শুক্রবার, ২৩ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সম্পূর্ণ সত্যি নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সম্পূর্ণ সত্যি নয়

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সভাপতি গোলাম রহমান বলেছেন, দেশের মূল্যস্ফীতির কারণ হিসেবে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং করোনা-পরবর্তী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা বলা হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ সত্য নয়, অর্ধেক সত্য। বাজেট ঘাটতি মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের বড় অঙ্কের ঋণ গ্রহণ মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ। গতকাল ‘ঈদকে সামনে রেখে পণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি’ শীর্ষক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে বাজার পরিস্থিতি তুলে ধরে বলা হয়, কোরবানি ঈদের আগেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। লাগামহীন পণ্যমূল্যে দিশাহারা ও অসহায় হয়ে পড়েছেন ভোক্তারা। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের প্রভাব নেই বললেই চলে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম, সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইনসহ ক্যাবের জেলা কমিটির সদস্যরা। ক্যাব সভাপতি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সরকারি ব্যয়ে লাগাম টানার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইন্টারেস্ট রেট পলিসি নিয়ন্ত্রণকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে। আমাদের দেশে এমনটি করা হয়নি। এখানে গত ১১ মাসে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই টাকা কোথা থেকে দিল? টাঁকশাল থেকে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে দিয়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যে ঋণ নেওয়া হয় তার প্রভাব বাজারে এসে পাঁচ গুণ হয়। অর্থ সরবরাহ পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। অর্থাৎ, ৭০ হাজার কোটি টাকা ঋণের কারণে ৩ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা বাজারে এসেছে। এটা মূল্যস্ফীতির বড় কারণ। গোলাম রহমান বলেন, আমাদের দেশে ২০২০ সালে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ব্যাংকের ইন্টারেস্ট রেটকে নয়-ছয়ের বাঁধনে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লাগাম টানার যে হাতিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে ছিল, তা ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। যেসব পণ্য ও সেবা নিয়ে মূল্যস্ফীতি হিসাব করা হয়, তার সবগুলো সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে না। সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে ৫০ থেকে ৬০টি পণ্য। এসব পণ্য নিয়ে ইনডেক্স করলে মুদ্রাস্ফীতি আরও বেশি দৃশ্যমান হতো। টিসিবির বাজার দর অনুযায়ী গত এক বছরে অনেক পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়েছে। তার প্রতিফলন ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিক ইনডেক্সে সঠিকভাবে হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।

লিখিত বক্তব্যে ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোরবানি ঈদের আগে সয়াবিন তেল, পিঁয়াজ, রসুন, জিরাসহ সব মসলাপাতির দাম ঊর্ধ্বমুখী। সরকার নির্ধারিত দামে তেল, চিনি কিছুই বিক্রি হচ্ছে না। তিন মাসের ব্যবধানে পিঁয়াজের দাম প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর এখন কিছুটা কমেছে। এক বছরের ব্যবধানে দেশি রসুনের দাম বেড়েছে ৬৩ শতাংশের বেশি। জিরার দাম বেড়েছে ৫৬ শতাংশের বেশি। দেশের বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৮০০-৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ভারতের কলকাতায় বিক্রি হচ্ছে ২৬০ রুপিতে যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৪৫ টাকা।

বাজার নিয়ন্ত্রণে পাইকারি ও খুচরা বাজারে পণ্যের বিক্রয়মূল্য দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করা, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও মজুদকারীদের আইনের আওতায় আনা, গরুর মাংস সহজলভ্য করতে খামারিদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া, সড়কে চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন হয়রানি বন্ধ করা, আমদানিকৃত পচনশীল পণ্য বন্দর  থেকে দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা করা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক ছাড় দিয়ে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলার সুযোগ দেওয়া এবং পণ্য আমদানির পর তা নির্দিষ্ট দামে বাজারে বিক্রির ব্যবস্থাসহ ১২টি সুপারিশ করেছে ক্যাব।

সর্বশেষ খবর