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার যতই আপত্তি তুলুক, আমরা দেশের সবগুলো রাজনৈতিক দল আজ একই দাবিতে একমত হয়েছি। আমরা সরকারের পদত্যাগ চাই। এই সংসদের বিলুপ্তির মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর চাই। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের সামনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গুরুত্ব তুলে ধরা।

বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, আজ এ বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাকশাল কায়েম করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাই আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য, আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করে তত্ত্বাবধায়কের দাবি আদায় করে নির্বাচনে যাওয়া। কারণ নির্বাচন ছাড়া জনগণের প্রতিনিধিদের ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব নয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, স্বাধীনতার মূল চেতনা ছিল গণতন্ত্র। অথচ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যারা সরকার গঠন করেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই দাবি তারাই প্রথম তোলে। এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করা হয়। অথচ ভোট চুরি করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে তারাই এখন তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আসলে এই সরকার কখনোই সহজে দাবি মেনে নেবে না। আন্দোলনের মাধ্যমেই তাদের কাছ থেকে তত্ত্বাবধায়কের দাবি আদায় করে নিতে হবে। এ ছাড়া রাজনৈতিক সমাধান কখনো আদালতের মাধ্যমে হয় না, রাজপথেই হয়। তাই রাজপথ ছাড়া আমাদের বিকল্প নেই। সবাইকে একসঙ্গে নামতে হবে। ভাগাভাগি, লাভ-লোকসান নিয়ে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। অর্জনের আগে ভাগ হয় না। তাই এসি রুমে বসে আওয়াজ তুলে কোনো লাভ নেই। আজ জনগণের দাবি এক- শেখ হাসিনার পদত্যাগ। এই দাবি নিয়ে একসঙ্গে মাঠে নামতে পারলে কেউ আমাদের রুখতে পারবে না।

সর্বশেষ খবর