রবিবার, ২৫ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা
তারুণ্যের সমাবেশে ফখরুল

তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া ভোটে যাবে না বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া ভোটে যাবে না বিএনপি

বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু (বেলসপার্ক) উদ্যানে বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশে আগতরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার আমরা মানি না। আমরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, শেখ হাসিনার অধীনে নয়। এর আগে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। ‘দফা এক দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’।” গতকাল বিকালে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু (বেলসপার্ক) উদ্যানে বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের বিভাগীয় তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে সমাবেশমঞ্চে বেগম জিয়া এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত আসন ফাঁকা রাখা হয়। প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। সমাবেশে বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন এবং মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকসহ যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এতে অংশগ্রহণ করেন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে কিছুটা ছন্দপতন হলেও বৃষ্টি উপেক্ষা করেই সমাবেশ পরিচালিত হয়। এর আগে বেলা ১২টার পর থেকেই বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন নেতা-কর্র্মীরা। বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশ উপলক্ষে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি রোধে সমাবেশস্থলের আশপাশে এবং নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোতায়েন ছিল বিপুলসংখ্যক পুলিশ। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ হলো শেখ হাসিনাকে পদত্যাগে বাধ্য করিয়ে এই সরকারের বিদায় করার সমাবেশ। এই দেশের মালিক জনগণ। বিগত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে জনগণ কোনো দিন ভোট দিতে পারবে না। এই সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। জনগণ ভোট দিতে পারলে তারা (আওয়ামী লীগ) ১০টি আসনও পাবে না। বিদেশিরা বলেছে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হলে কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ র‌্যাব ব্যবহার করে বিরোধী নেতা-কর্মীদের গুম-খুন করানোয় র‌্যাব বিতর্কিত হয়েছে। আমেরিকা র‌্যাবের ওপর স্যাংশন দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য সুখকর নয়। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। আমাদের ৪০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। গুম-খুন করে অনেক মায়ের কোল খালি করেছে। এই মা-বোনদের আর কাঁদতে দেওয়া যাবে না। তরুণদের রুখে দাঁড়াতে হবে।’ তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জোয়ান’ গর্জে ওঠো, জেগে ওঠো। নেত্রীকে মুক্ত করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। তিনি বলেন, অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী সুইজারল্যান্ড সফরের পর সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা উধাও হয়ে গেছে। তারা শুধু ভোট চোরই নয়, পকেটমারও। সরকারের একমাত্র লক্ষ্য চুরি-ডাকাতি করে বিদেশে অর্থ পাচার করা। এ সময় দেশব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। তিনি আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে তারা (আওয়ামী লীগ) ১৭৩ দিন হরতাল করেছে। বাসে গানপাউডার দিয়ে ১১ জনকে পুড়িয়ে মেরেছে। দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। এরপর বিতর্কহীন চারটি নির্বাচনে একবার বিএনপি, একবার আওয়ামী লীগ- এভাবে ক্ষমতায় এসেছে। ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটি পাওয়ার পর তাদের মাথায় শয়তানি বুদ্ধি এসে গেল। তারা সংবিধান পরিবর্তন করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে দেশে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। এই সরকার বৈধ নয়, অবৈধ। এই সরকারের অধীনে কোনো দিন সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সরকারের লোকদের দুর্নীতির সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আগে যার টিনের ঘর ছিল, এখন তার ১০ তলা বিল্ডিং। আগে যিনি সাইকেল চালাতেন, তার এখন অনেক দামি গাড়ি। বরিশালের সিটি নির্বাচন নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বরিশালের সিটি নির্বাচন হয়ে গেল, আবার তারা ইভিএমকে ব্যবহার করল। এখানে একজন আলেম, শ্রদ্ধেয় মানুষ চরমোনাই পীর সাহেবকে পর্যন্ত তারা আঘাত করতে দ্বিধাবোধ করল না।

যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, ৪ কোটি ৭০ লাখ তরুণ ভোটার ১৪ বছর ধরে ভোট দিতে পারেনি। তরুণ সমাজ ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হত্যাকারী দল। তিনি স্লোগানের স্বরে বলেন, ‘চোর চোর বিশ্ব চোর, শেখ হাসিনা ভোট চোর’। এই চোরকে ক্ষমতায় রাখা যায় না। তরুণদের রাজপথে থেকে ফয়সালা করতে হবে। তরুণদের আন্দোলন বৃথা যায় না। বিশেষ বক্তা হিসেবে স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি এস এম জিলানী বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। সভাপতির বক্তব্যে ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, যত দিন ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা না হবে, তত দিন লড়াই চালিয়ে যাবে তরুণ সমাজ। তরুণ ভোটারদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেই ঘরে ফিরবে ছাত্রদল।

সর্বশেষ খবর