শিরোনাম
শুক্রবার, ২৩ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

হঠাৎ চাঙা আওয়ামী লীগ

চার সিটি জয়ে তৃণমূলে ইতিবাচক প্রভাব

রফিকুল ইসলাম রনি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘প্রাকপ্রস্তুতি’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আওয়ামী লীগ। গাজীপুরে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় হলেও বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট সিটি ভোটে নৌকার প্রার্থীর নিরঙ্কুশ জয় হয়েছে। ভোটের আগে বরিশাল ও সিলেট নিয়ে দলের ভিতরেই এক ধরনের দ্বিধা তৈরি হয়েছিল। দলের ভিতরে ‘ঐক্য নেই’, শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও নৌকার প্রার্থীদের পক্ষে ভোটে ‘জেতা’ কঠিন হবে- এমন সব গুজব ছিল। সবকিছু উড়িয়ে দিয়ে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে নৌকার নিরঙ্কুশ জয় হওয়ায় তৃণমূলে উজ্জীবিত হয়েছেন নেতা-কর্মীরা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ চার সিটির ভোটের পরিবেশ দেখে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও         সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী উৎফুল্ল। তাদের মধ্যে চাঙাভাব দেখা দিয়েছে। বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ না নিলেও তাদের সব আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে সুষ্ঠু ভোট করতে পারায় সব মহলে এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। সিলেট ও বরিশালের নেতারা বলছেন, এ দুই সিটিতে প্রার্থী বাছাইয়ে চমক দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিলেটের প্রার্থী করা হয়েছিল যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে। আর বরিশাল সিটি নির্বাচনে প্রার্থী করা হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট বোন আমেনা বেগমের ছোট ছেলে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতকে। ভোটের রাজনীতিতে তাঁরা নতুন মুখ হলেও দলীয় নেতা-কর্মী ও জনগণ সাদরে গ্রহণ করেছেন। প্রথম দিকে প্রার্থীদের নিয়ে নানা সংশয় থাকলেও কেন্দ্রের তৎপরতা এবং কঠোর নিদের্শনায় সবাই এক কাতারে শামিল হয়েছেন। ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করেছেন। ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীনদের এক ধরনের পরীক্ষা প্রয়োজন ছিল, তাতে পাস করেছে বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

দলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ঠিকমতো কাজ করছেন না- এমন বার্তা ছিল দলীয় হাইকমান্ডের কাছে। সেই বার্তায় দলের সিনিয়র নেতাদের মাঠে নামান দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ করে বরিশাল-সিলেটকে কঠোর নজরদারিতে রেখেছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দলের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাকে ডেকে মাঠে কাজ করার নির্দেশনা দেন। বরিশালের নির্বাচনে সক্রিয় কাজ করেছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন। সিলেটেও জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলসহ অনেক নেতাই সক্রিয় ছিলেন দলীয় প্রার্থীর পক্ষে। কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে মাঠে নামানো, সংগঠনকে চাঙা করে ভোটের জয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এ সিটি নির্বাচনে যে সংশয় ছিল তা কাটিয়ে নৌকার জয়ের বার্তা সারা দেশে নেতা-কর্মীদেরও মনোবল চাঙা করেছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সিটি নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই নানা সংশয়, সন্দেহ, সংকট ছিল। বরিশাল ও সিলেটের ভোটে নতুন প্রার্থী করায় এ সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা শুরু থেকেই বলে আসছিলাম, দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেক, কিন্তু একজনকে মনোনয়ন দিতে হয়। মান-অভিমান থাকে। কিন্তু দিন শেষে কেউ নৌকার বাইরে যায় না। গাজীপুরে ‘অতি আত্মবিশ্বাস’ ও বিশ্বাসঘাকতা’র কারণে হেরেছি। কিন্তু বাকি চার সিটিতে নৌকার প্রার্থী নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে। বরিশাল ও সিলেটে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব পালনকারী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, এটা সত্য, আমাদের অনেক ‘বেগ’ পোহাতে হয়েছে। এখন যেমন জয় সহজ মনে হচ্ছে, আসলে জয়টা সহজ ছিল না। পাড়া-মহল্লায় গিয়ে কর্মিসভা করতে হয়েছে। বিভক্ত নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে হয়েছে। যখনই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন, তখনই জয়টা আমাদের জন্য সহজ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, সিলেট সিটি নির্বাচনে আমিও মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম। কিন্তু নেত্রী একজনকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমরা যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম, সবাই নেত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছি। ফলে বিজয়টা সহজ হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর